জাতীয় সংসদ ভবন
জাতীয় সংসদ ভবন

বিরোধী দলের ওয়াক আউটের মধ্যেই ব্যাংক কোম্পানি আইন পাস

ব্যাংক-কোম্পানি আইন (সংশোধনী) বিল ২০১৮ নিয়ে বিভিন্ন মহলের সমালোচনা ও সংসদে বিরোধী দল ওয়াক আউট করলেও এর মধ্যেই পাস হয়েছে আইনটি। নতুন আইনে ব্যাংক পরিচালনায় একই পরিবারের দু’জন পরিচালকের স্থলে চারজন এবং পরিচালকদের মেয়াদ বৃদ্ধির বিধান যুক্ত করা হয়েছে।

জাতীয় সংসদে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে গতকাল মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) বিলটি পাস হয়। বিল পাসের প্রস্তাব দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

এর আগে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্যরা ব্যাংক ব্যবস্থা ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার দাবিতে বিলটি পাস না করে প্রত্যাহারের দাবি জানান। বিরোধী দলীয় সদস্যদের অভিযোগ, সংশোধিত আইন ব্যাংক খাতকে ধ্বংস করবে। কিন্তু বিরোধী দলের দাবি না মেনে অর্থমন্ত্রী বিরোধী দলের সদস্যদের বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেয়ার আহ্বান জানান।

এ সময় বিরোধী দলের সদস্যরা দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ শুরু করলে স্পিকারের চেয়ারে থাকা ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া সবাইকে শান্ত করার চেষ্টা করেন।

তিনি বলেন, আমার কথা শোনেন। বিল তো এখনও পাস হয়নি। সংশোধনী অর্থমন্ত্রী গ্রহণ করতেও পারেন। গতকাল (সোমবার) আপনাদের দু’টি সংশোধনী গৃহীত হয়েছে। এরপরও বিরোধী দলের সদস্যরা দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করতে চাইলে স্পিকার জানতে চান, আপনাদের অনেকে প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান রয়েছেন। কার্যপ্রণালী বিধি জানেন। এখন আপনার কোন বিধিতে কথা বলতে চাইছেন? এভাবে তো কথা বলা যায় না।

এ সময় মাইক ছাড়াই কাজী ফিরোজ রশীদসহ বিরোধী দলের সদস্যরা প্রতিবাদ করতে থাকেন এবং কথা বলতে না দেয়া হলে ওয়াক আউটের হুমকি দেন। এ পর্যায়ে স্পিকার বলেন, আশা করি আপনারা সংসদের রুলস অব প্রসিডিউর মানবেন। বিধি ছাড়া কীভাবে কথা বলবেন? আপনাদের যা ইচ্ছা করতে পারেন।

এরপর কাজী ফিরোজ রশীদের নেতৃত্বে বিরোধী দলের সদস্যরা ওয়াক আউট করেন। পরে বিলের ওপর সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন ও আলোচনার জন্য বিরোধী দলের কোনো সদস্য সংসদে উপস্থিত না থাকায় বিলটি আলোচনা ছাড়াই দ্রুত কণ্ঠ ভোটে পাস হয়।

এরআগে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থাকে রক্ষার জন্য বিলটি তাড়াহুড়ো করে পাস না করে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন স্বতন্ত্র সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী, জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমাম, নূরুল ইসলাম ওমর, নূরুল ইসলাম মিলন, বেগম রওশন আরা মান্নান, বেগম নূর-ই-হাসান লিলি চৌধুরী। একইসঙ্গে তারা বিলটি জনমত যাচাইয়ের জন্য বাছাই কমিটিতে প্রেরণের দাবি জানান।

তারা বলেন, পাকিস্তান আমলের মতো দেশে নতুন করে ২৪ পরিবার সৃষ্টি করবেন না। প্রস্তাবিত বিলে তিনটি সংশোধনী আনা হয়েছে। পরিচালকরা ধারাবাহিকভাবে টানা ৯ বছর পরিচালক পদে থাকতে পারবেন বলে বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া এ বিলে ব্যাংকের প্রথম পর্ষদের মেয়াদ এক বছরের বিদ্যমান বিধান এবং প্রতিবছর এক-তৃতীয়াংশ পরিচালকের পদত্যাগের বাধ্যবাধকতাও তুলে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিলে কোনো ব্যক্তি কোনো ব্যাংক-কোম্পানির পরিচালক পদে একাধিক্রমে ৯ বছরের বেশি থাকতে পারবেন না এবং সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিন বছর অতিবাহিত না হলে তিনি ওই ব্যাংক-কোম্পানির পরিচালক পদে পুনঃনিযুক্ত হবার যোগ্য হবেন না।

তবে উত্থাপিত বিলের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি পরিচালক পদে তিন বছরের কম সময় অধিষ্ঠিত না থাকলে একাধিক্রমে ৯ বছর গণনার ক্ষেত্রে ওই সময়ও অন্তর্ভুক্ত হবে।

বিলটি উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কোনো পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যদি কেউ আলাদাভাবে ব্যবসা পরিচালনা করেন এবং নিজেই করদাতা হন তাহলে তাকে পরিবারের ওপর নির্ভরশীল বলা যায় না। বর্তমান বিধানে এক পরিবার থেকে পরিচালক পদে নিয়োগযোগ্য সদস্য সংখ্যা দু’জনে সীমিত থাকায় এরকম সদস্যদের পরিচালক হওয়ার সুযোগ সীমিত। একক পরিবার থেকে সর্বোচ্চ দু’জনের স্থলে চারজনকে সুযোগ দেয়া হলে এ সমস্যা অনেকাংশে দূরীভূত হবে। এছাড়া নতুন প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকগুলোর সমস্যা বিবেচনায় নিয়ে সব ক্ষেত্রেই যাতে ধারাবাহিকভাবে সর্বোচ্চ ৯ বছর পর্যন্ত পরিচালক পদে থাকার সুযোগ সৃষ্টি হয়, সে লক্ষ্যে সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে।

সংসদ প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম