স্বজনদের সাথে ফোনে কথা বলে মনের কষ্ট হালকা হচ্ছে কারাবন্দীদের

ধর্ষণ মামলায় ত্রিশ বছরের কারাবাসের রায় হয়েছে লাবলু মিয়ার। পাঁচ বছর ধরে তিনি টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে আছেন। তার বাড়ি মধুপুর উপজেলার জটাবাড়ি পুর্বপাড়া গ্রামে। কারাগার থেকে ফোন ব্যবহারের সুযোগ পেয়ে দীর্ঘদিন পর তিনি স্বজনদের সাথে কথা বলতে পেরেছেন।

কথা শেষে তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, দেশে প্রথমবারের মতো বন্দিদের এই ফোনালাপ কার্যক্রমের উদ্বোধনী দিনে স্বজনের সাথে কথা বলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। কারাগারে থেকে স্বজনদের সাথে কথা বলতে পারবো চিন্তাই করতে পারিনি। মনের ভিতরে অনেক কষ্ট ছিল। ফোনে কথা বলে হালকা হলাম।

এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বন্দিরাও যে মানুষ, তাদের যে আবেগ অনুভুতি আছে; প্রধানমন্ত্রী তা অনুধাবন করতে পেরেছেন।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরী করতেন সাজ্জাদ হোসেন। চাকুরীবিধি লংঘন করার অপরাধে সেনাবাহিনীর আইনে তার এক বছরের সাজা হয়েছে। তিনমাস ধরে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে আছেন তিনি। চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবন নগড় থানায় তার বাড়ি।

বন্দিদের স্বজনদের সাথে ফোনালাপ কার্যক্রমের উদ্বোধনী দিনে তিনিও কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন।

স্বজনদের সঙ্গে কথা শেষে তিনি বলেন, বন্দিরা নিয়মিত কথা বলতে পারলে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভাল থাকবে। বিষন্নতা, অস্থিরতা, মানসিক অবসাদ কমবে। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে তাদের সুস্থ্য জীবনে ফিরে আসা সহজ হবে।

হত্যা মামলায় দুই বছরের সাজা মাথায় নিয়ে কারাভোগ করছেন শাহাদত হোসেন। তার বাড়ি সদর উপজেলার চাকতা গ্রামে। তিনি তার মায়ের সাথে কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন। সরকারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, মায়ের সাথে ফোনে কথা বলে খুব ভাল লাগছে। অপরাধীরা এভাবে কথা বলার সুযোগ পেলে আত্বীয়স্বজন তাদের ভাল পরামর্শ দিবে। স্বজনদের সাথে সম্পর্ক অটুট থাকবে। অপরাধ করতে সাহস পাবে না।

আছাদুল ইসলাম নামে এক আসামি ফোনে স্ত্রীর সাথে কথা শেষে বলেন, সরকার মানবিক দৃষ্টি দিয়ে বন্দিদের কথা বলার সুযোগ দিয়েছে। এর মাধ্যমে বন্দিদের সংশোধন হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন। এ জন্য তিনি সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

এ বিষয় মাওলা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আলাউদ্দিন বলেন, মানুষকে ভালবেসে মানবিক আচরণ দিয়ে সংশোধন করা যায়। প্রধানমন্ত্রীর এ মানবিক গুন অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তবে একটি নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনার আওয়তায় বন্দিরা তাদের আত্বীয়দের সাথে কথা বলা বা তাদের মুখ দেখতে পারলে বন্দিদের আচরণের পরিবর্তন হবে এবং কারাগারগুলো প্রকৃত সংশোধনাগার হওয়ার পথে একধাপ এগিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর এ উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়ন হলে দেশ থেকে অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে। সূত্র: সমকাল