উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের শিক্ষার্থী সুরাইয়া আক্তার রিশা হত্যা

ভালোবাসা যেন সহিংসহতায় রূপ না নেয়: আদালতের পর্যবেক্ষণ

রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশা হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ একমাত্র আসামি ওবায়দুলের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন। মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ওবায়দুলের ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়।

এ হত্যা মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক ইমরুল কায়েশ বলেন, ঘটনাটি একটি অসম প্রেম বলে মনে হয়েছে। ভালোবাসা যেন সহিংসহতায় রূপ নিতে না পারে সে জন্য আসামির সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দেওয়াই শ্রেয়।

তিনি আরও বলেন, ওবায়দুল হচ্ছেন একজন টেইলার, রিশার বাবা একজন ব্যবসায়ী। সে ভালোবাসতে পারে কিন্তু ভালোবাসা যেন এমন সহিংসতায় রূপ নিতে না পারে।

এদিকে ঘাতক ওবায়দুলের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের খবরে আদালত চত্বরে কান্নায় ভেঙে পড়েন রিশার মা। তিনি বলেন, ‘রায়ে আমি খুশি। ফাঁসির রায় যেন দ্রুত কার্যকর করা হয়। আমার মতো যেন আর কোনো মায়ের কোল খালি না হয়।’

অন্যদিকে রায় শোনার জন্য আদালতে উপস্থিত ছিল উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। রায় শুনে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং রায় দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, পাঁচ-ছয় মাস আগে রিশা ও তার মা তানিয়া ইস্টার্ন মল্লিকা মার্কেটে বৈশাখী টেইলার্সে কাপড় সেলাই করাতে যান। এ সময় তার মা ওই দোকানের রসিদের রিসিভ কপিতে ফোন নম্বর দিয়ে আসেন। ওই টেইলার্সের কর্মচারী ওবায়দুল রিসিভ কপি থেকে ফোন নম্বর নিয়ে রিশাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে বিরক্ত করতো। রিশার মা এ বিষয়ে ওবায়দুলকে সতর্ক করেন।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট রিশা ও তার বন্ধু মুনতারিফ রহমান রাফি পরীক্ষা শেষে কাকরাইল ওভারব্রিজ পার হওয়ার সময় ওবায়দুল রিশাকে আবারও প্রেমের প্রস্তাব দেয়। রিশা তা প্রত্যাখ্যান করলে ওবায়দুল তাকে ছুরিকাঘাত করে। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় রিশাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৮ আগস্ট মারা যায় রিশা। ছুরিকাঘাতের ঘটনায় ২৪ আগস্ট রিশার মা তানিয়া হোসেন বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি মামলা করেন। পরে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।

একই বছরের ১৪ নভেম্বর ওবায়দুলকে একমাত্র আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আলী হোসেন। ২০১৭ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকা মহানগর অষ্টম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবুল কাশেম আসামি ওবায়দুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। মামলায় ২৬ সাক্ষীর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ২২ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে।