প্রয়োজন অনুসারে ভার্চ্যুয়াল আদালত চালানোর বিধান রেখে সংসদে বিল পাস হয়েছে। এ সময় ভার্চ্যুয়াল আদালত বিষয়ে বিদেশি একটি প্রতিষ্ঠান আইনজীবীদের প্রশিক্ষণ দেবেন বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক।
আজ বুধবার (৮ জুলাই) আইনমন্ত্রী ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার বিল- ২০২০’ জাতীয় সংসদে পাসের প্রস্তাব করেন। পরে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।
এর আগে বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
অবশ্য মহামারিকালে প্রয়োজনের তাগিদে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে ভার্চুয়াল আদালত যাত্রা শুরু করে। ছোঁয়াচে রোগ কোভিড-১৯ এর বিস্তার ঠেকাতে গত মার্চে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলে আদালতও বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ছুটির মধ্যে বিচারকাজ থেমে যাওয়ায় ভার্চুয়াল আদালতের ভাবনা গতি পায়— যেখানে আইনজীবী, বিচারক, আসামি, বাদী কিংবা আদালতকর্মী কেউই একসঙ্গে না বসেই শুনানি নিতে পারেন।
ভিডিও কনফারেন্সসহ অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে আদালতের কার্যক্রম চালানোর সুযোগ রেখে গত ৭ মে মন্ত্রিসভা এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশের খসড়ায় অনুমোদন দেওয়ার পর অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে ভার্চুয়াল আদালতের কাজ শুরু হয়ে যায়। কোনও অধ্যাদেশ জারির পর তা আইনে পরিণত করতে ৩০ দিনের মধ্যে সংসদে অনুমোদন নিতে হয়। না হলে অধ্যাদেশটির কার্যকারিতা হারায়।
সে অনুযায়ী অধ্যদেশটি আইন হিসেবে জারি করতে গত ২৩ জুন সংসদে বিল তোলা হয়। তখন বিলটি পরীক্ষা করে ৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। ২৪ জুন সংসদীয় কমিটি বিলটি নিয়ে বৈঠক করে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায়।
২৯ জুন সংসদীয় কমিটি বিলটি পরীক্ষা করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন সংসদে দেয়।
সংসদে তোলা বিলের ৫ ধারায় বলা ছিল— ‘সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বা হাইকোর্ট বিভাগ সময় সময়, প্র্যাকটিস নির্দেশনা (বিশেষ বা সাধারণ) জারি করতে পারবে।’
সংসদীয় কমিটি এই ধারাটির পরিবর্তন আনার জন্য সুপারিশ করে। ‘সময় সময়’ শব্দ দুটির আগে ‘প্রয়োজন অনুসারে’ শব্দ দুটি যোগ করার কথা বলে।
এদিকে বিলটি পাসের প্রক্রিয়ার সময় জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ অভিযোগ করেন ‘ভার্চুয়াল কোর্টের’ কারণে আইনজীবীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অনেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত না হওয়ায় পেশায় সমস্যা হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এর জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, বিদেশি একটি প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে আইনজীবীদের প্রশিক্ষণ দেবেন।
বিরোধী দলের সদস্যদের বিভিন্ন সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, ‘এই আইন বিশেষ সময়ের জন্য। পূর্ণাঙ্গ ট্রায়াল এখনই করা সম্ভব হবে না। তার জন্য সাক্ষ্য আইন, ফৌজদারি ও দেওয়ানি কার্যবিধি সংশোধন করতে হবে। মঙ্গলবার (৭ জুলাই) পর্যন্ত ৫০ হাজার কারাবন্দির জামিন হয়েছে। আর সেটা হয়েছে এই ভার্চুয়াল কোর্টের জন্যই। আমরা এগিয়ে যেতে চাই। এগিয়ে যাবো আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়েই।’