ওয়াসা

ওয়াসার পানি পরীক্ষায় দুই সপ্তাহ সময় দিল হাইকোর্ট

ঢাকা মহানগরীতে ওয়াসার পানিতে ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া আছে কি না- তা পরীক্ষার জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করার জন্য দুই সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ৫ মে পরবর্তী আদেশের জন্য রেখেছেন আদালত।

হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) এই আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ। তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোতাহার হোসেন সাজু।

রিটকারী আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ আদেশের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ জানান, গত বছরের ৬ নভেম্বর ঢাকা মহানগরীর ওয়াসার পানিতে ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া আছে কি না- তা পরীক্ষার জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে দুই মাসের মধ্যে পানি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ ছিল। সে হিসাবে বৃহস্পতিবার ওই প্রতিবেদন দাখিলের ধার্য দিন। এ দিন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতকে জানান, ওয়াসার পানি পরীক্ষা করার জন্য এখনও কমিটি গঠন করা হয়নি। তাই সময় দরকার। তখন দুই সপ্তাহ সময় মঞ্জুর করে আগামী ৫ মে আদেশের জন্য পরর্বর্তী দিন ঠিক করেন আদালত।

গত বছরের ৬ নভেম্বর কমিটি গঠনের নির্দেশনা ছাড়াও ওয়াসার নিরাপদ পানি সরবরাহে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং নিরাপদ পানি সরবরাহে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের পানি সরবরাহ, পয়োনিষ্কাশন, স্বাস্থ্যবিধি ও দরিদ্রতা নিয়ে সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক একটি প্রতিবেদন দেয়। গত ১১ অক্টোবর রাজধানীর একটি হোটেলে ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

পানি, পয়োনিষ্কাশন, পরিচ্ছন্নতা এবং দারিদ্র্যের মধ্যে সংযোগ খুঁজে বের করতে বিশ্বের ১৮টি দেশে বৈশ্বিক গবেষণা করে বিশ্বব্যাংক। তার ভিত্তিতে ওই ১৮টি দেশের প্রতিটির জন্য আলাদা আলাদা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

বাংলাদেশ নিয়ে তৈরি করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের প্রায় সাড়ে সাত কোটি মানুষ অপরিচ্ছন্ন এবং অনিরাপদ উৎসের পানি পান করছে। পানির নিরাপদ উৎসগুলোর ৪১ শতাংশই ক্ষতিকারক ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়াযুক্ত এবং ১৩ শতাংশে রয়েছে আর্সেনিক।

বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পাইপলাইনের পানির ৮২ শতাংশেই রয়েছে ই-কোলাই। ৩৮ শতাংশ টিউবওয়েলের পানিতে পাওয়া গেছে এই ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া। পাকস্থলী ও অন্ত্রের প্রদাহের জন্য ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়াকে দায়ী করা হয়।

নিম্নমানের পানি এবং পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা দেশের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। এ দুটি বিষয় শিশুর পুষ্টির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাংলাদেশের প্রায় ৩৫ শতাংশ শিশু বয়সের তুলনায় উচ্চতায় কম। নিরাপদ ও মানসম্মত পানি এবং পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হলে শিশুদের বেড়ে ওঠা এবং দেশের উন্নতি ত্বরান্বিত হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

বিশ্ব ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনের মতে, দেশের পানি সরবরাহ, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা–সংক্রান্ত ব্যবস্থার উন্নয়নে জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ চাহিদার তুলনায় কম। গত এক দশকে এই খাতে বাজেটে বরাদ্দ প্রায় অর্ধেক কমেছে।