কণ্ঠশিল্পী আসিফকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ

তথ্যপ্রযুক্তি আইনে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবরকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন এবং জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আজ বুধবার (৬ জুন) দুপুরে ঢাকা মহানগর হাকিম কেশব রায় চৌধুরী এ নির্দেশ দেন।

এর আগে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রলয় রায় (উপ পুলিশ পরিদর্শক সিআইডি ঢাকা) পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আসিফ আকবরকে আদালতে হাজির করেন। পরে আদালত রিমান্ড নামঞ্জুর করেন।

আবেদনে বলা হয়েছিল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মামলার বাদীকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন আসামি আসিফ। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে অশ্লীল বক্তব্য প্রকাশ করে এবং মিথ্যা কথা বলে ফেসবুক লাইভে এসে লাখ লাখ মানুষকে শুনিয়ে বাদীর বিরুদ্ধে অবমাননাকর, অশালীন ও মিথ্যা-বানোয়াট বক্তব্য দেন।

আবেদনে আরও বলা হয়েছিল, মামলার ঘটনার সঙ্গে আরও যারা জড়িত, তাদের পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা এবং মূল ঘটনা উন্মোচন ও মূল হোতাসহ অন্যদের তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। তাই আসামিকে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করছে পুলিশ।

উল্লেখ্য তথ্যপ্রযুক্তি আইনে দায়ের করা একটি মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর। মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি টিম তাকে এফডিসি সংলগ্ন তার স্টুডিও থেকে গ্রেফতার করে।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএস) মোল্যা নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী শফিক তুহিনের দায়ের করা তেজগাঁও থানার একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলা নম্বর ১৪। সোমবার সন্ধ্যায় (৪ জুন) দায়ের করা এ মামলায় আসিফ আকবর ছাড়াও আরও ৪/৫ জন অজ্ঞাত আসামি রয়েছে বলেও জানায় পুলিশ।

মঙ্গলবার দিবাগত রাতে তল্লাশির সময় আসিফ আকবরের স্টুডিওতে এক বোতল টাকিলা আর এক কেস হানিকেন বিয়ার পাওয়া যায়। তবে তিনি তার মদ্যপানের লাইসেন্স আছে বলে জানান। তিনি কর্মকর্তাদের এ-সংক্রান্ত লাইসেন্সের একটি কপিও দেখান। সিআইডির কর্মকর্তারা লাইসেন্সটি যাচাই করার জন্য একটি কপি নিয়ে গেছেন।

শফিক তুহিন এজাহারে অভিযোগ করেছেন, গত ১ জুন আনুমানিক রাত ৯টার দিকে চ্যানেল ২৪-এর সার্চ লাইট নামের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, আসিফ আকবর তার অনুমতি ছাড়াই তার সংগীতকর্মসহ অন্যান্য গীতিকার, সুরকার ও শিল্পীদের ৬১৭টি গান সবার অজান্তে বিক্রি করেছে। পরে তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, আসিফ আকবর আর্ব এন্টারটেইনমেন্টের চেয়ারম্যান হিসেবে অন মোবাইল প্রা. লি. কনটেন্ট প্রোভাইডার, নেক্সনেট লি. গাক মিডিয়া বাংলাদেশ লি. ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গানগুলো ডিজিটাল রূপান্তরের মাধ্যমে ট্রু-টিউন, ওয়াপ-২, রিংটোন, পিআরবিটি, ফুলট্রেক, ওয়াল পেপার, অ্যানিমেশন, থ্রি-জি কন্টেন্ট ইত্যাদি হিসেবে বাণিজ্যিক ব্যবহার করে অসাধুভাবে ও প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করেছে।

এজাহারে তিনি আরও উল্লেখ করেন, পরে ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি গত ২ জুন রাত ২টা ২২ মিনিটে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে অনুমোদন ছাড়া গান বিক্রির এই ঘটনা উল্লেখ করে একটি পোস্ট দেন। তার ওই পোস্টের নিচে আসিফ আকবর নিজের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে অশালীন মন্তব্য ও হুমকি দেন। পরের দিন রাত ৯ টা ৫৯ মিনিটে আসিফ আকবর তার প্রায় ৩২ লাখ লাইকার সমৃদ্ধ ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে লাইভে আসেন। ৫৪ মিনিট ৩৪ সেকেন্ড লাইভ ভিডিওর ২২ মিনিট থেকে তার বিরুদ্ধে অবমাননাকর, অশালীন ও মিথ্যা-বানোয়াট বক্তব্য দেন। ভিডিওতে আসিফ আকবর তাকে (শফিক তুহিন) শায়েস্তা করবেন এ কথা বলার পাশাপাশি ভক্তদের উদ্দেশে বলেন, তাকে যেখানেই পাবেন সেখানেই প্রতিহত করবেন। এই নির্দেশনা পেয়ে আসিফ আকবরের ভক্তরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে হত্যার হুমকি দেয়। আসিফ আকবরের এই বক্তব্য লাখ লাখ মানুষ দেখেছে। তিনি উসকানি দিয়েছেন। এতে তার (শফিক তুহিন) মানহানি হয়েছে।

এজাহারে শফিক তুহিন আরও উল্লেখ করেন, বিষয়টি সংগীতাঙ্গনের সুপরিচিত শিল্পী, সুরকার ও গীতিকার প্রীতম আহমেদসহ অনেকেই জানেন।