তালাক

কন্যাসন্তান হওয়ায় স্ত্রীকে তালাক, মেয়েকে বিক্রি!

পরপর দুটি কন্যাসন্তান হওয়ায় স্ত্রীকে প্রায়ই নির্যাতন করতেন তিনি। তৃতীয় সন্তানও মেয়ে হলে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন স্বামী। স্থানীয় এক যুবলীগ নেতার বাড়িতে সালিস বৈঠক করে স্ত্রীকে তালাক দেন তিনি। এর পরপরই সদ্য ভূমিষ্ঠ কন্যাসন্তানকে ওই বাবা বিক্রি করে দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার খলিশাকুন্ডি গ্রামে গত শুক্রবার। গতকাল মঙ্গলবার বিষয়টি জানাজানি হয়।

খলিশাকুন্ডির পাইকপাড়া গ্রামের হজরত আলীর ছেলে রবিউল ইসলামের সঙ্গে একই গ্রামের রেজাউল ইসলামের মেয়ে জেসমিন আরার বিয়ে হয় প্রায় ১৫ বছর আগে। রবিউল বর্গাচাষী। বিয়ের পাঁচ বছর পর তাঁদের একটি মেয়ে হয়। এর ছয় বছর পর আরও একটি কন্যাসন্তান হয়। পরপর দুটি কন্যাসন্তান হওয়ায় রবিউল স্ত্রীকে প্রায়ই নির্যাতন করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ৯ নভেম্বর এই দম্পতির আরও একটি কন্যাসন্তান হয়। এ নিয়ে সাংসারিক অশান্তি চরমে উঠলে গত শুক্রবার বিকেলে উপজেলা যুবলীগের একাংশের সহসভাপতি শহিদুল ইসলামের বাড়িতে সালিস হয়। বৈঠক শেষে জেসমিনকে তালাক দিয়ে ২ লাখ টাকা দেন রবিউল। এরপর নবজাতক মেয়েকে নিয়ে চলে যান তিনি। অভিযোগ উঠেছে, একই এলাকার আয়ুব আলীর কাছে রবিউল তাঁর নবজাতক কন্যাসন্তানকে বিক্রি করে দিয়েছেন। তবে আয়ুবের বাড়ি গিয়ে বাচ্চাটিকে পাওয়া যায়নি।

জেসমিন গতকাল গণমাধ্যমকে বলেন, পরপর দুই মেয়ের জন্মের পর থেকেই রবিউল তাঁকে মারধর করতেন। এর মধ্যে গত মার্চে স্থানীয় আরেক গৃহবধূর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন রবিউল। তাঁকে বিয়েও করেন। তবে ওই নারী চার মাস পর রবিউলকে ছেড়ে চলে যান।

জেসমিন অভিযোগ করেন, তৃতীয় মেয়ের জন্মের পর রবিউল তাকে নিজের সন্তান নয় বলে দাবি করেন। কিন্তু তালাকের পর সেই সন্তানকেই নিয়ে যান তিনি। জেসমিন বলেন, ‘স্বামী জোর করে আমার কোল থেকে আমার বাচ্চাকে কেড়ে নিল। শুনছি, তারে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিছে। আমি আমার মেয়েরে ফেরত চাই।’

জেসমিনের বাবা রেজাউল ইসলামও অভিযোগ করেন, তাঁর তৃতীয় নাতনিকে বিক্রি করে দিয়েছেন রবিউল। এ সময় তাঁর বাড়িতে দৌলতপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজগার আলী উপস্থিত ছিলেন। তবে তিনি এ ব্যাপারে বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

গতকাল বিকেলে রবিউলের বাড়ি গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর মা রুশিয়া খাতুন বলেন, পরপর তিন সন্তানই মেয়ে হওয়ায় অসন্তুষ্ট ছিলেন রবিউল। জেসমিনকে প্রায়ই মারধর করতেন। তৃতীয় নাতনি কোথায় আছে জানতে চাইলে রুশিয়া খাতুন বলেন, পাশের গ্রামে তার ফুফু রিনা খাতুনের (রুশিয়ার মেয়ে) কাছে আছে। তবে রিনার মুঠোফোন নম্বর দিতে রাজি হননি তিনি।

যুবলীগের নেতা শহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, উভয় পরিবারের মধ্যে মনোমালিন্যের কারণে সালিস বৈঠক করে মীমাংসা করে দেওয়া হয়েছে। তবে কন্যাসন্তান বিক্রির অভিযোগ সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না।

এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, কন্যাসন্তান বিক্রির অভিযোগকে কেন্দ্র করে রবিউল, জেসমিন ও আয়ুবের পরিবারকে ডেকেছে দৌলতপুর থানার পুলিশ। প্রথম আলো