আদালতের নির্দেশে ব্যানার টাঙিয়ে ক্ষমা চাইলেন আ.লীগ নেতা

 

আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় হিন্দুধর্মাবলম্বীদের শতবর্ষী শ্মশানের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টার ঘটনায় স্থানীয় জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুল হক।

গত রোববার উচ্চ আদালতে সশরীরে হাজির হলে আজিজুল হককে ভর্ৎসনা করেন বিচারক। সেই সঙ্গে এই অপকর্মের জন্য স্থানীয় জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে নির্দেশ দেন। নির্দেশ অনুযায়ী, গতকাল বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চেয়েছেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।

প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকেলে আজিজুল হক শ্মশান এলাকায় যান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি রাম নারায়ণ কানু, সাধারণ সম্পাদক শিশির সাহা, বানাইল বারোয়ারি কেন্দ্রীয় শিবমন্দির এবং শ্মশান সংরক্ষণ ও উন্নয়ন কমিটির সভাপতি শ্রীকৃষ্ণ মোহন্ত, সাধারণ সম্পাদক দুলাল চন্দ্র সরকার, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের উপজেলা সভাপতি প্রহল্লাদ চন্দ্র সরকার প্রমুখ। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাসহ বিপুলসংখ্যক সাধারণ উৎসুক মানুষের সমাগম ঘটে। সেখানে কৃতকর্মের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে আওয়ামী লীগের নেতা আজিজুল হক বলেন, ‘শ্মশান দখল নিয়ে শুরু থেকেই সংবাদপত্রে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করা হয়। কারণ, জায়গাটি আমি কিনেছিলাম। পরে জানতে পারি, এটি শ্মশানের। তখন চুপ ছিলাম। যা হয়েছে ভুল হয়েছে। এই জায়গা আমার নয়। এখন থেকে এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন যা করার করবেন। আমি তাঁদের সহযোগিতা করব।’

শিবগঞ্জ উপজেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি রাম নারায়ণ কানু বলেন, ‘আজিজুল হক পুরো ঘটনা ব্যাখ্যা করে শত শত মানুষের সামনে ভুল স্বীকার করেছেন। শ্মশানের এই জায়গায় আমরা কোনো কিছু করলে তিনি সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।’

উপজেলা কেন্দ্রীয় শিবমন্দির এবং শ্মশান সংরক্ষণ ও উন্নয়ন কমিটির সূত্রে জানা গেছে, আজিজুল হকের শ্মশান দখল করা নিয়ে ২০১৬ সালের ২৬ জুন একটি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) একটি রিট করে। একই বছরের ৩১ জুলাই উচ্চ আদালত রুল জারি করেন এবং স্থাপনার নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি বিষয়টি তদন্ত করতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন। জেলা প্রশাসক বিষয়টি তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ২০১৬ সালে জারি করা রুলের ওপর শুনানি শুরু হয় উচ্চ আদালতে।

হিন্দু নেতাদের সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের নেতা আজিজুল হক গত ২০ মে বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চে ওই ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে হাজির হন।

শুনানি শেষে আদেশে আদালত বলেন, স্থানীয় জনগণের কাছে এই অপকর্মের জন্য শ্মশানে ব্যানার লাগিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। ব্যানারে লিখতে হবে, ‘শ্মশানের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা করে আমি ভুল করেছি। এ ধরনের কাজ আর কোনো দিন করব না।’

আদেশে আরও বলা হয়, ব্যানার টানিয়ে ক্ষমা চাওয়ার অনুষ্ঠানে ওই শতবর্ষী শ্মশানের কমিটিকে উপস্থিত রাখতে হবে। এর ছবি আগামী রোববারের মধ্যে হাইকোর্টে উপস্থাপন করতে হবে। রোববার দখলচেষ্টা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে আদালতে লিখিতভাবে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলে বিষয়টি আদালত দেখবেন। অস্বীকার করলে ওই অভিযোগ তদন্ত ছাড়াই আজিজুল হকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশ দেওয়া হবে।