আবুজার গিফারী

খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ উত্তরাধিকার এবং প্রাসঙ্গিক ভাবনা 

আবুজার গিফারী:

মুসলিম ও হিন্দু উত্তরাধিকারের পাশাপাশি খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ উত্তরাধিকার সম্পর্কিত জ্ঞান অতীব জরুরী। প্রচলিত আইনে বৌদ্ধ উত্তরাধিকার সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকলেও খ্রিস্টান উত্তরাধিকার সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। কার্যত খ্রিস্টান উত্তরাধিকার নিয়ন্ত্রিত হয় উত্তরাধিকার আইন, ১৯২৫ অনুসারে। অর্থাৎ বাংলাদেশে বসবাসরত খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীদের উত্তরাধিকার সংশ্লিষ্ট বিধিনিষেধ নিয়ন্ত্রিত হবে The Succession Act,1925 এর অধীনে। ১৯২৫ সালের ভারতীয় উত্তরাধিকার আইন যা দেশ স্বাধীন হবার পর রাষ্ট্রপতির ৪৮/৭২ নং আদেশ দ্বারা ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ হতে বাংলাদেশে বলবৎ হয়েছে। অত্র আইনের ২৪-২৮ এবং ৩২-৪৯ ধারাসমূহে খ্রিস্টান উত্তরাধিকারীত্বের বিধান ও বন্টনের নিয়ম আলোচিত হয়েছে। বস্তুত খ্রিস্টানরা ২ শ্রেণীতে বিভক্ত। যথা: ক্যাথলিক ও প্রটেস্ট্যান্ট।  Succession Act এর উপরোক্ত ধারাসমূহ উভয় মতের খ্রিস্টানদের জন্য প্রযোজ্য। কোন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীর মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি কিভাবে বন্টন হবে তা The Succussion Act,1925 এর ২৭ ধারাতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। অত্র ধারাতে উল্লেখ আছে, (ক) উত্তরাধিকারী হিসেবে নারী ও পুরুষ সমান মর্যাদার অধিকারী। কোন মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারী হওয়ার ক্ষেত্রে ছেলে এবং মেয়ে একই মর্যাদার অধিকারী হবে। অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে তারা সমান অংশ লাভ করবে। (খ) অর্ধ রক্ত ও পূর্ণ রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়দের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকবে না। অর্থাৎ কোন মৃত ব্যক্তির যদি একজন আপন ভাই এবং একজন সৎ ভাই থাকে তবে সম্পত্তি বন্টনের ক্ষেত্রে দুই ভাই সমান অংশের অধিকারী হবে। (গ) নিকটবর্তী আত্মীয় দূরবর্তী আত্মীয়কে বঞ্চিত করবে। অর্থাৎ রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়দের মধ্যে যে ব্যক্তি সম্পর্কের দিক থেকে মৃত ব্যক্তির কাছাকাছি অবস্থান করে, সে অপেক্ষাকৃত দূরবর্তী আত্মীকে বঞ্চিত করবে। যেমন: মৃত ব্যক্তির আপন ভাই উত্তরাধিকারের প্রশ্নে তার চাচাতো, মামাতো, খালাতো, ফুফাতো ভাইকে বঞ্চিত করে। (ঘ) মাতৃগর্ভস্থ সন্তানকে উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। যেমন: কোন খ্রিস্টান ব্যক্তির মৃত্যুর সময় যদি তার স্ত্রীর গর্ভে কোন সন্তান থাকে এবং পরবর্তীকালে সে সন্তান জীবিত অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়, তাহলে সে তার পিতার সম্পত্তিতে একজন উত্তরাধিকারী বলে বিবেচিত হবে।

কোন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে কতিপয় ব্যক্তি মৃতের সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারী হয়ে থাকে। এদিক দিয়ে প্রথমত সরাসরি বংশধর, দ্বিতীয়ত জ্ঞাতি শ্রেণীরা উত্তরাধিকারী হয়। সাধারণত সরাসরি বংশধর উপস্থিত থাকলে জ্ঞাতি শ্রেণী উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচিত হয় না। অর্থাৎ সরাসরি বংশধরদের অনুপস্থিতিতে জ্ঞাতি শ্রেণী উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচিত হবে। সরাসরি বংশধর বলতে সাধারণত মৃতের ছেলে বা মেয়েকে অন্তর্ভুক্ত করে। অনুরূপভাবে জ্ঞাতি সদস্যদের মধ্যে রয়েছে চাচা, চাচী, চাচার ছেলে ও মেয়ে, খালা, খালাতো ভাই, মামাতো ভাই, ফুফু এবং এই ধারাবাহিকতায় অন্যান্যরা। উত্তরাধিকার আইন, ১৯২৫ এর ৩৫ ধারানুসারে, স্ত্রীর মৃত্যুর পর স্বামী এবং স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী পরস্পরের সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারী হবে। অন্যদিকে অত্র আইনের ৩৩ ধারানুযায়ী একজন স্ত্রী নিম্নলিখিতভাবে স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে। যেমন: (১) কোন সন্তান সন্তুতির উপস্থিতিতে স্ত্রী থাকলে তিনি (স্ত্রী) মোট সম্পত্তির ১/৩ অংশ পাবেন এবং বাকী ২/৩ অংশ মৃতের সন্তানেরা সমানভাবে পাবেন। (২) সরাসরি বংশধরের অবর্তমানে যদি জ্ঞাতি সম্পর্কীয় আত্মীয়রা উপস্থিত থাকে তাহলে স্ত্রী মোট সম্পত্তির ১/২ অংশ পাবেন। অন্যদিকে অবশিষ্ট ১/২ অংশ সম্পত্তি জ্ঞাতি আত্মীয়রা সমানভাবে পাবেন। যেমন: ওয়ার্নার তার স্ত্রী ও চাচাতো বোন রেখে মারা গেলেন। ওয়ার্নারের ৬ বিঘা জমি ছিল। এক্ষেত্রে ওয়ার্নারের সম্পত্তির ১/২ অংশ তথা ৩ বিঘা সম্পত্তি স্ত্রী এবং ১/২ অংশ তথা বাকী ৩ বিঘা সম্পত্তি চাচাতো বোন পাবেন। উল্লেখ্য যে, মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান, পিতা-মাতা, ভাই-বোন জীবিত থাকলে জ্ঞাতি শ্রেণী উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচিত হবে না তথা উত্তরাধিকারী থেকে বঞ্চিত হবে। (৩) সরাসরি বংশধর ও জ্ঞাতি সম্পর্কীয় আত্মীয়দের অবর্তমানে স্ত্রী থাকলে স্ত্রী সমুদয় সম্পত্তি পাবেন।
সন্তানেরা মৃত পিতা বা মাতার সম্পত্তিতে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারী হয়। (১) পিতা মারা যাওয়ার পর মাতা জীবিত থাকলে অথবা মাতা মারা যাওয়ার পর পিতা জীবিত থাকলে সন্তানেরা মৃত পিতা বা মাতার সম্পত্তির ২/৩ অংশ পাবে। বাকী ১/৩ অংশ ক্ষেত্রবিশেষ পিতা মাতা (স্বামী/স্ত্রী) পাবেন। যেমন: মার্টিনা মারা যাওয়ার সময় রেখে গেলেন দুই সন্তান ডেভিড ও মেরী এবং স্বামী পিটারকে। মার্টিনার মোট সম্পত্তি ছিল ১২ বিঘা। এক্ষেত্রে মার্টিনার দুই ছেলেমেয়ে মোট সম্পত্তির ২/৩ ভাগ অর্থাৎ ১২ বিঘার মধ্যে ৮ বিঘা পাবে। আর স্বামী পিটার পাবেন মোট সম্পত্তির ১/৩ ভাগ অর্থাৎ ৪ বিঘা। এখানে স্ত্রী মারা না গিয়ে যদি স্বামী পিটার মারা যেতো, তাহলে স্ত্রী মার্টিনা মোট সম্পত্তির ১/৩ অংশ পেতো। কেননা এ আইনানুযায়ী সন্তানের পিতা বা মাতা (স্বামী/স্ত্রী) একে অন্যের প্রতিচ্ছবি। (২) মৃত ব্যক্তির সন্তান (পুত্র বা কন্যা) সবসময় তার নানা, নানি, দাদা, দাদি, চাচা, ফুফুদের বঞ্চিত করে। অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির সন্তান থাকলে মৃতের পিতা-মাতা (দাদা/দাদী) বা অন্যান্য রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়রা কোন সম্পত্তি পাবে না। যেমন: আলবার্ট ও সায়ন্তিকার দুই ছেলে এবং এক মেয়ে আছে। আলবার্টের পিতা আব্রাহাম এখনও জীবিত। এখন যদি আলবার্ট মৃত্যুবরণ করে তাহলে তার সম্পত্তি থেকে তার পিতা আব্রাহাম কোন অংশ পাবে না। এখানে আলবার্টের স্ত্রী সায়ন্তিকা পাবেন ১/৩ অংশ এবং সন্তানেরা ২/৩ অংশ সম্পত্তি পাবে। একইভাবে যদি আলবার্টের মাতা, ভাই বা বোন থাকতো তাহলেও তারা কোন সম্পত্তি পেতো না। (৩) মৃত ব্যক্তির ছেলে এবং মেয়ে সবাই সমান হারে সম্পত্তি পাবে। কোন প্রকার বৈষম্য বা ত্রুটির স্থান এ আইনে নেই। যেমন: এডিসন ৪ ছেলে এবং ১ মেয়ে রেখে মারা গেলেন। এখানে এডিসনের সম্পত্তি থেকে তারা সমান অংশ পাবে। অর্থাৎ সবাই ১/৫ অংশ করে সম্পত্তি পাবে। (৪) কোন মৃত ব্যক্তির পুত্র ও কন্যার সঙ্গে যদি অন্য মৃত সন্তানের কোন পুত্র বা কন্যা থাকে, তাহলে তারা তাদের মৃত পিতা বা মাতার স্থলাভিষিক্ত হবে। অর্থাৎ মৃত সন্তানের পুত্র-কন্যারা সম্পত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে তারা তাদের পূর্বে মৃত পিতা বা মাতার অংশ পাবে। এ পদ্ধতিকে Doctrine of Representation বা প্রতিনিধিত্ব নীতি বলা হয়।
পিতা কতিপয় ক্ষেত্রে মৃতের রেখে যাওয়া সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়ে থাকে। যেমন: (১) মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান না থাকলে তখনই কেবল পিতা সন্তানের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়। (২) মৃতের স্ত্রীর সাথে পিতা উপস্থিত থাকলে পিতা পুত্রের সম্পত্তির ১/৩ অংশের উত্তরাধিকারী হয়। এক্ষেত্রে স্ত্রী স্বামীর অবশিষ্ট সম্পত্তির ২/৩ অংশ পাবেন। যেমন: স্মিথ তার স্ত্রী ও পিতা রেখে মারা গেলেন। স্মিথের জমির পরিমাণ ১২ বিঘা। এক্ষেত্রে স্মিথের স্ত্রী মোট সম্পত্তির ২/৩ অংশ তথা ৮ বিঘা পাবেন। অন্যদিকে পিতা ১/৩ অংশ তথা ৪ বিঘা পাবেন। মাতা কয়েকটি ক্ষেত্রে মৃতের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন। যেমন: (১) মৃতের পিতা ও সন্তানের অবর্তমানে মাতা সম্পত্তি পাবেন। অর্থাৎ মৃতের পিতা বা সন্তান সন্তুতি বেঁচে থাকলে মাতা বঞ্চিত হবে। (২) মৃত ব্যক্তির মাতার সাথে মৃতের ভাই ও বোন থাকলে তারা সমান সম্পত্তি লাভ করবেন। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি তার মা, ভাই ও বোন রেখে মারা যায়, তাহলে মাতা, ভাই ও বোন ঐ ব্যক্তির সম্পত্তি থেকে সমান অংশ মাথাপিছু হারে লাভ করবেন। (৩) কোন মৃত ব্যক্তির যদি স্ত্রী, সন্তান বা কোন ভাই বোন না থাকে, তাহলে মাতা সম্পূর্ণ সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবেন। ভাই-বোন এবং ভাই-বোনের সন্তানেরা কতিপয় ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচিত হয়। যেমন: (১) ভাই-বোন বা ভাই-বোনের পুত্র-কন্যাদের উত্তরাধিকার কেবল তখনই সৃষ্টি হবে, যখন মৃত ব্যক্তির কোন পুত্র, পুত্রের পুত্র, পুত্রের পুত্রের পুত্র এবং পিতা জীবিত না থাকে। (২) বৈমাত্রেয় ভাই আপন ভাইদের মতোই উত্তরাধিকারী হবে তথা তারা সম্পত্তিতে সমান অংশ লাভ করবে। (৩) মৃত ব্যক্তির ভাই-বোন বা তাদের পুত্র-কন্যাদের সাথে স্বামী বা স্ত্রী থাকলে স্বামী বা স্ত্রী সম্পত্তির ২/৩ অংশ পাবে এবং অন্যরা বাকি ১/৩ অংশ সম্পত্তি সমান হারে পাবে। যেমন: জলি তার স্বামী ও ভাই রেখে মারা গেলেন। জলির জমি ছিল ৬ বিঘা। এক্ষেত্রে জলির স্বামী পাবে ২/৩ অংশ তথা ৪ বিঘা এবং জলির ভাই পাবে ১/৩ তথা ২ বিঘা। (৪) মৃত ব্যক্তির কোন ভাই-বোন যদি জীবিত না থাকে এবং কেবল ভাই-বোনের পুত্র-কন্যারা যদি জীবিত থাকে, তবে সেই সম্পত্তির বন্টনের ক্ষেত্রে মৃতের ভাই-বোনের পুত্র-কন্যারা তাদের নিজ নিজ পিতা-মাতার স্থলবর্তী হয়ে তাদের প্রতিনিধিত্ব করবেন। অর্থাৎ তারা তাদের পিতা বা মাতার অংশ পাবেন। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যে, রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়দের মধ্যে যে সকল আত্মীয়, সম্পর্কের ধাপ অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির কাছাকাছি অবস্থান করবে সে অপেক্ষাকৃত দূরবর্তী আত্মীয়কে বঞ্চিত করবে। তবে একই ধাপের একাধিক আত্মীয় থাকলে তারা সবাই মাথাপিছু হারে সমান অংশ পাবে। কার্যত খ্রিস্টান আইনে দত্তকের কোন বিধান নেই। তাই দত্তকী সন্তান দত্তকী পিতা-মাতার সম্পত্তিতে কোনরূপ অধিকার দাবি করতে পারে না। The Succession Act,1925 এর ৩৪ ধারানুসারে যদি কোন মৃতের বিধবা স্ত্রী বা ক্ষেত্রমতে স্বামী বা সরাসরি বংশধর বা জ্ঞাতি শ্রেণীর কেউ না থাকে, তাহলে মৃতের সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে অর্পিত হবে। উল্লেখ্য যে, অত্র আইন অনুযায়ী উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পত্তি তখন বন্টন হবে যখন উক্ত সম্পত্তি উইল মুক্ত হবে। অর্থাৎ মৃত ব্যক্তি কর্তৃক যদি সম্পত্তি উইল করে যাওয়া হয় তাহলে উক্ত রেখে যাওয়া সম্পত্তি উইলকারী বরাবর অর্পিত হবে, উত্তরাধিকারী বরাবর নয়। অন্যদিকে এ আইনে বিধবা স্ত্রী বা ক্ষেত্রমতে স্বামীকে উত্তরাধিকারী হিসেবে সম্পত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে বসবাসকারী বৌদ্ধগণ উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে হিন্দু দায়ভাগ আইন দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। যদিও ১৯৫৬ সালে ভারতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে বৌদ্ধদের উত্তরাধিকারের বিষয়টি ভারতীয় উত্তরাধিকার আইন এবং হিন্দু দায়ভাগ আইনের সমন্বয়ে স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে অদ্যবধি তদ্রূপ কোন সংশোধনী গৃহীত হয়নি। ফলশ্রুতিতে উত্তরাধিকারের বিষয়ে এ দেশের বৌদ্ধগণ পুরোপুরিভাবে হিন্দু দায়ভাগ আইন দ্বারা শাসিত হয়। অর্থাৎ উক্ত আলোচনা থেকে এটা বলা যায়, বাংলাদেশে বসবাসরত বৌদ্ধরা সরাসরি হিন্দু দায়ভাগ আইন দ্বারা এবং ভারতীয় বৌদ্ধরা কিছুটা সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে হিন্দু দায়ভাগ আইন দ্বারা শাসিত হয়। তবে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ব্রহ্মদেশের (মিয়ানমার) বৌদ্ধরা উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে ব্রহ্মদেশীয় বৌদ্ধ আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। অর্থাৎ তাঁরা তাদের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন তৈরী করেছে। একইসাথে বাংলাদেশের মারুয়া বৌদ্ধগণ মারুয়া বৌদ্ধ আইন দ্বারা উত্তরাধিকার প্রশ্ন সুরাহা করে থাকে। অর্থাৎ সংক্ষেপে বলা যায়, বাংলাদেশের মারুয়া বৌদ্ধরা ছাড়া বাংলাদেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উত্তরাধিকার দায়ভাগ হিন্দু আইনে আওতাভুক্ত এবং ব্রহ্মদেশীয় বৌদ্ধগণ ও বাংলার মারুয়া বৌদ্ধগণ যথাক্রমে ব্রহ্মদেশীয় বৌদ্ধ আইন ও মারুয়া বৌদ্ধ আইন দ্বারা পরিচালিত। বস্তুত বৌদ্ধ ধর্মে উত্তরাধিকার সম্পত্তি বা সংসার জীবনের সহায় সম্পত্তি বন্টনের বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ নেই, যেমনটা কুরআনে রয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যে, গৌতম বুদ্ধ বৌদ্ধ ধর্মের স্বপ্নদ্রষ্টা। তিনি শাক্য রাজবংশের এক ক্ষত্রিয়-ব্রাহ্মণ পরিবারে রাজপুত্র হয়ে জন্মগ্রহণ করেন। অর্থাৎ তিঁনি একটি সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিঁনি ধর্মান্তরিত হয়ে স্বতন্ত্র ধর্ম সৃষ্টি করেন যা বৌদ্ধ ধর্ম নামে পরিচিত। যেহেতু বৌদ্ধ ধর্মের সুত্রপাত ঘটেছে হিন্দু ধর্ম থেকে সেহেতু বৌদ্ধ ধর্মে উত্তরাধিকার সংশ্লিষ্ট বিধান না থাকায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠী হিন্দু আইন অনুযায়ী তাদের উত্তরাধিকার নির্ধারণ করেন। তবে বর্তমানে কতিপয় বৌদ্ধ ভিক্ষু উত্তরাধিকার সংশ্লিষ্ট কিছু নীতিমালা তৈরী করেছে যেটা এখনো বৌদ্ধ সম্প্রদায় বা যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বৌদ্ধ উত্তরাধিকার সংশ্লিষ্ট নীতিমালা গৃহীত হলে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠী তারা তাদের উত্তরাধিকার সংশ্লিষ্ট স্বকীয়তা ফিরে পাবে। তবে অচিরেই উত্তরাধিকার সংশ্লিষ্ট এরূপ একটি বিধান আইনে রূপ নিবে বলে অনেক আইনজ্ঞরা মনে করছেন।

শিক্ষার্থী: আইন বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া। 

abujar.gifary.5614@gmail.com