অ্যাডভোকেট হাসান তারিক পলাশ

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বিচারকের নিরাপত্তা বনাম নিয়মিত কোর্ট চালু প্রসঙ্গে

হাসান তারিক পলাশ:

করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট ইদ্রিসুর রহমান স্যারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি। করোনার কারণে তাঁর মত সিনিয়র আইনজীবীদের চলে যাওয়া বিচার অঙ্গনের যে কতবড় ক্ষতি সেটা বলে শেষ করা যাবে না। তাদের মত সিনিয়ররাই বিচার বিভাগের জ্বাজল্যমান তারকা।

বিভিন্ন খবরে প্রকাশ, ইতিমধ্যে প্রায় ২০০ জন আইনজীবী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং প্রায় ৯ জন মারা গেছেন। এবং একই সাথে ১ জন সন্মানিত বিচারপতিসহ ২৬ জন বিচারক এবং আদালতের ৯৭ কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে আদালতের কার্যক্রম ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে চলার পরেও এত বেশি সংখ্যক আইনজীবী, বিচারকের আক্রান্ত হয়েছেন। এই মুহূর্তে যদি আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করতে পূর্ণমাত্রায় আদালত খুলে দেয়া হয়, তবে আদালত অঙ্গনই হবে দেশে করোনা বিস্তারের আতুরঘর।

বিভিন্ন মেডিকেল জরিপে দেখা যাচ্ছে করোনায় সিনিয়র সিটিজেনদের ঝুঁকির পরিমাণ বেশি। আদালত খুলে দিলে সিনিয়র আইনজীবীগণ, বয়োজ্যেষ্ঠ বিচারপতিগণ এবং বয়োজ্যেষ্ঠ মক্কেলগণ আদালতে আসতে “বাধ্য” হবেন এবং তাদের আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বহুগুণে বেড়ে যাবে। ৫ জন ১০ জন বা ২০ জন সিনিয়র আইনজীবী বা বয়োজ্যেষ্ঠ বিচারপতি যদি (আল্লাহ না করুন) চলে যান, তবে বিচার বিভাগের যে ক্ষতি হবে সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কতদিন লাগবে? একজন ইদ্রিসুর রহমান কতদিনে জন্ম নেবেন?

এটা ঠিক, আদালত বন্ধ থাকার কারণে আমরা সবাই অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির মধ্যে দিন যাপন করছি। আল্লাহ যদি আমাদের বাঁচিয়ে রাখেন তবে সেই ক্ষতি একদিন কাটিয়েও ওঠা যাবে। কিন্তু অর্থনৈতিক লাভের চিন্তা করে যদি শত শত আইনজীবী, বিচারক এবং হাজার হাজার মক্কেল করোনায় আক্রান্ত হয় তবে সেই দায় কে নেবে? সেই পরিবারগুলোর কি হবে? যে হারে করোনার বিস্তার হচ্ছে তাতে দুইদিন পরে চিকিৎসাও তো পাওয়া যাবে না!

যদি ভার্চ্যুয়াল কোর্টের মত “বিকল্প পদ্ধতি” চালু না থাকত তবে হয়ত এই মুহূর্তে আদালত খুলে দেবার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিত কিন্তু বিকল্প পদ্ধতি চালু থাকার পরেও যদি এই “পিক টাইমে” (ব্যাপক হারে করোনা বিস্তারের সময়) আদালত খুলে দেয়া হয়, তবে সেটা হবে “অবিবেচনাপ্রসূত পদক্ষেপ”!

কোন আইনজীবী বা বিচারক বা মক্কেল যদি ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতির মত একটা “সহজ পদ্ধতি” গ্রহণে ব্যর্থ হন, সেটি তার দক্ষতার ঘাটতি। কারো দক্ষতার ঘাটতির জন্য আমরা আমাদের সিনিয়র আইনজীবী এবং বয়োজ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের ঝুকির মুখে ফেলে দিতে পারি না।

এই প্রেক্ষাপটে মাননীয় প্রধান বিচারপতির নিকট বিনীত নিবেদন যাতে এই “পিক টাইমে” আদালত খুলে না দেয়া হয় এবং অন্তত আরো ১ টি মাস অপেক্ষা করা হয়। সেই সাথে ভার্চ্যুয়াল কোর্টের পরিধি বাড়িয়ে আরো বেশি সংখ্যক বেঞ্চ প্রদান করে এই পদ্ধতি আরো সফল এবং সহজ ভাবে কার্যকর করা হয় তার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।

লেখক: এডভোকেট; বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।