জেনে নিন আইনের আশ্রয় নিতে বিচারপ্রার্থী নারীর করণীয়

তানজিম আল ইসলাম: একজন নারী যেকোনো যুক্তিসংগত কারণেই বিচারপ্রার্থী হতে পারেন। নির্যাতিত হলে, পারিবারিক সহিংসতার শিকার হলে, পারিবারিক অধিকার ফিরে পেতে নারীকে একজন বিচারপ্রার্থী হয়ে আদালতের শরণাপন্ন হতে হয়। তবে অনেক নারীই আইনের আশ্রয় কীভাবে নিতে হবে, তা জানেন না।

পারিবারিক অধিকার ক্ষুণ্ন হলে

একজন স্ত্রী দেনমোহর এবং ভরণপোষণ পাওয়ার জন্য পারিবারিক আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন। মুসলমান নারী হলে কাবিননামায় তালাক প্রদানের ক্ষমতা যদি না-ও থাকে পারিবারিক আদালতে তালাকের ডিক্রির জন্য আবেদন করতে পারবেন। সন্তানের অভিভাবকত্ব ও তত্ত্বাবধানের জন্যও পারিবারিক আদালতে আশ্রয় নেওয়া যাবে। দাম্পত্য অধিকার ফিরে পেতে হলেও পারিবারিক আদালতে যেতে হবে। সব জেলায় সহকারী জজ আদালত পারিবারিক আদালত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

পারিবারিক সহিংসতার শিকার হলে

কোনো নারী যদি পারিবারিক সহিংসতার কারণে সংক্ষুব্ধ হন, তাহলে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে আবেদন করতে পারেন। আইনজীবীর মাধ্যমে নির্ধারিত পদ্ধতিতে আবেদন করতে হবে। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত যদি উপযুক্ত মনে করেন, তাহলে পারিবারিক সহিংসতা ঘটতে পারে এমন অথবা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হয়, এমন যেকোনো প্রকার কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য সুরক্ষার আদেশ দিতে পারেন।

প্রাথমিক শুনানি শেষে পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে বলে মনে হলে কিংবা পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে হলে বা প্রমাণ পেলে আদালত একতরফাভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সুরক্ষার আদেশ দিতে পারেন। এ আদেশে পারিবারিক কোনো সহিংসতামূলক কাজ থেকে বিরত থাকতে, পারিবারিক সহিংসতা করতে প্ররোচনা না দিতে, মোবাইল বা টেলিফোনে যোগাযোগ ইত্যাদি থেকে বিরত থাকার জন্য এবং সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির কর্মস্থল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও যাতায়াতের জায়গায় প্রবেশ না করতে প্রতিপক্ষকে আদেশ দিতে পারেন।

যৌতুকের শিকার হলে

যৌতুকের শিকার হলে কিংবা যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হলে যৌতুক নিরোধ আইন এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের আশ্রয় নেওয়া যায়। মনে রাখতে হবে যে যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হলে সে ক্ষেত্রেই কেবল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করা যাবে। এ মামলা কাছের থানায় এজাহার হিসেবেও করা যাবে। থানায় মামলা না নিলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করা যাবে। শুধু যৌতুক দাবি করলে যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা করতে হবে। এ ছাড়া ধর্ষণ এবং অশালীন আচরণের শিকার হলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করা যাবে।

সাইবার অপরাধের শিকার হলে

সাইবার অপরাধের শিকার হলে কাছের থানায় সুনির্দিষ্টভাবে এজাহার করতে হবে। থানায় মামলা না নিলে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করলে তা থানায় এজাহার হিসেবে নেওয়ার জন্য আদেশ দিতে পারে।

পেতে পারেন আইনি সহায়তা

একজন নারী অসহায় এবং দুস্থ হলে, অ্যাসিডদগ্ধ নারী এবং প্রতিবন্ধী নারীরা সরকারিভাবে বিনা ফিতে আইনি সহায়তা পেতে পারেন। এ ছাড়া কোনো নারীর বার্ষিক আয় যদি দেড় লাখ টাকার নিচে হয় তাহলে সুপ্রিম কোর্টে এবং এক লাখ টাকার নিচে হলে জেলা জজ আদালতে মামলা করার জন্য সরকারি আইনি সহায়তা পাবে। এ ছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা রয়েছে যারা অসহায় নারীদের আইনি সহায়তা দিচ্ছে।

জানা জরুরি

একজন নারী যখন বিচারপ্রার্থী হন তখন একজন দক্ষ আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেই এগোনো উচিত। কোনো আইনের আশ্রয় নিতে গেলে পরবর্তী ধাপগুলো এবং কোন সময় হাজির হতে হবে এবং কী করণীয় তা আইনজীবীর কাছ থেকে সময়মতো জেনে নিতে হবে।

লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট