চট্টগ্রামে লালদীঘি ময়দানে নিহতদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধ

চট্টগ্রামে গণহত্যার মামলা নিষ্পত্তি হয়নি ৩১ বছরেও

দীর্ঘ তিন দশক আগে চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে গুলি চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা মামলা নিষ্পত্তি হয়নি ৩১ বছরেও, মারা গেছেন চারজন বাদী। সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক না থাকায় মামলার কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।

আজ বৃহস্পতিবার (২৪ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম গণহত্যা দিবস। ১৯৮৮ সালের এই দিনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা নগরের লালদীঘি ময়দানে জনসভায় যোগ দিতে এসেছিলেন।

স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পুলিশ বাহিনী সেই জনসভায় জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা করে। আহত হন শত শত মানুষ। সেদিন শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলি চালালেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তিনি।

১৯৯২ সালের ৫ মার্চ আইনজীবী শহীদুল হুদা বাদী হয়ে চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে তৎকালীন পুলিশ কমিশনার কাজী রকিবুল হুদা এবং কোতোয়ালী জোনের পুলিশ পরিদর্শক (পিআই) গোবিন্দ চন্দ্র মন্ডলসহ মোট ৪৬ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

মামলার বাদী শহীদুল হুদা, প্রধান আসামি সিএমপি’র তৎকালীন পুলিশ কমিশনার রকিবুল হুদা, আসামি পুলিশ কনস্টেবল বশির উদ্দিন এবং সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা এএসপি আব্দুল কাদের মারা গেছেন।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করা হয়। সিআইডির চার্জশিটভুক্ত আট আসামি সিএমপি তৎকালীন কমিশনার মির্জা রকিবুল হুদা, কোতয়ালী থানার সাবেক টহল পরিদর্শক (পিআই) গোবিন্দ চন্দ্র মন্ডল এবং ৬ কনস্টেবল প্রদীপ বড়ুয়া, মোস্তাফিজুর রহমান, মমতাজ উদ্দিন, শাহ আবদুল্লাহ, আবদুস সালাম এবং বশির উদ্দিন। এদের মধ্যে গোবিন্দ চন্দ্র ঘটনার শুরু থেকেই পলাতক।

আদালত সূত্রে জানা যায়, এ মামলায় ১৬৮ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এরমধ্যে ৩১ বছরে ৪৬ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা হলেন, প্রবীণ সাংবাদিক অঞ্জন কুমার সেন, নিহত অজিত সরকারের স্ত্রী শেফালী সরকার, সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হিসেবে সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, তোয়াফেল আহমেদ ও মতিয়া চৌধুরীকে সাক্ষ্য দিতে আসতে আদালত থেকে সমন জারি করা হয়েছে।

গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল বলেন, দীর্ঘ ৩১ বছর ধরে এমন একটি আলোচিত মামলা ঝুলে থাকা কোনো মতেই কাম্য নয়। আশা করি দ্রুত বিচার কাজ শেষ হবে।

গণহত্যা মামলাটি চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে বিচারাধীন। তবে বিচারকশূন্য থাকায় বন্ধ রয়েছে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণসহ বিচারিক কার্যক্রম।

এদিকে আজ বৃহস্পতিবার সকালে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে গণহত্যা দিবস উপলক্ষে শহীদদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের পক্ষ থেকে আদালত চত্বরের শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করা হয়।

নগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণকালে উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা শফর আলী, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আব্দুচ ছালাম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী প্রমুখ।