অর্থের বিনিময়ে ঢাকা, উত্তরা ক্লাবসহ দেশের ৫ জেলার ১৩টি ক্লাবে হাউজি ও ডাইসের মতো অন্যান্য অভ্যন্তরীণ খেলা আয়োজন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি অবিলম্বে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া এবং এ সংক্রান্ত আইন আরও যুগোপযোগী করার কথা বলেছেন আদালত।
এ সংক্রান্ত রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে আজ সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
এই ১৩টি ক্লাবের মধ্যে রয়েছে— ঢাকা ক্লাব, গুলশান ক্লাব, বনানী ক্লাব, অফিসার্স ক্লাব ঢাকা, ঢাকা লেডিস ক্লাব, ক্যাডেট কলেজ ক্লাব গুলশান, চিটাগাং ক্লাব, চিটাগাং সিনিয়র্স ক্লাব, নারায়ণগঞ্জ ক্লাব ও খুলনা ক্লাব।
আদালত বলেছেন, ঢাকা মহানগর ও মহানগরের বাইরে থ্রি কার্ড, ফ্লাস, হাউজি, নিপুণ খেলার আয়োজন করা অপরাধ। লটারি ছাড়া হাউজি, ডাইস, ওয়ান টেন, চরচরির মতো অন্যান্য খেলা দক্ষতার পরিবর্তে ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে। আইনে এগুলো নিষেধ আছে। এ ধরনের খেলার অনুমতি, আয়োজন করা ও অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হলো। এ ছাড়া এসব খেলার ইলেকট্রনিক ও অন্য সরঞ্জামাদি জব্দ করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতিও নির্দেশ দেওয়া হয়।
আদালত আরও বলেছেন, যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত, তারা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধী। কেননা, সংশ্লিষ্ট আইন ও মহানগর পুলিশ আইনে এ বিষয়ে নিষেধ করা আছে। অপরাধ ধনী ও দরিদ্রের ক্ষেত্রে সমান। সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে কারও সঙ্গে বৈষম্য করা যাবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ বিষয়টি মনে রাখতে হবে।
আদালত বলেছেন, সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধনের মাধ্যমে শাস্তির মেয়াদ বাড়ানো উচিত। আদালত প্রত্যাশা করেন সরকার এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবে।
প্রসঙ্গত, প্রকাশ্যে জুয়া খেলা নিয়ে ১৮৬৭ সালের একটি আইন দেশে এখনও বিদ্যমান রয়েছে। এই আইনে জুয়া খেলার অপরাধে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা জরিমানা ও তিন মাসের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী ব্যারিস্টার রেদওয়ান আহমেদ রানজীব। এসময় ঢাকা ক্লাবের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
এর আগে ঢাকা ক্লাবসহ দেশের ১৩টি অভিজাত ক্লাবে টাকার বিনিময়ে জুয়া খেলা বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে রিট দায়ের করা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সামিউল হক ও অ্যাডভোকেট রোকন উদ্দিন মো. ফারুক জনস্বার্থে এ রিট দায়ের করেছিলেন।
ওই রিটের শুনানি নিয়ে ২০১৬ সালের ৪ ডিসেম্বর ঢাকা ক্লাবসহ দেশের ১৩টি ক্লাবে টাকার বিনিময়ে জুয়া খেলা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি জুয়াসহ অবৈধ ইনডোর গেম যেমন- কার্ড, ডাইস ও হাউজি খেলা অথবা এমন কোনও খেলা যাতে টাকা বা অন্য কোনও বিনিময় হয়ে থাকে, তা বন্ধের নির্দেশনা কেন দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চেয়েছিলেন আদালত।
রিট আবেদনে বলা হয়, ঢাকা মেট্রোপলিন পুলিশ অধ্যাদেশ ১৯৭৬, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ ১৯৭৮ এবং পাবলিক গেম্বলিং অ্যাক্ট ১৮৬৭ অনুযায়ী কোনও প্রকার জুয়া খেলা দণ্ডনীয় অপরাধ। একইসঙ্গে সংবিধানের ১৮ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সরকারকে পতিতাবৃত্তি ও জুয়া খেলা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে। তাই এগুলো বন্ধ হওয়া জরুরি।