২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়: আদালত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়কে কেন্দ্র করে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে স্থাপিত ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল-১ এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আদালতের আশেপাশের সব রাস্তায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নাজিম উদ্দিন রোড এলাকার প্রবেশপথগুলোতে ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশের সতর্ক প্রহরায় রাখা হয়েছে। তালিকাভুক্ত সাংবাদিক ছাড়া কাউকে আদালতের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

একদিন আগে থেকেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হলেও আজ বুধবার (১০ অক্টোবর) সকাল থেকে তা আরও জোরদার করতে দেখা গেছে। পুরান ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, কারাগার সংলগ্ন এলাকার মোড়ে মোড়ে পুলিশ সদস্যরা অবস্থান করছেন। কারাগারের সামনের সড়কে বসানো হয়েছে ব্যারিকেড। সাদা পোশাকে পুলিশি তৎপরতার পাশাপাশি র‍্যঅব টহল দিচ্ছে। দাঙ্গা পুলিশ রায়ট কার, জলকামানও মোতায়েন করা হবে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে। পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াট ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

আদালত ভবনের আশেপাশে বাড়তি পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে। এ এলাকায় বহিরাগতদের প্রবেশে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। এছাড়া চাঁনখারপুল থেকে শুরু করে আশপাশের সড়কগুলোয় রাস্তা দিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জনসাধারণের প্রবেশে রয়েছে কড়াকড়ি, সন্দেহ হলেই পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তল্লাশি শেষে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া, শাহবাগ, ফার্মগেট, বকশিবাজার এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানীর পাশাপাশি সারাদেশে বিশেষ করে মামলায় রায় হতে যাওয়া রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিজস্ব এলাকায় নাশকতা ঠেকাতে বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। বাড়ানো হয়েছে টহল। এছাড়া ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার বিভিন্ন সড়কে র‌্যাব ও পুলিশের বাড়তি টহল গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে।

আদালত এলাকায় তল্লাশি চালানো হচ্ছেবংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘চারপাশে আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা সন্দেহভাজনদের তল্লাশি করছি। রায়কে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী নাশকতা হতে পারে এমন কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও তাৎক্ষণিক বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একইসঙ্গে রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কেউ যেন অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য দেশজুড়ে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পোশাকধারী পুলিশের সঙ্গে সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যদ মোতায়েন করা হয়েছে।

এই প্রসঙ্গে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়কে কেন্দ্র করে নিরাপত্তাজনিত কোনও হুমকি নেই।’ তবু কোনও স্বার্থান্বেষী মহল সহিংসতার চেষ্টা করলে তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে বলে জানান তিনি।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘নগরবাসীর জানমালের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে। আমাদের নজরদারি রয়েছে। এ রায়কে কেন্দ্র করে সহিংসতার চেষ্টা হলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে। কোনও ধরনের অপতৎপরতা বরদাশত করা হবে না।’

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গ্রেনেড হামলা মামলার আসামিদের নিয়ে এরইমধ্যে কাশিমপুর কারাগার থেকে আদালতের পথে রওনা দিয়েছে পুলিশ। যথাসময়ে আসামিদের এজলাসে হাজির করা হবে। এরপর বিচারক আদালতে এসে রায় পড়ার কার্যক্রম শুরু করবেন।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরদিন ২২ আগস্ট দণ্ডবিধির ১২০/বি, ৩২৪, ৩২৬, ৩০৭, ৩০২, ২০১, ১১৮, ১১৯, ২১২, ৩৩০, ২১৮, ১০৯ ও ৩৪ ধারায় মতিঝিল থানার এসআই শরীফ ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা (নং-৯৭) দায়ের করেন। ২০০৮ সালের ৯ জুন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে অভিযুক্ত করে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে সিএমএম আদালতে দু’টি অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন সিআইডির সিনিয়র এএসপি ফজলুল কবির। ওই বছরই মামলা দু’টির কার্যক্রম দ্রুত বিচার আদালত-১-এ স্থানান্তর করা হয়। এ আদালতে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের ২৯/১১ (হত্যা) ও ৩০/১১ (বিস্ফোরক) মামলা দু’টির বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।