মুক্তিযোদ্ধাকে দিয়ে পতাকা উত্তোলন করা হচ্ছে গাজীপুর জেলা কারাগারে

বন্দি মুক্তিযোদ্ধার হাতে পতাকা দিয়ে সম্মান দেখালো কারা-কর্তৃপক্ষ

মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের অবদানের প্রতি সম্মান দেখানোর উদ্দেশ্যে মুক্তিযোদ্ধাকেই বেছে নিয়েছে গাজীপুর জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষ।

গতকাল শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) বিজয় দিবসের দিন বন্দি একজন মুক্তিযোদ্ধার হাতে পতাকা তুলে দিয়ে কারা-কর্তৃপক্ষ জাতীয় বীরদের প্রতি সম্মান দেখিয়েছে। এ সময় কারাবন্দিরা একসঙ্গে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে কারা-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পতাকা উত্তোলন করেন।

বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশের কেন্দ্রীয় কারাগারসহ সব কারাগারে বিশেষ খাবার, আলোকসজ্জা, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও পুরস্কার বিতারণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া কারাবন্দিদের বাড়ি থেকে তৈরি করে আনা স্বজনদের খাবারও তাদের দেওয়া হয়েছে। সকাল থেকে কারা-কর্তৃপক্ষ ও বন্দিদের সহযোগিতায় এসব আয়োজন হয়েছে।

কারা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশের প্রতিটি কারাগারেই বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়েছে। কারারক্ষীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন। এই উপলক্ষে কারাগারগুলোয় আলোকসজ্জা করা হয়েছে।

তবে গাজীপুর জেলা কারাগারের আয়োজনটি ছিল ব্যতিক্রম। একজন কারাবন্দি মুক্তিযোদ্ধাকে দিয়ে দিনেরে শুরুতে পতাকা উত্তোলন করিয়ে সম্মান দেখিয়েছে গাজীপুর কারা কর্তৃপক্ষ। এ সময় কারাগারের বন্দিদের সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন ও জাতীয় পতাকাকে সম্মান দেখান।

গাজীপুর জেলা কারাগারে জেল সুপার নেছার আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘একজন বীর-মুক্তিযোদ্ধা আমাদের কারাগারে বন্দি রয়েছে। আমরা কারাগারকে সংশোধনাগার বলে থাকি। এখানে সবাই আমাদের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। একজন মুক্তিযোদ্ধা আমাদের কারাগারে বন্দি রয়েছেন। দেশের সব মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা রয়েছে। আমরা তাকে দিয়ে সকালে পতাকা উত্তোলন করেছি। তখন সব বন্দিরা জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন। জাতীয় পতাকাকে স্যালুট দিয়ে সম্মান দেখিয়েছেন। এভাবে দিনের শুরু হয়েছে। এরপর বন্দিদের জন্য সাংস্কৃতিক-অনুষ্ঠান, পুরস্কার বিতরণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাদের দেওয়া হয়েছে উন্নত খাবার।’

জেল সুপার নেছার আলম বলেন, ‘দেশের সব কারাগারেই বিশেষ আয়োজন ছিল। আমাদের কারাগারেও প্রতিবছরের মতো এবারও গাজীপুর জেলা কারাগারে বন্দিদের বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হয়েছে। খাবারের মধ্যে রয়েছে পোলাও, গরু ও খাসির মাংস, আলুর ধম ও পায়েস।’

তিনি বলেন, ‘এছাড়া বিভিন্ন সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজ করা হয়েছিল। সঙ্গীত অনুষ্ঠানে বন্দিরা নিজেরাও গান পরিবেশন করেছে। দিনটি বন্দিদের আনন্দেই কেটেছে।’

ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জেও কেন্দ্রীয় কারাগারে বিশেষ মর্যাদায় বিজয় দিবস উদযাপন হয়েছে। সারাদিনই কারাগারে ছিল উৎসবের আমেজ। কেন্দ্রীয় কারাগারে সব বন্দিকে উন্নতমানের খাবার দেওয়া হয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবির বিশেষ আয়োজনের কথা জানিয়েছেন।

কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে ভিড়ছিল বন্দিদের স্বজনদের। তারা বন্দিদের জন্য বাড়ি থেকে তৈরি করা খাবার নিয়ে এসেছেন। সেই খাবার পৌঁছানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করেছেন কারা-রক্ষীরা।

কাশিমপুরের হাইসিকিউরিটি কারাগার-১ ও ২-এ বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশের সব কারাগারের মতো বন্দিদের জন্য উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়েছে। কাশিমপুর কারাগার-২-এর জেল সুপার সুব্রত কুমার বণিক জানান, ‘বিজয় দিবস উপলক্ষে সকাল থেকেই আমাদের বিশেষ আয়োজন হয়েছে। বন্দিদের সঙ্গে কারারক্ষীরাও দিনটি উদযাপন করেছেন। বন্দিদের বিশেষ খাবার দেওয়া হয়েছে।’

চট্টগ্রাম কারা-কর্তৃপক্ষ জানায়, বিজয় দিবসে চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে উন্নত মানের খাবার। বন্দিদের স্বজনদের ভিড় ছিল কারাগারে।

এছাড়া পিরোজপুর, ফেনী, কুষ্টিয়া, রাজশাহীসহ অন্যান্য বড় জেলার কারাগারে আলোকসজ্জা করা হয়েছে।

ফেনী জেলা কারাগারের জেলার শংকর কুমার মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের কারাগারে ৭৩৫ জন বন্দি রয়েছেন। আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী বিজয় দিবস উদযাপন করেছি। বন্দিরা যেন বিজয় দিবসের উৎসব থেকে বঞ্চিত না হন, সেজন্য আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা ছিল। সকালে আমরা বন্দিদের মুড়ি-পায়েস খেতে দিয়েছি। দুপুরে গরু-খাসির মাংস, ডিম-পোলাও, সালাত ও পানীয় দেওয়া হয়েছে। রাতে পোলাও-মুরগির মাংস দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘দুপুরে খাবারের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা ছিল। দু’জন শিল্পীকে আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম, তারা এসে গান শুনিয়েছেন। বন্দিরা এসব আয়োজনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন।’
বাংলা ট্রিবিউন