বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত

দেশে মাদকের চেয়েও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে প্রশ্নফাঁস: হাইকোর্ট

প্রশ্নফাঁসের কারণে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা বাতিল চেয়ে দায়ের করা রিটের শুনানিতে প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে মাদকের তুলনা করে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘দেশে মাদকের চেয়েও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে প্রশ্নফাঁস।’

আজ বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।

হাইকোর্ট প্রশ্নফাঁস রোধে হস্তক্ষেপ করবে জানিয়ে আদালত আরও বলেছেন, ‘প্রশ্নফাঁস নিয়ে এতদিন যা হওয়ার হয়েছে, সরকারকে অনেক সময় দেওয়া হয়েছে। তাই প্রশ্নফাঁস রোধে এখন থেকে আমরা হস্তক্ষেপ করবো।’

ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ও অ্যাডভোকেট আইনুন্নাহার সিদ্দিকী গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানিয়েছেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন তারা।

শুনানিতে আদালত বলেছেন, ‘যারা এখন পরীক্ষা দিচ্ছে, তারা পাঁচ বছর পর দেশকে নেতৃত্ব দেবে। তখন দেশের অবস্থা কী হবে?’

এরপর রাষ্ট্রপক্ষ ও রিটকারী পক্ষের আইনজীবীদের শুনানি নিয়ে রুল জারি করেন আদালত। ওই রুলে এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস রোধে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।

নানা ব্যবস্থা নেওয়ার পরও প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে পারছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ১ ফেব্রুয়ারি বাংলা প্রথম পত্রের বহুনির্বচনি অভীক্ষার ‘খ’ সেট পরীক্ষার প্রশ্ন ও ফেসবুকে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের হুবহু মিল ছিল। পরীক্ষা শুরুর একঘণ্টা আগেই তা ফেসবুকে পাওয়া যায়। ৩ ফেব্রুয়ারি সকালে পরীক্ষা শুরুর প্রায় ঘণ্টাখানেক আগে বাংলা দ্বিতীয় পত্রের নৈর্ব্যক্তিক (বহুনির্বচনি) অভীক্ষার ‘খ’ সেটের উত্তরসহ প্রশ্নপত্র পাওয়া যায় ফেসবুকে। যার সঙ্গে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

৫ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষা শুরুর অন্তত দুই ঘণ্টা আগে সকাল ৮টা ৪ মিনিটে ইংরেজি প্রথম পত্রের ‘ক’ সেটের প্রশ্ন ফাঁস হয়। যার সঙ্গে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল পাওয়া গেছে। ৭ ফেব্রুয়ারি বুধবার পরীক্ষা শুরুর অন্তত ৪৮ মিনিট আগে সকাল ৯টা ১২ মিনিটে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের ‘খ’ সেটের গাঁদা প্রশ্নপত্রটি হোয়াটসঅ্যাপের একটি গ্রুপে পাওয়া গেছে। যা অনুষ্ঠিত হওয়া প্রশ্নপত্রের সঙ্গে হুবহু মিলে গেছে। ৮ ফেব্রুয়ারি হোয়াটসঅ্যাপের একটি গ্রুপে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার বহুনির্বচনি অভীক্ষার ‘খ’ সেটের চাঁপা প্রশ্নপত্রটি পাওয়া যায়। এটিও অনুষ্ঠিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে হুবহু মিলে গেছে।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা ৫৯ মিনিটে হোয়াটসঅ্যাপের একটি গ্রুপে গণিতের ‘খ-চাঁপা’ সেটের প্রশ্নপত্রটি পাওয়া যায়, যা অনুষ্ঠিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। গত ১১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা ৫১ মিনিটে হোয়াটসঅ্যাপের একটি গ্রুপে আইসিটি বিষয়ের ‘ক সেট’ প্রশ্ন পাওয়া যায়। আর সকাল ৯টা ৩ মিনিটে ‘গ সেট’র প্রশ্নও ফাঁস হয়। এছাড়া গত ১৩ ফেব্রুয়ারি পদার্থবিজ্ঞান, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বসভ্যতা বিষয়ের পরীক্ষা শুরুর আগেই হোয়াটসঅ্যাপে পদার্থবিজ্ঞান, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিংয়ের প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ পাওয়া গেছে। যা পরীক্ষার প্রশ্নের সঙ্গে হুবহু মিল রয়েছে।