সিন্টু বাগুই

যৌনপল্লি থেকে আদালতের বিচারক

যৌনপল্লিতেই বেড়ে উঠা। আর চার-পাঁচটা ছেলে-মেয়ের মত জীবন নয়। সমাজ পরিবার সবার বাঁকা চাহনি সহ্য করতে হয়েছে। তারপরেও দমে যাননি। বলছিলাম সিন্টু বাগুইয়ের কথা। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শেওড়াফুলি স্টেশনের পার্শ্ববর্তী গড়বাগানের বাসিন্দা তিনি। শুধু তা-ই নয়, তিনি একজন ‘মেয়েলি পুরুষ’ বা রূপান্তরকামী।

গত শনিবার (৯ মার্চ) ভারতের শ্রীরামপুরে লোক আদালতের বিচারকের আসনে বসেন ২৭ বছর বয়সি এই রূপান্তরকামী নারী।

বিচারকাজ শেষে তিনি বলেন, যৌনকর্মীর সন্তান এবং রূপান্তরকামী হিসেবে সম্ভবত আমিই প্রথম এই দায়িত্ব পালন করলাম। আত্মবিশ্বাস বাড়ল।

ভারতের গনমাধ্যমের খবরে বলা হয়, গত শনিবার ছিল জাতীয় লোক আদালত। সাধারণত এই আদালতে পুরনো জমে থাকা মামলা, লঘু অপরাধের বিচার এবং মামলার পূর্বাবস্থায় থাকা বিষয়গুলোর নিষ্পত্তি হয় করা হয়। আর বিচারক হন প্রাক্তন বা বর্তমান বিচারক, আইনজীবী এবং সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। ফলে সমাজকর্মী হিসেবে বিচার কার্যের দায়িত্ব পান সিন্টু বাগুই।

হুগলি জেলার চার মহকুমায় ওই লোক আদালত বসেছিল। তার মধ্যে শ্রীরামপুরে বসেছিল আদালতের পাঁচটি বেঞ্চ। তার একটিতেই বিচারক হিসেবে ছিলেন সিন্টু। আর তার সঙ্গে ছিলেন হুগলি জেলা আইনি পরিষেবার সচিব অনির্বাণ রায় ও আইনজীবী অংশুমান চক্রবর্তী।

রূপান্তরকামী নারী সিন্টু জানান, দশ বছর বয়স থেকে তার মধ্যে ‘মেয়েলি’ ভাব প্রকট হতে থাকে। এ নিয়ে বাড়িতে তাকে সবাই নানা কথা বলে। এমনকি মারও খেতে হয়েছে।

অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার পর রূপান্তরকামীদের আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন সিন্টু। কিন্তু সে সময় তার চলার পথ অত সহজ ছিল না। নানা বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। তারপরেও হাল ছেড়ে দেননি।

মায়ের কথা স্মরণ করে রূপান্তরকামী এই নারী বলেন, ৭ বছর আগে মা মারা গিয়েছেন। আজ যদি মা বেঁচে থাকতেন তাহলে আমার সাফল্যে খুশি হতেন।

তিনি আরো বলেন, যৌনকর্মীর সন্তান হিসেবে পরিচয় দিতে বিন্দুমাত্র খারাপ লাগে না। বরং আমি এই পেশাকে সম্মান করি। এই পেশার লোকদের শ্রদ্ধা করি।

আইনজীবী অংশুমান চক্রবর্তী বলেন, সিন্টু অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাকে আইনের নিয়ম-কানুন শিখিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমরা তাকে সাহায্য করেছি। এ দিন প্রায় আড়াইশো মামলার বেশির ভাগ বিচার কাজ শেষ হয়েছে। সূত্র: আনন্দবাজার