এক ডজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের দক্ষতায় মামলা নিষ্পত্তিতে রেকর্ড করেছে ময়মনসিংহ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। শুধু দীর্ঘ সময় ধরে ঝুলে থাকা মামলা নয়, ১২ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের দক্ষতায় সহস্রাধিক মামলা নিষ্পত্তির মাধ্যমে মামলাজট এখন অনেকটাই কমে এসেছে।
ময়মনসিংহ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মারামারি, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও মাদকসংক্রান্ত মামলা করা হয়। জানুয়ারি শেষে এই আদালতে ২৫ হাজার ৩৯১টি মামলা চলমান রয়েছে। জানুয়ারিতেও ২ হাজার ২৭৫টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। ২০০৭ সালে বিচার বিভাগ পৃথক্করণ হওয়ার পর থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এই এক যুগে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১ লাখ ৪০ হাজার ৯৮২টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে গত বছরেই ১৯ হাজার ৫৩৭টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে, যা কোনো নির্দিষ্ট সালে সর্বাধিক মামলা নিষ্পত্তির নজির। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে সর্বোচ্চ ৫ বছরের সাজা দেওয়ার বিধান থাকলেও ৭ বছর ও ১০ বছর করে সাজা দেওয়ারও নজির দেখা গেছে।
নিষ্পত্তির পেছনে সময় বেশি লাগার কারণ সম্পর্কে জানা যায়, মামলা করার পর তদন্ত শুরু হয়। তদন্ত শেষে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে অভিযোগপত্র দায়ের করা হলে তার ভিত্তিতে অভিযোগ গঠন করা হয়। তারপর সাক্ষ্য গ্রহণ এবং উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে রায় দেওয়া হয়। এর মধ্যে সাক্ষী হাজিরে অনীহা, চিকিৎসক হাজির না হওয়া, সাক্ষী হাজিরের ক্ষেত্রে পুলিশের তৎপরতার অভাব, রাজনৈতিক প্রভাবসহ বিভিন্ন সমস্যার জন্য মামলা নিষ্পত্তি হতে সময় বেশি লাগত। ফলে মামলাজটের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছিল।
তবে এখন সেই পুরোনো ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। অতীতে মামলার সাক্ষী হাজির না হওয়া এবং সাক্ষী হাজিরে পুলিশের আশাব্যঞ্জক সাড়া না পাওয়ায় মামলা দীর্ঘায়িত হতো বলে জানিয়েছেন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. রেজাউল করিম। কিন্তু এখন সাক্ষী হাজিরের ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
২০১১ সালের পর থেকে গত বছর পর্যন্ত ৫৭ হাজার ৪৪০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। ২০১৯ সালেই ১০ হাজার ৮৮০ জন সাক্ষী হাজির ছিলেন। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে গত বছরের তুলনায় এ বছর আরও বেশি সাক্ষ্য গ্রহণ ও মামলা নিষ্পত্তির আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। মামলার সংখ্যানুপাতে বিচারক নিয়োগ করা গেলে এবং কম্পিউটার, আসবাবসহ আনুষঙ্গিক সুবিধা বৃদ্ধি করা গেলে বিচারকার্যে আরও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন তিনি।
মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নুরুল হক বলেন, মাসিক জুডিশিয়াল পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হওয়ার ফলে বর্তমানে মামলা নিষ্পত্তিতে আলাদা গতি এসেছে। প্রতি মাসে অনুষ্ঠিত এই কনফারেন্সে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, আইনজীবী, চিকিৎসক, পুলিশ, কারা কর্তৃপক্ষ নিজেদের সমস্যার কথা বিস্তারিত আলোচনা করার সুযোগ পায়। তবে আদালত ভবনের এজলাসগুলো পুনর্বিন্যাস করা গেলে মামলাজট আরও কমবে বলে মত দেন তিনি।