শত সীমাবদ্ধতায়ও প্রতিটি মানুষের শেষ ভরসাস্থল আদালত!

শত সীমাবদ্ধতায়ও প্রতিটি মানুষের শেষ ভরসাস্থল আদালত!

খন্দকার মাজেদুল ইসলাম সম্রাট:  ন্যায়বিচার পাওয়া প্রত্যেক নাগরিকেরই সাংবিধানিক অধিকার। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ছাড়া গণতন্ত্র, সুশাসন, অর্থনৈতিক, আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়ন কোনভাবেই সম্ভব নয়। আদালত ব্যক্তি, রাষ্ট্র, সরকার ও প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহিতার আওতায় এনে ন্যায়বিচার ও জনগণের আইনের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব সর্বোচ্চ আদালত অর্থাৎ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও অধস্তন আদালতের। তবে অধস্তন আদালতই দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রধান সুতিকাগার, জনগণের প্রাথমিক আশ্রয়দাতা। ন্যায়বিচার করেন একজন বিচারক। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় একজন বিচারকের কি কি গুন থাকবে এ বিষয়ে গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস বলেন, “চারটি জিনিস বিচারকের নিজস্ব থাকতে হবে : বিনয় সহকারে শোনা, জ্ঞানীর মতো উত্তর দেয়া, সংযত হয়ে বিবেচনা করা, কোনোদিকে পক্ষপাতিত্ব না করে বিচার করা।”

বিচারকদের উদ্দেশ্যে পবিত্র কোরআনের সূরা আরাফ এর ২৯ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, বল, আমার প্রভু আমাকে ন্যায়বিচার করার নির্দেশ দিয়েছেন”

ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আদালতের বর্তমানে শত সীমাবদ্ধতা বিদ্যমান।  এই সীমাবদ্ধতার কারণে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা আদালতের জন্য যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। সবকিছু মিলেই ‘ন্যায়বিচার’ এখানে সহজলভ্য তো নয়ই, বরং সুদূর পরাহত। তারপরও প্রতিটি নাগরিকের পরম চাওয়া হচ্ছে, সকলের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। শত সীমাবদ্ধ সত্ত্বেও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে প্রতিটি মানুষের শেষ ভরসাস্থল আদালত, এ বিষয়ে সম্ভবত কোন মতপার্থক্যের অবকাশ নেই। পরিপূর্ণ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হলে প্রথমেই আদালতের সীমাবদ্ধতা ও সকল সমস্যা দূর করতে হবে। তাহলেই প্রতিষ্ঠিত হবে প্রকৃত ন্যায়বিচারালয়। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা গুলো নিন্মরূপ:

বিচার বিভাগ চলছে শত বছরের পুরোনো আইনে

বাংলাদেশের প্রচলিত প্রায় সকল আইন ও বিচার ব্যবস্হা হলো মূলত ঔপনিবেশিক আমলের দান, যা সৃষ্টি হয়েছে  কমন ল’ এর বিকাশের মাধ্যমে।  প্রায় ২০০ বছর পুরো ভারত উপমহাদেশ শাসন করেছে বৃটেন। ঔপনিবেশিক আমলের দান হিসাবে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের বিচারব্যবস্থা ও আইন পুরোপুরি গড়ে উঠেছে কমন ল’ এর উপর নির্ভর করে। বৃটেনের বিচারিক সিদ্ধান্ত ও ঔপনিবেশিক আইন সবই ভারত উপমহাদেশে প্রয়োগ করা হয়েছে। যেমন- ফৌজদারি কার্যবিধি-১৮৯৮, দন্ডবিধি-১৮৬০, পুলিশ আইন-১৮৬১, দেওয়ানী কার্যবিধি- ১৯০৮, তামাদি আইন-১৯০৮, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন-১৮৭৭, সাক্ষ্য আইন- ১৮৭২, পুলিশ রেগুলেশনস অফ বেঙ্গল -১৯৪৩, চুক্তি আইন-১৮৭২ সহ বাংলাদেশে প্রচলিত মৌলিক ও প্রধান আইনগুলো পুরোপুরি কমন ল’ এর উপর প্রতিষ্ঠিত।

শত বছরের বেশি পুরনো মৌলিক আইনগুলো সামান্য সংশোধন ছাড়া এখনো পুরোপুরি অবিকৃত অবস্হায় বহাল রয়েছে।  বাংলাদেশ বিভিন্ন প্রয়োজনে কিছু বিশেষ আইন বা নতুন আইন প্রণয়ন করেছে একথা যেমন সত্য, তেমনি শত বছর পূর্বের মৌলিক আইনগুলো পুরোপুরি আজও বহাল আছে। তাছাড়াও নতুন আইন ও  বিশেষ আইনগুলো চলছে মূলত পুরোনো মৌলিক আইনের উপর নির্ভর করেই।

যদিও সময়ের প্রয়োজনে ও বিচার ব্যবস্হার আধুনিকায়নের জন্য এবং জনমতের চাহিদার ভিত্তিতে স্বয়ং বৃটেন ২৫০ বছর পূর্বের করা আইনগুলো ব্যাপক পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংশোধন করে যুগোপযোগী নতুন আইন প্রণয়ন করেছেন। পরিবর্তন হয়েছে বিচারব্যবস্থায় ও আইনসমূহে কিন্তু আমরা এখনো মান্ধাতার আমলের আইনগুলো ব্যবহার করে চলেছি। ভারতও সময়ের প্রয়োজনে মৌলিক আইনগুলোর বেশ কিছু মৌলিক পরিবর্তন করেছে। পাকিস্তানে দেওয়ানী কার্যবিধি সংশোধন করে অনেকটা যুগোপযোগী করেছে।

অথচ সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে বাংলাদেশের জনসংখ্যা, সমাজ, অর্থনীতি ও রাষ্ট্রব্যবস্হার ব্যাপক পরিবর্তন হলেও আমাদের বিচার বিভাগ বিচার করছে মান্ধাতার আমলের পুরোনো আইন দিয়েই। বিচার পরিচালনা করতে হচ্ছে পুরোনো আইনের উপর ভিত্তি করে, যা বর্তমান আধুনিক বিচার ব্যবস্হার প্রয়োজন মেটাতে পুরোপুরি ব্যর্থ বললে সম্ভবত ভুল হবে না।

এ ক্ষেত্রে আশার আলো দেখাচ্ছে, উচ্চ আদালতের নজির ও নতুন নতুন সিদ্ধান্ত। এই নজির ও সিদ্ধান্ত প্রচলিত আইনকে অনেকটা যুগোপযোগী করেছে। ফলে এর উপর ভিত্তি করে বর্তমান বিচার ব্যবস্হা চলমান রয়েছে। যখন কমন ল’ এর উৎপত্তি বৃটেনে এবং বৃটেনই আইনগুলোর ব্যাপক সংশোধন করেছে সময়ের প্রয়োজনে, বাংলাদেশের বহু পূর্বেই মৌলিক  আইনগুলো প্রয়োজনে ও চাহিদার  সাথে সাথে যুগোপযোগী করা উচিৎ ছিলো।

কিন্তু এই মান্ধাতার আমলের আইন দিয়েই আমাদের উচ্চ আদালত থেকে বিচারিক (অধস্তন) আদালত পর্যন্ত সকল আদালতকে বিচার পরিচালনা করতে হচ্ছে। নতুন নতুন অপরাধের বিচার পরিচালনার ক্ষেত্রে সৃষ্টি হচ্ছে ব্যাপক জটিলতা। এত জটিলতা ও আইনের আধুনিকায়নের যথেষ্ট অভাব থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের উচ্চ আদালত থেকে বিচারিক আদালতের বিচারকগণ তাদের সর্বোচ্চ মেধা, যোগ্যতা, কর্মদক্ষতা, সততা ও নিষ্ঠার সাথে প্রতিটি নাগরিকের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার মহান কাজটি করে যাচ্ছে। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বিচারকগন শত সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও  প্রশংসনীয়  কাজ  করে যাচ্ছে।

অপ্রতুল বিচারক ও সীমিত অবকাঠামো

সীমিত অবকাঠামো ও সুযোগ সুবিধা এবং অপ্রতুল বিচারক নিয়ে আমাদের বিচার বিভাগ অত্যন্ত দুর্বহ দায়িত্বপালন করে রাষ্ট্র ও সমাজকে সচল রেখেছেন। একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রতি এক লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে মাত্র ১ জন বিচারক রয়েছেন। নানা সীমাবদ্ধতা ও সুযোগ-সুবিধার অভাবের মধ্যেও বিচার বিভাগ তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চ সচেষ্ট রয়েছে। বিশেষ করে নিন্ম আদালতের বিচারকদের চলাচল করতে হয় গাদাগাদি করে একই গাড়িতে। অনেক সময় গনপরিবহনে যাতায়াত করতে হয় বিচারকদের, নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও বাসস্হান সুবিধা।  কিন্তু প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা গাড়ি, বাড়িসহ সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করে থাকেন।

এজলাস সংকট

দেশের প্রতিটি উপজেলার জন্য একটি করে আদি এখতিয়ার সম্পন্ন দেওয়ানি আদালত ও যুগ্ম জেলা জজ এর আদালত এবং ফৌজদারি মামলা বিচারের জন্য একাধিক দায়রা আদালত এবং জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট থাকলেও জেলা জজ আদালতসমূহে এবং চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে  সমসংখ্যক এজলাস কক্ষ নেই। যার ফলে প্রায় সব জাজশিপেই একাধিক বিচারককে একই এজলাস ও খাস কামরা ভাগাভাগি করে ব্যবহার করতে হয়।

একই এজলাস একাধিক বিচারক কর্তৃক ভাগাভাগি করে ব্যবহার করার ফলে একজন বিচারকের একটি কর্মদিনের মোট কর্মঘণ্টা কমে যাচ্ছে। যার ফলে সংশ্লিষ্ট আদালতে বিচারাধীন মামলার শুনানীতে যে সময় ব্যয় করা প্রয়োজন, তা ব্যয় করা সম্ভবপর হয় না। অথচ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগের চেয়ে উত্তম কোনো প্রতিষ্ঠান আজ অবধি আবিষ্কার হয়নি বা হবেও না। কোন কোন জেলায় এ সমস্যা সমাধান হলেও দ্রুত দেশের সব জেলায় এ সমস্যা সমাধান করা উচিৎ।

বিচারের দীর্ঘসূত্রতা

বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে “ন্যায়বিচারের অধিকার” নিজেই এখন ‘অবিচারের শিকার’ হয়ে গেছে। ফলে বিচারপ্রার্থী ও তার পরিবারের সদস্যদের জন্য ন্যায়বিচার পাওয়া এক অসহনীয় পরিস্থিতির তৈরী করেছে। অথচ বৃটেনের আইনে প্রতিষ্ঠিত নীতি হলো,  “Justice delayed is Justice denied”. যার বাংলা অর্থ হলো “বিচার বিলম্বিত হলে ন্যায়বিচার অস্বীকার করা হয়।”

বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৫(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “ফৌজদারী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তি আইনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালত বা ট্রাইব্যুনালে দ্রুত ও প্রকাশ্য বিচার লাভের অধিকারী হইবেন। “

বাংলাদেশের ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ৩৩৯ গ (১) ধারায় বলা হয়েছে যে, “কোন ম্যাজিস্ট্রেট মামলা প্রাপ্তীর তারিখ থেকে ১৮০ দিনের মধ্যে অবশ্যই বিচারকার্য সমাপ্ত করবেন।” এবং ৩৩৯ গ (২) ধারায় বলা হয়েছে,” কোন দায়রা আদালত মামলা প্রাপ্তীর তারিখ থেকে ৩৬০ দিনের মধ্যে অবশ্যই বিচারকার্য সমাপ্ত করবেন।”

কিন্তু আইনে সুষ্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবতা পুরোপুরি ভিন্ন। অনেকটা ‘কাজীর গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই!’- বিখ্যাত এই প্রবাদের মতো। কিন্তু মামলার দীর্ঘসূত্রতা জন্য বিচার বিভাগ থেকে অন্যন্য সংস্থাগুলো অনেক বেশী দায়ী।  ফৌজদারী বিচারের জন্য পুলিশ, প্রসিকিউশন, আইনজীবী ও আদালত একত্রে কাজ করতে হয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, মোকদ্দমা নিষ্পত্তিতে আদালতের যথেষ্ট সদ্বিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও প্রসিকিউসন, পুলিশ ও আইনজীবীদের গাফলতির কারনে মামলার বিচারের দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি হচ্ছে। তবে যৌথভাবে সবাই উদ্যোগ নিলে মামলার দীর্ঘসূত্রিতা অনেকাংশে কমানো সম্ভব।

প্রতিটি আদালতে পাহাড় সমান মামলার জট

আমাদের দেশের প্রায় প্রতিটি দেওয়ানী ও ফৌজদারি আদালতে পাহাড় সমান মামলার জট এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। নতুন একজন বিচারক যোগদান করার পর কাঁধে পরে পাহাড় সমান মামলার চাপ। আমাদের দেশের আদালত সমূহে মামলার জট নতুন কিছু নয়। তবে এই মামলার জট নিরসন না হওয়ার  জন্য আদালত ও আদালতের কর্মচারী এবং আইনজীবীরা যেমন দায়ি, তার চেয়ে অনেক বেশী দায়ী সাক্ষী, প্রসিকিউশন, পুলিশসহ তদন্ত সংস্থাগুলো এবং মামলার পক্ষসমূহ। এছাড়াও মামলা জটের আরো বহুবিধ কারন রয়েছে, যেমন:

দেশে এক লাখ মানুষের জন্য একজন বিচারক

বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে মামলা, তবে সেই হিসাবে বিচারক সংখ্যা একেবারেই অপ্রতুল। বিগত  ১৫ বছরে দ্বিগুণ হয়েছে বাংলাদেশে বিচারাধীন মামলা। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন দেওয়ানী ও ফৌজদারি আদালতে ৪২ লাখের মতো মামলা চলমান রয়েছে।
বাংলাদেশে প্রতি ১ লাখ মানুষের বিপরীতে মাত্র একজন বিচারক রয়েছেন। অথচ আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে প্রতি ৪৭,৬১৯ জন এবং পাকিস্তানে প্রতি ৫০,০০০ মানুষের বিপরীতে একজন বিচারক রয়েছেন। যেখানে ইংল্যান্ডে ২০ হাজার জনে একজন, আমেরিকা, ফ্রান্স ও ইতালিতে ১০ হাজার জনে একজন বিচারক রয়েছেন। খোদ আইন কমিশনের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

এমন অপ্রতুল বিচারক ও নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বিচার  বিভাগ তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব  সর্বোচ্চ গুরুত্ব এবং নিষ্ঠার সাথে পালন করে যাচ্ছে এ বিষয়ে সম্ভবত মতপার্থক্যের অবকাশ নেই। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে নিন্ম আদালতের প্রতিটি বিচারককে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত আদালতের কাজ শেষ করে খাস কামরায় দীর্ঘ সময় কাজ করতে হচ্ছে।  বিচারক ও আইনজীবীরা সমন্বিত ভাবে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তিতে কাজ করে যাচ্ছে।

তদন্ত সংস্থাসমূহের অতিরিক্ত সময়ক্ষেপণের প্রবণতা

ফৌজদারি মামলার তদন্তের দায়িত্বে রয়েছে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট। মামলা জটের জন্য বিচারকশূন্যতা বা আদালতের অবকাঠামো যতটা না দায়ী তার চেয়ে অনেক বেশি দায়ী তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনায় পুলিশের অতিরিক্ত সময় ক্ষেপনের প্রবণতা। অথচ পুলিশ রেগুলেশনস অব বেঙ্গল, ১৯৪৩ এর  ২৬১ প্রবিধানে বলা হয়েছে যে, “প্রবিধানের নির্দেশসমূহ কড়াকড়িভাবে অনুসরণ করা হইলে সবচাইতে জটিল মামলার তদন্ত শেষ করিতেও ১৫ দিনের বেশি সময় লাগিবার কথা নয়।”

কিন্তু বাস্তবতা পুরোই ভিন্ন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোন মামলার তদন্ত শেষ করতে প্রায় ৩/৪ বছর পর্যন্ত লেগে যায়। তদন্ত রিপোর্ট বা পুলিশ রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত আইন অনুযায়ী  মামলাটি বিচারিক আদালতে বদলী করা যায় না, ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে মামলা জট। তদন্ত সংস্থা গুলো মামলার তদন্ত দ্রুত ও পেশাদারিত্বের সাথে করলে মামলা জট অনেকাংশে কমে আসবে। পুলিশের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ মামলার তদন্তে যথেষ্ট তদারকি করলে এবং দ্রুততার সাথে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার ব্যবস্হা করলে মামলা জট অনেকাংশে কমে যাবে।

রাষ্ট্র ও সমাজের চাহিদা অনুযায়ী আইন প্রণয়ন

শত বছর পুরনো মান্ধাতার আমলের আইনগুলো সংশোধন করে রাষ্ট্র ও সমাজের চাহিদা অনুযায়ী যোগোপযোগী করে মামলার জট অনেকাংশে কমানো সম্ভব। মামলা জটের কারন অনুসন্ধান করে সময়ের পরিক্রমায় রাষ্ট্র ও সমাজের চাহিদা অনুযায়ী নতুন আইন প্রণয়ন, পুরনো আইনের সংশোধন, বিচারক ও আইনজীবীদের প্রশিক্ষন, বিচার কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশন করে মামলা জট কমানো সম্ভব। আইনকে যোগোপযোগী করতে হবে এমন ভাবে, যাতে আইন মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির কারন হয়, আইনের ফাকফোঁকর ব্যবহার করে মামলা দীর্ঘসূত্রতা করা না যায়।

একই সাথে দেওয়ানি এবং ফৌজদারি মামলার বিচার

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের বিচারিক আদলতসমূহের তেমন কোনো মৌলিক পরিবর্তন হয়নি। উচ্চ আদালত ও অধস্তন আদালতসমূহ The civil courts Act 1887, Code of Civil procedure 1908, এবং Code of Criminal Procedure 1898, The evidence Act 1872 অনুযায়ী পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে।

প্রচলিত আইন অনুযায়ী, দেওয়ানি  বিষয়গুলোর আদালতকে দেওয়ানী আদালত বলে এবং দেওয়ানী আদালতের বিচারকদের জেলা জজ এবং যুগ্ম জেলা জজ ও সিনিয়র সহকারী জজ, সহকারী জজ বলা হয় । ফৌজদারি বিষয়সমূহের আদালতকে দায়রা আদালত বলে এবং ফৌজদারী আদালতের বিচারকদের দায়রা জজ, অতিরিক্ত দায়রা জজ, যুগ্ম দায়রা জজ বলা হয় এবং দায়রা আদালতের নিম্নে রয়েছে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতসমূহ গঠন ও কার্যাবলি আলাদা হলেও স্বাধীনতার ৫০ বছরেও আমাদের দেশে একই বিচারকগণ একই সাথে দেওয়ানি এবং ফৌজদারি মামলার বিচার করে আসছেন।

আলাদা এজলাস বা কোর্ট তো নয়ই বরং যখন একজন জজ ক্রিমিনাল মামলার বিচার করেন তখন তিনি দায়রা জজ এবং আদালতের নাম দায়রা জজ আদালত, আবার যখন একজন বিচারক দেওয়ানি মামলা পরিচালনা করেন তখন তাকে বলা হয় জেলা জজ এবং আদালতের নাম জেলা জজ আদালত। একই বিষয় যুগ্ম এবং অতিরিক্ত জেলা/দায়রা জজদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

আবার ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট গুলোকে বলা হয় চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। আর যখন এই বিচারকগন আমলী আদালত পরিচালনা করেন তখন বলা হয় আমলী আদালতের বিচারক। অর্থাৎ একজন বিচারক একই সাথে কয়েকটি আদালত পরিচালনা করে থাকেন।

আবার এই আদালতের ওপর অতিরিক্ত আরো চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে সাইবার ট্রাইব্যুনাল, শিশু আদালত, মানবপাচার ট্রাইব্যুনাল, পরিবেশ আদালত, বন আদালত, বিদুৎ আদালত, ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল এবং দ্রুত বিচার নিশ্চিতে প্রতিস্থাপিত ট্রাইবুন্যালগুলির দায়িত্ব পালন করতে হয় দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসাবে। একই বিচারক কর্তৃক একাধিক বিষয়ে বিভিন্ন আদালত পরিচালনা করায় আইনে নির্ধারিত সময়ে একটি মামলার সমাধান আসা অনেক কঠিন। যার ফলে সৃষ্টি হচ্ছে মামলা জট।  প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক নিয়োগ,  অবকাঠামো উন্নয়ন করে মামলা জট অনেকাংশে কমানো সম্ভব।

আদালতে সাক্ষী আসে না

ফৌজদারি মামলায় সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বিচার করতে হয়। অধিকাংশ মামলায় সাক্ষী আদালতে হাজির হয় না। এমনকি খোদ পুলিশ বা অফিসিয়াল সাক্ষীও আদালতে উপস্হিত হয় না। মূলত আসামি পক্ষের হুমকি, ভয়-ভীতি প্রদানসহ নানা কারণে সাক্ষীরা আদালতে হাজির হচ্ছে না। তাছাড়া কর্মস্থল পরিবর্তন হওয়ায় যথাসময়ে সমন না পৌঁছানোর কারনে অনেক পুলিশ সাক্ষী ও অফিসিয়াল সাক্ষী হাজির হতে পারেন না।

আদালত থেকে সাক্ষীর ঠিকানায় ডজন ডজন সমন, ওয়ারেন্ট, Non-bailable warrant for witness এবং অর্ডার শিট পাঠিয়েও সাক্ষী হাজির করা যাচ্ছে না।  ফলে আদালতগুলোতে মামলার স্তূপ জমেছে। আর দীর্ঘদিন সাক্ষী উপস্হিত না হলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৮৯৮ এর ২৪৯ ধারায় আদালত মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে আসামিকে অব্যহতি দেন। ফলে মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়।

এদিকে, সাক্ষী হাজির না হওয়ায় তারিখের পর তারিখ পরছে। আর বিলম্বিত হচ্ছে গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ মামলার বিচার। যদিও সাক্ষী হাজিরের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের রয়েছে কঠোর নির্দেশনা। এছাড়াও পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারার আয়াত নং ২৮২ তে বলা হয়েছে যে, “সাক্ষীগণকে যখন ডাকা হইবে তখন তাহারা যেন অস্বীকার না করে” আবার সূরা বাকারা এর ২৮৩ তে বলা হয়েছে যে, “তোমরা সাক্ষ্য গোপন করিও না। যে কেহ উহা গোপন করে তাহার অন্তর অপরাধী”

সরকারি ও বেসরকারি সাক্ষীরা যদি নিয়মিত উপস্হিত হতো তাহলে মামলা জট দ্রুত শেষ হয়ে যেতো। সাক্ষী হাজিরার জন্য বিচারকরা যদি আইন অনুযায়ী কঠোর পদক্ষেপ নেন তাহলে মামলার বিচার কার্যক্রম দ্রুত শেষ করা সম্ভব হবে। ন্যায়বিচার পাবে বিচারপ্রার্থীরা এবং বিচার বিভাগের উপর আস্হা ও ভরসা বাড়বে জনগণের।

আদালতে সাক্ষীর উপস্থিতি নিশ্চিতকরণে পুলিশ প্রশাসনের ব্যর্থতা

ফৌজদারি মামলায় সাক্ষীদের আদালতে হাজির করার ক্ষেত্রে পুলিশের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সাক্ষীদের প্রতি জারি করা সমন, ওয়ারেন্ট, অর্ডারশীট তামিল করার দায়িত্বও পুলিশের। অথচ দু:খজনক হলে একথা সত্য যে, অনেক মামলায় দেখা যায় পুলিশ সাক্ষীগন নিজেই গড়হাজির থাকে। ফলে বাড়ছে মামলার জট ও সুবিধা পাচ্ছে আসামিরা এবং ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিচারপ্রার্থীরা।

ফৌজদারি মামলায় তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দেয় সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭১ (২) (১) উপধারা অনুযায়ী, মামলার ফরিয়াদি (বাদী) বা সাক্ষী মামলার শুনানিকালে যাতে আদালতে হাজির হয় তা নিশ্চিত করা পুলিশ কর্মকর্তার (তদন্তকারী কর্মকর্তা) দায়িত্ব। তদন্তকারী কর্মকর্তা নিজেও একজন সাক্ষী। অভিযোগ গঠনের পর বিচার শুরু হলে সাক্ষীদের কাছে তারিখ উল্লেখ করে সমন পাঠানো হয় আদালত থেকে। ধার্য তারিখে সাক্ষী হাজির না হলে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে পরোয়ানা জারি হয়।

এরপরও সাক্ষী গরহাজির থাকলে জামিন অযোগ্য পরোয়ানা জারি হয়। এক্ষেত্রে পুলিশ ও পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাগন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পুলিশ সাক্ষী ও সাধারন সাক্ষীদের আদালতে উপস্হিতি নিশ্চিত করার ব্যবস্হা নিলে যেমন কমবে মামলা জট তেমনি জনগণের ন্যায়বিচারের পথ সহজ হয়ে যাবে। এছাড়াও মামলার দীর্ঘসূত্রিতার জন্য বিজ্ঞ আইনজীবী কর্তৃক সাক্ষ্য উপস্থাপনে অনীহার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে প্রতিফলিত হয়।

এ ব্যাপারে সকল আইনজীবীর অফিস অধিকতর সহযোগিতার মনোভাব প্রদর্শন করলে দ্রুত মামলা নিস্পত্তি সম্ভব হইবে। এরপরেই রয়েছে ফৌজদারি মামলায় জব্দকৃত আলামত প্রদর্শন করার জন্য অত্যাবশ্যক জব্দ তালিকার সাক্ষীদের অনুপিস্থিতি ও মেডিকেল অফিসারের অনুপস্থিতি। এই সমস্যা সমাধান করা গেলে মামলা জট অনেকাংশে কমে আসবে।

আদালত প্রশাসনের দুর্নীতি

মামলাজট ও বিচার বিভাগের আস্হা সংকট ও বিভিন্ন সমস্যার জন্য প্রধানত দায়ী আদালত প্রশাসনের চরম অনিয়ম ও দুর্নীতি। বাংলাদেশের যেকোন বিচারিক আদালতে অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে, বিচারকগণ থেকে অন্তত ৫০ থেকে ১০০ গুন বেশি সম্পদের মালিক আদালতের পেশকার, পিয়ন, সেরেস্তাদার, জারী কারক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, নাজির। বিচারক ও আইনজীবীরা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য যথেষ্ট  কাজ করে গেলেও আদালতের কর্মচারীদের চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির ফলে বিচার বিভাগের প্রতি জনগনের চরম আস্হা সংকটের সৃষ্টি হচ্ছে, পাশাপাশি বৃদ্ধি পাচ্ছে মামলা জট। আদালতের কর্মচারীদের কাছে বিচারপ্রার্থী থেকে শুরু করে আইনজীবীরা পর্যন্ত জিম্মি হয়ে আছে।  দু-একজন অসৎ বিচারকের সহযোগীতায় আদালতের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এভাবে প্রকাশ্যে বীরদর্পে  দুর্নীতির সুযোগ পাচ্ছে।

মামলা জটের অন্যতম প্রধান কারণ হলো আদালত প্রশাসনের দুর্নীতি। সরকারের অন্যান্য প্রশাসনিক কাজে সাধারন মানুষকে উৎকোচ দিতে হয় আদালত প্রশাসনে আসীন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ক্ষেত্রে বিষয়টি ব্যতিক্রমতো তে নয়ই উল্টো দ্বিগুণ।  অধস্তন আদালত হতে শুরু করে সুপ্রিমকোর্ট পর্যন্ত লবিং না থাকলে মামলার ফাইল বেগ পায় না বলে সাধারণ মানুষের অভিযোগ। অনেকেই  মনে করেন মামলাজটের পেছনে বিচারক অপ্রতুলতা যতোটা না দায়ী, আদালত প্রশাসনের অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, আদালত কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার অভাব বহুলাংশে মামলাজট বৃদ্ধির জন্য দায়ী। শুধুমাত্র বাংলাদেশের একটি জেলার আদালত প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দুর্নীতি অনুসন্ধান করলে পুরো দেশের চিত্র উঠে আসবে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট জেলাগুলোর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা জজ ও চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সকল পেশকার, সেরেস্তাদার, পিয়ন, জারিকারক, স্টেনোগ্রাফার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, নাজির এবং আদালত পরিদর্শকের কার্যালয়ের এর অনিয়ম ও দুর্নীতি অনুসন্ধান পূর্বক সকল কর্মচারীদের সম্পত্তির হিসাব নিয়ে দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে দুর্নীতিবাজদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্হা গ্রহণ করলে সকল সমস্যার সমাধান হবে। পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের প্রতিটি আদালতের প্রশাসনের দুর্নীতি বন্ধ করলে মামলা জট অনেকাংশে কমে যাবে, কমবে হয়রানি এবং প্রতিষ্ঠিত হবে প্রকৃত ন্যায়বিচার।

আশার কথা

অবকাঠামো গত সমস্যা, আইনের আধুনিকায়নের যথেষ্ট অভাব, অপ্রতুল  বিচারক ও সীমিত অবকাঠামো, এজলাস সংকট, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা, প্রতিটি আদালতে পাহাড় সমান মামলার জট, আদালত প্রশাসনের চরম দুর্নীতিসহ শত সীমাবদ্ধতায় কাঙ্ক্ষিত সময়ের মধ্যে বিচার কাজ শেষ না হলেও আদালত থেকে ন্যায়বিচার বঞ্চিত হয় না কেউ। প্রতিদিন আদালতে অনেক মামলার  বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত ও সমাপ্ত হচ্ছে। আইনের সমস্ত প্রক্রিয়া অনুসরন শেষে মৃত্যুদন্ড, যাবজ্জীবন কারাদন্ড, নানা মেয়াদের কারাদন্ড ও অর্থদন্ড ও খালাসের রায় হচ্ছে।

উচ্চ আদালত থেকে বিচারিক আদালতে বিচারপ্রার্থী মানুষের মৌলিক অধিকার, মালিকানা, দখল, অর্থ, চাকরিসহ নানা সাংবিধানিক ও আইনগত অধিকার ফিরে পাচ্ছেন। রাজনৈতিক বা অন্য কোন প্রভাবশালীর কারণে আইন অনুযায়ী মামলা নিয়ে আদালতের কাছে গেলে আদালত কারও মামলা ফেরত দিয়েছেন এমন একটি ঘটনা সম্ভবত কেউ দেখাতে পারবে না। উল্টো রাজনৈতিক বা প্রভাবশালীদের চাপে যখন পুলিশ মামলা নিচ্ছে না তখন কেউ আদালতে গেলে আদালত মামলা গ্রহণ করছে।

কোন কারণে না বুঝে, আইন না জেনে  বিচার বিভাগকে জড়িয়ে সমালোচনা করা নি:সন্দেহে  আত্মঘাতী। বিচার বিভাগ একটি রাষ্ট্রের প্রাণ। প্রাণ ছাড়া যেমন প্রাণী বাঁচে না। বিচার বিভাগ ছাড়া রাষ্ট্রের অস্তিত্ব চিন্তা করা যায় না। বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক আক্রমণ বা সমালোচনা  নয়, বিচার বিভাগের প্রতি আরও সংবেদনশীল ও দায়িত্বশীল হয়ে একে শক্তিশালীকরণে ভূমিকা রাখা প্রত্যেক  নাগরিকের কর্তব্য।

যেহেতু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা বা বিচার করার বিষয়টি কেবল বিচারকদের ওপরই নির্ভর করে না। এর সাথে জড়িত আছে আরো অনেক অংশীদার। সকলের সম্মিলিত প্রয়াসের ফলেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা লাভ করে। কেবল একা বিচারক, বা একজন আইনজীবীর পক্ষে সম্ভব নয় এই দু:সাধ্য কাজটি করা। তাই সকলের আইনগত ও নৈতিক দায়িত্ব থেকে বিচার বিভাগকে সর্বোচ্চ সম্মান এবং আনুগত্য প্রদর্শন করতে হবে। তাহলেই রক্ষা পাবে সকলের আইনগত অধিকার ও প্রতিষ্ঠিত হবে ন্যায়বিচার।

লেখক: সংবাদকর্মী ও আইনজীবী, জজ কোর্ট, নারায়ণগঞ্জ। Email: khandakersamrat7@gmail.com