আনসার বিদ্রোহ: খালাসপ্রাপ্তদের চাকরিতে পুনর্বহাল নিয়ে রায় ২ আগস্ট
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত

‘দুদককে দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের চিঠি আদালতের ভাবমূর্তি খর্ব করেছে’

 

সাবেক বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন হবে না- দুদককে দেওয়া এমন চিঠি জনগণের কাছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের মর্যাদা ও ভাবমূর্তিকে খর্ব করেছে মর্মে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে হাইকোর্ট।

আদালত বলেছে, এ চিঠি আপিল বিভাগ তাঁর প্রশাসনিক ক্ষমতায় দিয়েছে, এটা কোনোভাবেই সুপ্রিম কোর্টের মতামত হিসেবে বলার সুযোগ নেই

বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এ পর্যবেক্ষণ দেন।

লিখিত রায়ে দেয়া সাত দফা পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেছে, আপিল বিভাগের প্রশাসনিক ক্ষমতায় ওই চিঠি দেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কিছু অপ্রাসঙ্গিক ও নিজ এখতিয়ারবহির্ভূত যুক্তি গ্রহণ করেছে। যা কর্তৃপক্ষকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এ ধরনের চিঠি জনগণের মধ্যে বার্তা দিয়েছে যে সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ফৌজদারি বিচারের ক্ষেত্রে দায়মুক্ত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ছাড়া আর কেউ দায়মুক্তি পেতে পারেন না। তা ছাড়া রাষ্ট্রপতিও শুধু তাঁর পদে বহাল থাকাবস্থায় এ দায়মুক্তি পাবেন।

রায়ে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে সাত বছর ধরে চলা অনুসন্ধান কার্যক্রম সম্পন্ন না করার ব্যর্থতা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়। ভবিষ্যতে সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান বা তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী সংস্থা বা কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই বিশেষ নজর রাখতে হবে, যাতে অকারণে তাঁদের মর্যাদাহানি না ঘটে বা হয়রানির শিকার না হন। কারণ এর সঙ্গে বিচার বিভাগের মর্যাদা ও গৌরব জড়িত।

স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে ২০১০ সালের ১৮ জুলাই বিচারপতি জয়নুল আবেদীনকে নোটিশ দেয় দুদক। ওই নোটিশের প্রেক্ষিতে তিনি দুদকে সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিল করেন। তার দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীর সুষ্ঠু যাচাই/অনুসন্ধানের স্বার্থে রেকর্ডপত্র/কাগজপত্রাদি পর্যালোচনার জন্য গত বছরের ২ মার্চ রেকর্ডপত্র চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে চিঠি দেয় দুদক। তখন সুপ্রিম কোর্ট থেকে চিঠি দিয়ে দুদককে বলা হয়েছিল, সর্বোচ্চ আদালতের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির বিরুদ্ধে দুদক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তার দেওয়া রায়সমূহ প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং জনমনে বিভ্রান্তির উদ্রেক হবে। ফলে তার বিরুদ্ধে কমিশনের কোনরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন হবে না। এই চিঠি কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না-মর্মে রুল জারি করে হাইকোর্ট। ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে গত বছরের ১৪ নভেম্বর হাইকোর্ট এ রায় দেয়। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়বসাইটে পূর্ণাঙ্গ এ রায় প্রকাশিত হয়েছে।