গণতন্ত্র ও সংবাদ মাধ্যমকে হাত ধরাধরি করে চলতে হয় : প্রধান বিচারপতি

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক, স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশে সংবাদ মাধ্যমের অনুপস্থিতির কথা ভাবাই যায় না। কেননা, একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র কাঠামোয় গণতন্ত্র ও সংবাদ মাধ্যমকে পরস্পর হাত ধরাধরি করে চলতে হয়। সঙ্গত কারণেই সাংবাদিকতাকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়।’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে ‘আইনে তারুণ্য’ নামক সংকলন গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে মঙ্গলবার (৫ ফেব্রুয়ারি) প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সমাজের অসঙ্গতি দূরীকরণে এবং সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে সাংবাদিকতা তথা গণমাধ্যমের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

প্রধান বিচারপতি বলেন, মানুষের জানার অধিকার এবং গণমাধ্যমের তথ্য জানানোর গভীর দায়বদ্ধতার প্রশ্নে সামাজিক অঙ্গীকার নিয়ে সাংবাদিকরা প্রতিনিয়ত কাজ করছেন।

তিনি বলেন, একজন আদর্শ মানুষের সাধারণ গুণ ও যোগ্যতার পাশাপাশি একজন আদর্শ সাংবাদিকের দরকার বিশেষ মাত্রার আরো কিছু প্রজ্ঞা, দক্ষতা ও গুণাবলী। একজন দক্ষ সাংবাদিক একটি সংবাদ ঘটনার বয়ানকারী এবং একজন দক্ষ যোগাযোগকারী। সমাজ সভ্যতার অগ্রগতিতে, জাতীয় জীবনের কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে, মানবতা ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং মানবাধিকার সুরক্ষার শাণিত চেতনা একজন আদর্শ সাংবাদিকদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, আইন-আদালত, আইন শৃঙ্খলা, মানবাধিকার এবং আইনি সেবা সংক্রান্ত তথ্য আইনে সাংবাদিকতার মাধ্যমে উঠে আসে। সাংবাদিকরা সাধারণ জনগণ তথা বিচারপ্রার্থী জনগণের আশা-আকাঙ্খা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি এবং লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন করার গুরু দায়িত্ব পালন করে। ফলে আইনাঙ্গনের সঙ্গে সাংবাদিকতার সম্পর্ক অত্যন্ত নির্বিষ্ট।

তিনি আরও বলেন, ‘অনুসন্ধিৎসু সাংবাদিকতার মাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করে বিদ্যমান সমস্যা এবং সমাধানের পথ দেখিয়ে প্রতিটি উন্নয়নমূলক কাজে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে- এটাই সবার প্রত্যাশা। আমি বিশ্বাস করি সাংবাদিকরা মুক্তিযুদ্ধ ও দেশপ্রেমের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশ ও জাতি গঠনে সচেষ্ট থাকবে’ বলে উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আইনে তারুণ্য’ নামক সংকলনে উদীয়মান তরুণ আইনজীবীদের জীবনের ছোট ছোট গল্প এবং আইন পেশায় তাদের বিচরণের বাস্তব গল্পগুলো সাবলীল ভাষায় ফুটে উঠেছে। অনেক তরুণ আইনজীবী অনেক কষ্ট সংগ্রাম করে সফলতার বর্তমান ধাপে উপনীত হয়েছেন। তাদের প্রতি রইল আমার আন্তরিক অভিনন্দন। তাদের এ বাস্তব গল্পগুলো নবীন আইনজীবীদের জন্য প্রেরণার উৎস এবং সঠিক পথের নির্দেশক হবে বলে আমি মনে করি। প্রতিটি গল্পই আইন পেশা সম্পর্কে পাঠককে আকৃষ্ট করবে। নতুন প্রজন্ম উৎসাহ ও প্রেরণোর মধ্য দিয়ে আইনাঙ্গনে পদচারণা করবে। তরুণ আইনজীবীদের স্বপ্ন এবং প্রেরণা অসহায় বিচারপ্রার্থীদের ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় ভূমিকা রাখবে।’

প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘আইন অঙ্গনে অনেক প্রথিতযশা ব্যক্তিবর্গ কাজ করেছেন এবং এখনও করছেন। তাদের অনেকের বড় হয়ে উঠার গল্প হয়ত আমরা অনেকেই জানি না। প্রথিতযশা ব্যক্তিদের নিয়ে এরূপ জীবনীভিত্তিক কোনো সংকলন না থাকার কারণে এমনটি হয়েছে। নবীন আইনজীবী ছাড়াও আইনপেশা, মানবাধিকার, শিশু অধিকার, নারী অধিকারসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যারা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন সেসব আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মীদের নিয়ে জীবনীভিত্তিক সংকলন প্রকাশ করলে আইনের শিক্ষার্থী, নবীন আইনজীবী, সাধারণ পাঠক সবাই অত্যন্ত উপকৃত হবে। এ ধরনের সৃজনশীল কাজে এগিয়ে আসার জন্য প্রধান বিচারপতি সাংবাদিক সমাজের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।

সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি নাইমা হায়দার, রাইজিংবিডি ডটকম’র প্রকাশক এস এম জাহিদ হাসান, ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি সাঈদ আহমেদ খান, ববি হাজ্জাজ, ‘আইনে তারুণ্য’ মোড়ক উন্মোচন উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু ও সদস্য সচিব কাজী জয়নুল আবেদীন, ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সাবেক সভাপতি এম বদি-উজ-জামান ও আশুতোষ সরকার প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম’র সদস্য ও রাইজিংবিডি ডটকমের সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদক মেহেদী হাসান ডালিম’র ‘আইনে তারুণ্য’ গ্রন্থের লেখক।