শিশুর ডিএনএ পরীক্ষায় মিললো ধর্ষণের সত্যতা, কারাগারে আইনজীবী
কারাগার (প্রতীকী ছবি)

ভুয়া পরোয়ানায় ১০০ দিন জেল খাটলেন কৃষক আবদুল আজিজ

গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার একটি মাদকের মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়নের ফিরিঙ্গীকান্দা গ্রামের গেদু মিয়ার ছেলে কৃষক আজিজুর রহমান ওরফে আবদুল আজিজ। এরপর আরও ৭টি মামলার ভুয়া পরোয়ানায় তাঁকে ১০০ দিন জেলে থাকতে হয়। তথ্য অধিকার আইনে পাওয়া তথ্য থেকে এসব জানা গেছে।

নথিপত্র অনুসারে, জয়দেবপুর থানায় করা মাদকের মামলায় গত বছরের ৬ মার্চ আজিজুর রহমানকে পুলিশ তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক জামাল উদ্দিন এই মামলা করেছিলেন।

মামলার বিবরণে বলা হয়, ২০১৭ সালের ১৯ মার্চ জয়দেবপুর থানার পুবাইল তালুটিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ৪০০টি ইয়াবা বড়িসহ রিপা ও আমেনা নামের দুই মাদক ব্যবসায়ীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আজিজসহ নয়জন পালিয়ে যান। পরে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে সোপর্দ করে। শুনানি শেষে আদালত তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেন। কয়েক দিন সেখানে থাকার পর তাঁকে গাজীপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। এর তিন দিন পর সেখান থেকে পাঠানো হয় কাশিমপুর কারাগারে।

নথিতে দেখা যায়, কাশিমপুর কারগারে থাকা অবস্থায় তাঁকে চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানার চারটি মামলায়, রাজধানীর মিরপুর থানার একটি মামলায়, জামালপুরের বক্সীগঞ্জ থানার একটি মামলায় ও মাদারীপুর সদর থানার একটি মামলায় পরোয়ানার মাধ্যমে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এসব মামলায় তাঁকে চট্টগ্রাম কারাগার, মাদারীপুর কারাগার ও জামালপুর কারাগারে থাকতে হয়। সর্বশেষ তিনি ছিলেন কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।

চট্টগ্রাম মহানগর যুগ্ম দায়রা জজ তৃতীয় আদালতের বিচারক বিলকিছ আক্তার গত বছর ২৯ মে এক আদেশে বলেন, চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানার মামলায় আজিজুর রহমান ওরফে আবদুল আজিজ নামে কোনো আসামি নেই। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আজিজুরের অন্তর্বর্তীকালীন হাজতি পরোয়ানার ফটোকপিতে শুধু দায়রা নম্বর ছাড়া আর কোনো কিছুর মিল নেই এবং আদালত (চট্টগ্রাম মহানগর যুগ্ম দায়রা জজ তৃতীয় আদালত) থেকে তাঁর নামে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যু করা হয়নি। অন্য কোনো মামলায় আটকাদেশ না থাকলে তাঁকে (আজিজুর) মুক্তির নির্দেশ দেন আদালত।

মাদারীপুর মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালত গত বছরের ৩১ মে এক আদেশে বলেন, আবদুল আজিজকে (আজিজুর রহমান) হয়রানির জন্য বিচারক ও আদালতের সিল-স্বাক্ষর জাল করে মাদারীপুর সদর থানার একটি মামলায় তাঁর নামে হাজতি পরোয়ানাসহ এক পাতার আদেশনামা তৈরি করা হয়েছে। আদালতে উপস্থাপন করা ওই আদেশনামায় অনেক অসংগতি আছে বলে আদালত উল্লেখ করেন।

আদালত আজিজুর রহমানের ওই পরোয়ানা বাতিল ও অকার্যকর সাব্যস্ত করে অন্য কোনো মামলায় আটকাদেশ না থাকলে মাদারীপুর সদর থানার মামলাতেও তাঁকে মুক্তির আদেশ দেন।

আজিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, কোনো একটি মহল ভুয়া পরোয়ানা তৈরি করে তাঁকে হয়রানি করেছেন। কিন্তু সব কটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ভুয়া বলে প্রমাণিত হলে আদালত ওই সব মামলা থেকে তাঁকে মুক্তি দিয়েছেন। আদালতের নির্দেশে ১০০ দিন হাজত খাটার পর গত বছরের ১২ জুন তিনি মুক্তি পান। ছাড়া পেয়ে হয়রানির প্রতিকার চেয়ে গত বছরের ৩ জুলাই পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন তিনি। এত দিন পেরিয়ে গেলেও কোনো জবাব পাননি।

তিনি আরও বলেন, আদালতের নির্দেশে সাতটি মামলা থেকে তিনি মুক্তি পেলেও গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার মাদকের মামলায় তিনি এখনো হাজিরা দিয়ে যাচ্ছেন। ওই মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। মাদকের মামলা থেকে খালাস পাওয়ার পর সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলে জানান তিনি।