রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকী

রাবি শিক্ষক ড. রেজাউল করিম হত্যার রায় ৮ মে

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের(রাবি) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ড. এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যা মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এই মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য আগামী ৮ মে দিন ধার্য করেছেন আদালত।

আজ বুধবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক শিরীন কবিতা আখতার যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার জন্য ওইদিন ধার্য করেছেন।

রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) অ্যাডভোকেট এন্তাজুল হক বাবু দুপুরে গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

অ্যাড. এন্তাজুল হক বাবু জানান, মামলার সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে সোমবার (৯ এপ্রিল) থেকে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়। বুধবার যুক্তিতর্ক শেষ হলে আদালত রায় ঘোষণার জন্য আগামী ৮ মে দিন ধার্য করেন।

তিনি জানান, এ মামলায় মোট ৩২ জন সাক্ষী ছিলেন। তবে আদালত ২৬ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর থেকে।

এর আগে ২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল সকালে রাজশাহীর শালবাগান এলাকায় নিজের বাড়ি থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে কুপিয়ে ও গলাকেটে হত্যা করা হয় রাবির ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে।

তিনি ‘কোমলগান্ধার’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। ’সুন্দরম’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনেরও উপদেষ্টা ছিলেন। এছাড়া অধ্যাপক রেজাউল করিম ভালো সেতার বাদক ছিলেন। তিনি একটি গানের স্কুল প্রতিষ্ঠারও চেষ্টা করছিলেন।

চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার এরপর ২০১৭ সালের ৬ নভেম্বর আটজনকে আসামি করে তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজশাহীর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক রেজাউস সাদিক আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

ড. রেজাউল করিম হত্যা মামলার অভিযুক্ত ৮ আসামির মধ্যে খায়রুল ইসলাম বাঁধন, নজরুল ইসলাম ওরফে হাসান ওরফে বাইক হাসান ও তারেক হাসান ওরফে নিলু ওরফে ওসমান এরই মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন।

অভিযুক্ত অন্যরা হলেন বগুড়ার শিবগঞ্জের মাসকাওয়াত হাসান ওরফে আব্দুল্লাহ ওরফে সাকিব, নীলফামারীর মিয়াপাড়ার রহমত উল্লাহ, রাজশাহীর নারিকেলবাড়িয়া এলাকার আবদুস সাত্তার ও তার ছেলে রিপন আলী, রাবির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম। হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী শরিফুল ইসলাম এখনও পলাতক। আবদুস সাত্তার জামিনেরয়েছেন। আর বাকি আসামিরা কারাগারে রয়েছেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এন্তাজুল হক বাবু আরও বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জীবিত এবং মৃত আসামিদের সম্পৃক্ততা রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে পেরেছেন। তাই রায়ে জীবিত আসামিদের সবার সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলে আশা করছেন তিনি।

তবে এ মামলার আসামি জেএমবির শরিফুল এখনও গ্রেফতার না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন নিহত শিক্ষক রেজাউল করিমের মেয়ে রিজওয়ানা হাসিন শতভি।

তিনি বলেন, শরিফুল তার বাবাকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী। কিন্তু তিনি এখনও গ্রেফতার হয়নি। গ্রেফতার না হওয়ায় তাদের খুব কষ্ট দেয়। তারা শরিফুলের বিচারই আগে দেখতে চান।

শরিফুল অধ্যাপক রেজাউলের ছাত্র ছিল। তার গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায়। অধ্যাপক রেজাউল করিমের গ্রামের বাড়িও বাগমারায়। তাই তাদের মধ্যে বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল। এই হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই শরিফুল পলাতক রয়েছেন।

তবে রাবি শিক্ষক ড. রেজাউল করিম হত্যার পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আটক এক আইএস জঙ্গির সঙ্গে শরিফুলের সম্পৃক্ততা পেয়েছেন বলে জানিয়েছিল ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)। তাই শরিফুল এখনও ভারতেই আত্মগোপন করে আছেনে বলে ধারণা করছে রাজশাহীর পুলিশ।

শরিফুলকে ধরিয়ে দিতে রাজশাহীর পুলিশ (আরএমপি) দুই লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। কিন্তু আজও তার হদিস মেলেনি। তাকে পলাতক দেখিয়েই ৮ মে রায় ঘোষণা করার দিন নির্ধারিত হলো।