‘ব্লু হোয়েল’ গেম

বিদায়ী বছরের আতঙ্ক ছিল ব্লু হোয়েল, ‘পালায়’ হাইকোর্টের নির্দেশে

গেল বছর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল রাশিয়ার বাসিন্দা ফিলিপ বুদেকিনের তৈরি ‘ব্লু হোয়েল’ গেম। মরণঘাতী এ গেম খেলে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শতাধিক তরুণ প্রাণ হারায়। বছরজুড়ে গেমটি ছিল তরুণ-তরুণী ও অভিভাবকদের জন্য এক আতঙ্কের নাম।

২০১৭ সালের প্রথম দিকে ছড়িয়ে পড়া এই গেমের অ্যাডমিনরা নতুন প্রজন্মকে টার্গেট করে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে আসক্তি বাড়তে থাকে। এটি এমন একটি গেম যেখানে অ্যাডমিনদের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে হয় খেলোয়াড়কে। গেমটিতে সাধারণত ৫০টি টাস্ক দেন অ্যাডমিন। শেষের টাস্কেই মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়। এভাবেই পুরো গেমটি খেলে আত্মঘাতী হন বহুজন।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই গেম খেলে মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেলেও বাংলাদেশে বিষয়টি প্রথম আলোচনায় আসে গেল বছরের অক্টোবরে। হলিক্রস স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী অপূর্বা বর্ধন স্বর্ণা এই গেম খেলে আত্মহত্যা করেন বলে দাবি করেন তার বাবা। বাবার এমন দাবির পর গেমটিতে আসক্তদের শনাক্ত করার পন্থা সময় নিউজে প্রকাশিত হওয়ার পর দু’জন ব্লু’হোয়েল আসক্ত তরুণের অভিভাবকরা মনোবিজ্ঞানী তাজুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বিষয়টি নিয়ে সৃষ্টি হয় তুমুল আলোচনার। ব্লু হোয়েল নামে কোনো গেম’র আদৌ অস্তিত্ব আছে কিনা? এমন প্রশ্নও আসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যবহারকারীদের মধ্যে।

এ অবস্থায় ১১ অক্টোবর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের স্নাতক প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থীর ওই গেমে আসক্তির বিষয়টি প্রমাণিত হয়। তার কাছ থেকে উঠে আসে রাতের আঁধারে ছাদের রেলিং এ হাঁটা ও ব্লেড দিয়ে নিজের শরীর রক্তাক্ত করার মতো নানা চমকে দেয়া তথ্য।

এরপর রাজধানীর কাজীপাড়ায় গেমটিতে আসক্ত হয়ে সায়েম নামের এক কিশোর আত্মহত্যা করে বলে দাবি করে তার পরিবার। এরপর গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় এক এসএসসি পরীক্ষার্থীও এই গেম খেলেই আত্মহত্যা করে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। এছাড়া মাদারীপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্লু হোয়েলে আসক্ত কিশোর-কিশোরীর খোঁজ মেলে।

এমন অবস্থায় গেমটি বন্ধের নির্দেশ চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন স্বর্ণার বাবা আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুব্রত বর্ধনসহ তিন আইনজীবী। শুনানি শেষে ব্লু হোয়েল গেম’র সকল লিঙ্ক ছয় মাসের জন্য বন্ধের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত সব বিশেষ ইন্টারনেট প্যাকেজ বন্ধ করারও নির্দেশ দেন আদালত। এরপর থেকে গেমটি খেলে আর তেমন হতাহতের সংবাদ পাওয়া যায়নি।

সূত্র – সময়টিভি