নতুন আইনজীবী হলেন ৫৩২৯ জন
বার এক্সাম (প্রতীকী ছবি)

একজন শিক্ষানবীশ আইনজীবীর আক্ষেপ…

মেহভিশ রশিদ:

বাংলাদেশে আর কোন পেশায় এমন আছে কিনা আমার জানা নেই! একজন আইনের ছাত্রকে আইন বিষয়ে ন্যূনতম স্নাতক পাশ করেই বার কাউন্সিলের অধীনে অন্তত ছয় মাসের অধিক শিক্ষানবীশ কাল শেষ করার পর বার কাউন্সিলের তিন ধাপের (নৈব্যক্তিক, লিখিত এবং মৌখিক) পরীক্ষার মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়ে বার কাউন্সিল এনরোল্ড বা সনদপ্রাপ্ত আইনজীবী হতে হয়। এটা ঠিক আছে মানলাম কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যারা পাস কোর্সভিত্তিক আইনে পাশ করেন, তারাও এই সমমানের পরীক্ষায় বসেন কি করে? যারা এত কষ্ট করে আইনে এত সময় নিয়ে স্নাতক-স্নাতকোত্তর করে আসছেন, তাদের প্রতি কি এটা ন্যায় হচ্ছে?

এ দেশে যেকোনো বয়সে এসেই অন্য প্রফেশনে ব্যর্থ হয়ে পাস কোর্সভিত্তিক ল’ পড়া শুরু করতে পারেন। এর নিদিষ্ট কোনো বিধান নেই। তাই এ পেশাতে যারা নতুন আসতে চাইছেন, তাদের আজ করুণ দশা। প্রশ্ন হচ্ছে যেকোনো বয়সে এসে এমন স্বল্পমেয়াদী পাস কোর্সে পড়ে সমান যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারে আর কোনো পেশা আমাদের দেশে আছে কি?

অন্তত যারা আইনে স্নাতক-স্নাতকোত্তর পাশ করে বার কাউন্সিলে সনদের জন্যে আবেদন করবেন, তাদের জন্যে আলাদা করে ভাবা যেত। তাহলে তাদের প্রতি সুবিচার হত। দরকার হলে রেজাল্টও নির্ধারণ করে দেয়া যেতে পারে স্নাতক- স্নাতকোত্তর পর্যায়ে (যেমন -ন্যূনতম সিজিপি ৩.০০ অথবা ৩.৫০) ভালো ফলাফল থাকলে, তাকে এত দীর্ঘমেয়াদি পরীক্ষায় বসে সময় নষ্ট করতে হবে না অথবা লিখিত বা ভাইবা দিলেই হবে।

বার কাউন্সিলের বর্তমানে বিদ্যমান পরীক্ষা পদ্ধতি খুবই দীর্ঘমেয়াদি। বর্তমান নিয়মানুযায়ী যদি কেউ বার কাউন্সিলের অধীন এমসিকিউ (MCQ) পরীক্ষায় পাশ করে লিখিত পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়, তাকে আবার নতুন ভাবে রেজিষ্ট্রেশন করে পরীক্ষায় বসতে হয়। আরও পরিতাপের বিষয় হলো যে, কেউ যদি এমসিকিউ, লিখিত পরীক্ষা পাশ করার পর শুধু ভাইবা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন, তাকে ও পরের বার শুধু এই ভাইবা পরীক্ষায় বসার জন্যে অপেক্ষা করে থাকতে হয় বাধ্য হয়েই। যা দীর্ঘমেয়াদি ও অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ (আড়াই থেকে তিনবছর)। অথচ কিছু সময়ের ব্যবধানে বিশেষভাবে নিয়ম করে ভাইভা নেয়ার ব্যবস্থা করলেই অনেকে এর সুফল ভোগ করত, জীবনের মূল্যবান সময়টা বেঁচে যেত।

উল্লেখ্যযোগ্য যে, যারা দেশে বসে ইন্টারন্যাশনাল ডিগ্রীলাভ করেন (যেমন ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন এর অধীন ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রাম বা ইংলিশ মিডিয়াম) তাদের দেখেছি জুন-জুলাই এর পরীক্ষাতে কোনো বিষয়ে অকৃতকার্য হলেও আবার একই বছরের অক্টোবর-নভেম্বর এ পরীক্ষায় বসতে পারেন। এতে তাদের সময়টা তেমন নষ্ট হয় না। বর্তমানে প্রতিবছর পরীক্ষাই হয় না বার কাউন্সিলের, ফলে একজন আইনের ডিগ্রিধারীকে কর্মক্ষেত্রে অনেকটা পিছিয়ে দেয়া হয়। বর্তমানের সিস্টেমটা নতুনদের হতাশ করতে যথেষ্ট। বর্তমান বাস্তবিক অবস্হাটা বর্নণাতীত। কেবল ভুক্তভোগীরাই জানেন।

বর্তমান সিস্টেমটা পরিবর্তনের জন্য এ প্রফেশনের কর্তাব্যক্তিদের সুদৃষ্টি আশা করছি। এদিকটায় একটু নজর দেয়া এখন সময়ের দাবি। আমি গুছিয়ে সবকিছু এখানে লিখতে পারিনি। ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। তবে এখানে বর্তমান বাস্তব চিত্রটার কথা বলতে চেষ্টা করেছি। আমার ভুল হলে আপনাদের লজিক দিয়ে যৌক্তিকভাবে সমালোচনা করুন এবং একমত হলে বার কাউন্সিলের কর্তৃপক্ষের নজরে আসার জন্য চেষ্টা করুন।

লেখক: শিক্ষানবীশ আইনজীবী, ঢাকা জজ কোর্ট