অ্যাডভোকেট চঞ্চল কুমার বিশ্বাস

আইনজীবীদেরও প্রশিক্ষণের আওতাভুক্ত করা উচিত: অ্যাড. চঞ্চল

তরুণ আইনজীবীদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না থাকাসহ আইনজীবীদের নানাবিধ সমস্যা, সমাজের কাছে আইনজীবীদের দায়বদ্ধতা ও এ সকল সমস্যা নিরসন প্রসঙ্গে কথা বলতে ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমের মুখোমুখি হয়েছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০১৯-২০ আসন্ন নির্বাচনে সদস্য পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট চঞ্চল কুমার বিশ্বাস। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমের বিশেষ প্রতিনিধি প্রিন্স মাহামুদ আজিম

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত বাগেরহাট জেলায় শরণখোলা থানায় তরুণ এই আইনজীবী জন্মগ্রহণ করেন। সেখানে তিনি মাধ্যমিক পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এল.এল.বি শেষ করেন এবং ২০০৩ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এল.এল.এম সম্পন্ন করেন। ২০০৫ সালে তিনি বার কাউন্সিলরের সনদ গ্রহণ করেন। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সনদ নেন। এর সময়ের ভিতর তিনি ঢাকা বারে সিভিল আইনজীবী হিসাবে নিয়মিত প্র্যাকটিস করেন। তার কর্ম জীবনে তিনি প্রয়াত বিচারপতি জে এন দেব চৌধুরীর জুনিয়র হিসাবে কাজ করেছেন। তরুণ এই আইনজীবী ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।

যেহেতু তিনি আসন্ন সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে সদস্য পদপ্রার্থী সেহেতু নির্বাচিত হলে আইনজীবী ও সমিতির কল্যাণে তার পরিকল্পনার কি সে প্রশ্নে তিনি বলেন, মূলত সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হচ্ছেন সমিতির সভাপতি-সম্পাদক। বারের নিয়মিত কিছু সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম সমস্যা হচ্ছে কিউবিকেলের (আইনজীবীদের বসার জায়গা) সমস্যা। আইনজীবীদের সংখ্যার আনুপাতিক হারে কিউবেকেলের বরাদ্দ বাড়ানো উচিত। যেহেতু সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অনেক জায়গা খালি পড়ে আছে সেখানে বার কাউন্সিলরের যে বিশ তলা ভবন নির্মিত হচ্ছে সেরকম একটি ভবন তৈরি করা গেলে আইনজীবীদের আসন কিংবা বসার সমস্যা নিরসন হবে।

নির্বাচিত হলে নবীন আইনজীবীদের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, আদালত প্রাঙ্গণে জুনিয়র আইনজীবীদের সমস্যাগুলো সেইভাবে কেউ দেখে না। মামলা ফাইলিং, তদবিরসহ অনেকক্ষেত্রে জুনিয়রদের নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বাংলাদেশের নিয়ম অনুযায়ী জামিন হলে, অনলাইনে জামিনের কপি যাওয়ার পরও আসামীকে ছাড়া হয়না, যতক্ষণ না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হার্ড কপি হাতে পাচ্ছেন। এক্ষেত্রে আমাদের বিচার ব্যবস্থাকে আরও আধুনিকায়ন করতে হবে। অনলাইনে হাইকোর্টের জামিনের কপি পেলেই যেন আসামীকে জামিনে মুক্তি দিয়ে দেওয়া হয়। এটা আমাদের শক্তভাবে করা উচিত। কেননা এখানে হয়রানির মাত্রাটা খুব বেশী। মামালার আইনজীবী যদি নবীন হন তাহলে তো কথাই নেই।

এছাড়াও বার এ্যাসোসিয়েশনের মূল লক্ষ্য থাকা উচিত কীভাবে আইনজীবীদের একটা সঠিক প্রশিক্ষণের আওতাভুক্ত করা যায়। তরুণ আইনজীবীদের প্রায়োগিক জ্ঞান সমৃদ্ধ করতে দেশ-বিদেশে আইন বিষয়ক সভা-সেমিনারের ব্যবস্থা করা উচিত। যাতে তারা পেশার ক্ষেত্রে আরও বেশী পরিপক্ক হতে পারে। যেমন- জুডিশিয়ারিতে একটা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে, বাহিরে ভ্রমনের ব্যবস্থা আছে। যার কারণে জুডিশিয়ারি থেকে প্রতি বছর বিভিন্ন দেশে যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু আইনজীবীদের সে সুযোগ নেই। অথচ বিচারকদের রায় লিখার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করেন আইনজীবীরা। তাই  শুধু বিচারপতিদের প্রশিক্ষণ দিলে হবেনা। বার এ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আইনজীবীদেরকেও প্রশিক্ষণের আওতাভুক্ত করা উচিত। আইনজীবীরা যদি বিচারকদের সঠিক তথ্য-উপাত্ত না দিতে পারেন তাহলে বিচারব্যবস্থার উন্নয়ন কখনো সম্ভব হবে না।

সমাজের বৃহত্তর স্বার্থে আইনজীবীদের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আইনজীবীরা হচ্ছেন সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ার। সুতরাং সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের সমাজের জন্য অনেক কিছুই করার রয়েছে। কিন্তু সেটা করতে হলে সর্বপ্রথম একটা অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা থাকতে হবে। না হলে সবাই অর্থমুখী হয়ে পড়বে। এছাড়াও প্রতি বছর আমাদের যে পরিমাণ আইনজীবী বের হচ্ছেন সে পরিমাণ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। এই ক্ষেত্রে সিনিয়রদের উচিত জুনিয়রদের সর্ব প্রকার সহযোগিতা করা। আর সেটা না হলে আইনজীবীদের সম্মান হুমকির সম্মুখীন হওয়া সময়ের ব্যাপার। আপিল বিভাগের নিয়ম অনুযায়ী একজন আপিল বিভাগের সিনিয়র আইনজীবীর সাথে কোন জুনিয়র আইনজীবী যদি না থাকে তিনি মামলায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। কিন্তু বাস্তবে অনেকের জুনিয়র আইনজীবী নেই। এ সকল সমস্যা দ্রুত সমাধান করা গেলে আমার বিশ্বাস আইনজীবী সমাজের বৃহত্তর স্বার্থে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারবেন।