‘দুগ্ধজাত কোম্পানির ক্ষতি চাই না, চাই দুধে ক্ষতিকর কিছু না থাকুক’

পাস্তুরিত দুধের উৎপাদক কোম্পানি এবং খামারিদের ক্ষতিগ্রস্ত করা উদ্দেশ্য নয় জানিয়ে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘দেশের দুগ্ধজাত কোম্পানিগুলো বন্ধ হয়ে যাক, এটা আমরা চাই না।’ আদালত বলেন, ‘মানবস্বাস্থ্যের জন্য দুধে ক্ষতিকারক কিছু না থাকুক, সেটিই আমরা চাই।’

আজ সোমবার (২৯ জুলাই) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

আদালতের আদেশের পর পাস্তুরিত দুধের বেচাকেনা বন্ধ থাকার সুযোগে বিদেশি পাউডার দুধ যেন বাজার দখল করতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেছেন হাইকোর্ট। এ সময় হাইকোর্ট বলেন, পাউডার দুধে কোনো ক্ষতিকর উপাদান আছে কি-না, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে।

আদালত বলেন, দেশের বাইরের কোম্পানি এখানে গেড়ে বসুক, সেটাও আমরা চাই না। আমরা চাই, দেশেই নিরাপদ দুধ উৎপাদন হোক।

এরপর আদালত আগামী ২০ অক্টোবর তরল দুধ এবং গুড়া দুধের ওপর পরবর্তী আদেশের দিন ধার্য করেন।

আদালতে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম। এসময় বিএসটিআই’র পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার সরকার এম আর হাসান (মামুন)। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হেলেনা বেগম চায়না।

প্রসঙ্গত, গত ১১ ফেব্রুয়ারি কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পত্রিকার ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘দেশে পুষ্টির অন্যতম প্রধান জোগান হিসেবে বিবেচিত গরুর দুধ বা দুগ্ধজাত খাদ্যে এবার মিলেছে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর নানা উপাদান। ১০ ফেব্রুয়ারি এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে সরকারের জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের প্রতিবেদনে। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সভাকক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ অন্য কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে।’

‘জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়,‘গরুর খোলা দুধে অণুজীবের সহনীয় মাত্রা সর্বোচ্চ ৪ থাকার কথা থাকলেও পাওয়া গেছে ৭.৬৬ পর্যন্ত।’ এরপর সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী মামুন মাহবুব।

পরে আদালত দুধে সিসা মিশ্রণকারীদের শাস্তির আওতায় আনার ব্যর্থতা কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন আদালত। এছাড়া, রুলে দুগ্ধজাত খাবারে ভেজাল প্রতিরোধে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি খাদ্যে ভেজালের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির (মৃত্যুদণ্ড) কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

একইসঙ্গে আদালত ঢাকাসহ সারাদেশের বাজারে কোন কোন কোম্পানির দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য পণ্যে কী পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া, কীটনাশক এবং সিসা মেশানো রয়েছে, তা নিরূপণ করে একটি জরিপ প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশ দেন। জাতীয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।