কাজী শরীফ; সহকারী জজ, নোয়াখালী

পরকীয়া ও অধমের নিবেদন

কাজী শরীফ:

গতকাল ফেণীতে ফেসবুক লাইভে এসে এক পাষন্ড কর্তৃক স্ত্রীকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।ঘাতকের ভাই হত্যার শিকার নারীর বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ করেছেন। অপ্রমাণিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো না। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই মহিলা পরকীয়া করেছেন তাহলেও কী তাকে হত্যা করা যায়? এ প্রসঙ্গে যৎসামান্য লেখার চেষ্টা করলাম-

এদেশে পরকীয়াজনিত হত্যাকান্ড বা পরকীয়ার অভিযোগে হত্যাকান্ড মহামারী আকার ধারণ করেছে!
শুধু স্বামী স্ত্রীকে বা স্ত্রী স্বামীকেই খুন করছেন না নিজ সন্তানকে খুন করতেও পিছপা হচ্ছেন না অনেকেই !

বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনানুযায়ী বিবাহবিচ্ছেদ করে খুব সহজেই প্রত্যাশিত নারী বা পুরুষকে বিয়ে করার সুযোগ আছে। বিবাহবিচ্ছেদ করে নারী ইদ্দতপালন শেষে ও পুরুষ কালবিলম্ব না করেই পুণরায় বিয়ে করতে পারেন।

এত সুন্দর আইন থাকার পরও এ ধরণের হত্যাকান্ড খুবই দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পুরুষ খুব সহজেই স্ত্রীকে তালাক দিতে পারেন আবার স্ত্রীও তালাক দিতে পারেন। তালাক দিলে স্ত্রী আবার দেনমোহরও পাবে! একটু ব্যাখ্যা করি, তালাকের সাথে দেনমোহরের সম্পর্ক নেই। অনেকে ভাবেন স্ত্রী নিজে তালাক দিলে দেনমোহর পাবেন না। এটা ভুল ধারণা। এটা একজন স্ত্রী তার বিয়ের সময় থেকেই অধিকারী। সুতরাং স্বামী বিয়ের সময় দেনমোহর প্রদান না করলে স্ত্রী তালাক দিলেও সে দেনমোহর প্রাপ্য হবেন। সে টাকা দিয়ে স্ত্রী চাইলে নতুন সংসার সুন্দরভাবে সাজাতেও পারেন!

আমি মনে করি এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করা দরকার। যে মানুষটি জোর করে সংসার টিকিয়ে রাখতে গিয়ে খুন হচ্ছে তার দোষ কী!
পরকীয়ার বলি যে সন্তান হচ্ছে তার দোষটাই বা কী!

আপনি হয়তো বলতে পারেন আমি পরকীয়ার বিপক্ষে না বলে কেনো এভাবে লিখছি। দেখুন যিনি একটি পবিত্র সম্পর্ক অব্যাহত রেখে পাশাপাশি একটি এমন নোংরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে তাকে বোঝানোর সামর্থ্য আমার নেই। তাকে বুঝিয়ে কোন লাভ হবে বলেও মনে হয়না।

বরং আসুন তাকে সহজ পথ দেখাই। আর নারীদের বেলায় বলছি তালাক চাইতে গেলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(গ) ধারা অনুসারে মামলা করার দরকার নেই। যে আইনজীবী আপনাকে এ পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি আপনাকে ভুল পথ দেখাচ্ছেন। যে লোকটার সাথে সংসারই করতে চাননা তাকে শেষ সময়ে মিথ্যা মামলায় না জড়ালেই কী নয়!

আর পুরুষদের বলছি স্ত্রীকে তালাক দিতে স্ত্রী দুশ্চরিত্রা এমন অভিযোগ না দিলেই কী নয়! আপনি যদি অন্য নারীতে আসক্ত হন তবে শেষবেলায় বর্তমান স্ত্রীর প্রতি এমন অসম্মানজনক অভিযোগ ছাড়াও আপনি তালাক চাইতে পারেন।

স্বামী স্ত্রী দুজনের প্রতি বলছি, যে চলে যাওয়ার তাকে চলে যেতে দিন। জোর জবরদস্তি করে সংসার চলেনা!

পরকীয়া বন্ধ হোক আর না হোক নির্দোষ স্বামী বা নির্দোষ স্ত্রী বা নিষ্পাপ সন্তান হত্যা বন্ধ হোক।

লেখক- সহকারী জজ, নোয়াখালী।