অ্যাডভোকেট সাব্বির এ মুকীম

চেকের মামলায় চুক্তিপত্র বাধ্যতামূলক করা হয়নি

সাব্বির এ মুকীম: বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপিলেট ডিভিশন কর্তৃক ২০১৭ ইং সনের ৬৩-৬৬ নং ফৌজদারী আপিল মোকাদ্দমাসমূহে মাননীয় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বেঞ্চ কর্তৃক প্রদত্ত বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকি কর্তৃক লিখিত সর্বসম্মত রায়ে- এখন হতে চেকের মামলা করতে হলে চুক্তিপত্র বা কন্ট্রাক্ট ডিড বাধ্যতামূলক- এমন ধরণের কথা ঐ রায়ের কোথাও বলা হয়নি, লেখা হয়নি, এমনকী এমন ধরণের বিধান প্রণয়নের ন্যূনতম ইঙ্গিতও দেয়া হয়নি। প্রচারিত তথ্যটি ভুল এবং কাল্পনিক।

এই ভুল তথ্যটি ঘিরেই আমাদের সমাজে একটা বিপুল ধোঁয়াশা তৈরী হয়েছে। যে পক্ষের কাছে চেক আছে সে পক্ষ খুব ভীত। আর যে পক্ষ চেক প্রদান করেছে, সে পক্ষ বেশ আনন্দিত। আলোচ্য রায়ে নতুন কোনো বিধান দেয়া হয়নি অথবা পুরোনো কোনো বিধান বাদ দেয়া হয়নি। বরং বলা যায় বিদ্যমান বিধান ভুলে যাওয়াতে আলোচ্য রায়ে সেই আইন স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে এবং কেবল স্মরণ করিয়েই দেয়া হয়নি, তা প্রয়োগ করেও দেখানো হয়েছে।

হাল সময়ে চেক এর মামলা মানেই নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট এক্ট এর ১৩৮ ধারা- এই একটা চল তৈরী হয়েছে। সরল অংকের মতো, চেক ৬ মাসের মধ্যে চেক ডিজঅনার, যোগ ৩০ দিনের মধ্যে ডিমান্ড নোটিশ, যোগ নোটিশ মোতাবেক টাকা পরিশোধে ব্যর্থতা, যোগ নোটিশ প্রাপ্তির ৩০তম দিন এর পর হতে ৩০ দিনের মধ্যে যথোপযুক্ত এখতিয়ার সম্পন্ন বিচারিক হাকিমের আদালতে মামলা, সমান সমান চেক এর মামলায় সাজা।

আলোচ্য রায়ে এই কৃত্রিমভাবে তৈরী হওয়া ১৩৮ ধারার মেক্যানিকেল সুপার-স্ট্যাটাস হতে ১৩৮ ধারাকে বের করে আনা হয়েছে। অন্যদিকে আবার তা প্রতিস্থাপন করে নতুন কোনো টেকনিক্যাল কন্ডিশনও আরোপ করা হয়নি। স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে- কেবল ১৩৮ ধারাই নয় একই সাথে একই আইনের ৪৩ ধারা এবং ১১৮ ধারাও যে সমভাবে মূল্যবান তা দেখিয়ে দিয়ে প্রয়োগ করা হয়েছে। সাথে সাথে একই আইনের ৪, ৫ এবং ১৪১ ধারার আবশ্যকীয়তাও দেখানো হয়েছে। সমাজে এই রায় নিয়ে যে ভুল ধারণার চল হয়েছে তা চলতে থাকলে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে আবার নতুন এক ‘টেকনিক্যাল মেকানিজম’ কৃত্তিমভাবে আরোপিত হবে যা হবে আইনের অপব্যবহার এবং বিচার প্রার্থী জনগনের ভোগান্তি বৃদ্ধি।

মামলার ঘটনা সংক্ষেপ হলো এমনতর
মূল নালিশের ফরিয়াদী বিগত ১৩/০৩/২০১২ ইং তারিখে গুলশান সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে রেজিষ্ট্রিকৃত ১৮৯৭নং এগ্রিমেন্ট দলিল মূলে অভিযুক্ত হতে চার কোটি পঞ্চাশ লক্ষ টাকা সমমূল্যের চারটি চেক গ্রহণ করে। দলিলের ২(এ) নং শর্তের সারমর্ম হচ্ছে অভিযুক্তর মালিকী দখলীয় জায়গা যদি ফরিয়াদী চুক্তির নব্বই দিনের মধ্যে বাজার মূল্যে কিনবে এমন খরিদ্দার এনে বিক্রি করার ব্যবস্থা করে দেয় তবে আলোচ্য চেক এর টাকাগুলো ফরিয়াদী কমিশন হিসেবে পাবে। সারাদেশে বর্তমান জমি বেচা-কেনার বেশীরভাগ এই মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের মাধ্যমেই হয় যদিও এমন রেজিষ্ট্রিকৃত চুক্তির কথা অবশ্য শোনা যায় না।

বাস্তবে ফরিয়াদী চুক্তি অনুসারে কাজ করতে ব্যর্থ হয়। অভিযুক্ত নিজ উদ্যোগে ক্রেতা খুঁজে আনে। বিগত ০৩/০৭/২০১৩ সনে সম্পাদিত সাব কবলা দলিল মূলে অভিযুক্ত ৫.২৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার (আনুমানিক ৪২ কোটি টাকার সমমূল্য) এর বিনিময় উক্ত জায়গা মার্কিন দূতাবাসের নিকট বিক্রি করে। এরপরই ফরিয়াদী আলোচ্য চেকগুলা নগদায়নের জন্য ব্যাংকে জমা দিলে তা স্টপ পেমেন্ট জনিত কারণে ডিজঅনার হয়। গৎবাঁধা কথায় ফরিয়াদী বিচারিক হাকিমে আদালতে নালিশ ঠুঁকে দেয়। বিচারিক আদালতের রায়ে অভিযুক্তের মোট ৪ (চার) বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং মোট ৯ (নয়) কোটি টাকা অর্থদণ্ডের সাজা হয়। যেহেতু সাজা ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকার বেশী তাই অভিযুক্ত মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনে আপিল করে এবং খালাসের আদেশ প্রাপ্ত হয়। এরপর ফরিয়াদী মহামান্য আপিল বিভাগে সেই খালাসের আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করলে আপিল বিভাগ আলোচ্য রায় প্রদান করেন এবং হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন।

চুক্তিনামা সংক্রান্ত গুজব এবং অন্যান্য
চেক এর প্রাসঙ্গিকতায় নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট এক্ট এর ৪৩ ধারার সারমর্ম হচ্ছে এই আইন মোতাবেক প্রতিকার পেতে হলে অবশ্যই দুই পক্ষের মধ্যে একটা উপযুক্ত ‘কনসিডারেশন’ বিনিময় হতে হবে বা বিনিময় হওয়ার অঙ্গীকার থাকতে হবে। একই প্রাসঙ্গিকতায় একই আইনের ১১৮ধারার সারমর্ম হচ্ছে অভিযুক্ত যতক্ষণ না ভিন্ন কিছু প্রমাণ করতে পারছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আদালত ধরেই নিবেন যে, স্বাক্ষরিত চেক নিজেই উপযুক্ত ‘কনসিডারেশন’ বিনিময়ের অকাট্য প্রমাণ। এক্ষেত্রে এভিডেন্স অ্যাক্ট এর ৪নং ধারার “Shall Presume” নীতিকে প্রয়োগ করা হয়েছে।

তার মানে ধরেই নেয়া হবে চেক দেয়া হয়েছে মানেই সেখানে একটি চুক্তি ছিলো। চুক্তি আইন মোতাবেক এ চুক্তি লিখিতও হতে পারে আবার মৌখিকও হতে পারে। সেই চুক্তি আইনেরই অনিবার্য বিধান হলো কনসিডারেশন। এই ধরণের ধরে নেয়াকে বলা হয় কনস্ট্রাকটিভ প্রিজাম্পশন।

চেক এর ক্ষেত্রে কনস্ট্রাকটিভ প্রিজাম্পশন হলো, চেক টা মৌখিক বা লিখিত যে কোনো ধরণের চুক্তির কনসিডারেশন এর বিনিময়ে প্রদান করা হয়েছে। যদি চুক্তি লিখিত হয়, তবে মামলার রায় নিজের পক্ষে নিতে হলে ফরিয়াদী পক্ষকে প্রমান করতে হবে লিখিত চুক্তির সকল শর্ত ফরিয়াদী চুক্তি আইন মোতাবেক মান্য করেছে বলে ধরে নেয়া যাবে। আর অভিযুক্ত পক্ষকে রায় নিজের পক্ষে নিতে হলে উল্টোটা মানে লিখিত চুক্তির সকল শর্ত ফরিয়াদী চুক্তি আইন মোতাবেক মান্য করে নাই, কনসিডারেশন দেয় নাই। একই নীতি মৌখিক চুক্তির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, তবে সে ক্ষেত্রে আগে প্রমাণ করতে হবে মৌখিক চুক্তিটি আসলে কি ছিলো।

উল্লেখিত ১১৮ ধারার প্রয়োগ করতে গিয়ে আলোচ্য রায়ে বলা হয়েছে-

“Once there is admission of the execution of the cheque or the same is proved to have been executed, the presumption under section 118(a) of the Act is raised that it is supported by consideration. The category of ‘stop payment cheque’ would be subject to rebuttal and hence it would be an offence only if the drawer of the cheque fails to discharge the burden of rebuttal. The accused person can prove the non-existence of a consideration by raising a probable defence. If the accused discharges the initial onus of prove showing that the existence of consideration was improbable or doubtful or the same was illegal, the onus would shift to the complainant. He will be obliged to prove it as a matter of fact and upon its failure to prove would disentitle him of grant of relied on the basis of negotiable instrument. Where the accused person fails to discharge the onus of proof by showing the non-existence of the consideration, the complainant would invariably be held entitled to the benefit of presumption under section 118(a) of the Act in his favor. To disprove the presumption, the accused person has to bring on record such facts and circumstances upon consideration of which the Court may either believe that the consideration did not exist or its non-existence was so probable that a prudent man would under the circumstances of the case, shall not act upon the plea that it did not exist.”(সুপ্রীম কোর্টের অফিসিয়াল ওয়েব সাইটে প্রাপ্ত আলোচ্য রায়ের পিডিএফ কপির ১৪ পাতা ও ১৫ পাতা হতে উদ্ধৃত}

সারমর্মের বঙ্গানুবাদটা যেমন বুঝলাম, অবশ্যই চেকের মামলায় কনসিডারেশন থাকতে হবে। তবে অভিযুক্তকেই প্রমাণ করতে হবে চেক এর বিনিময়ে কোনো কনসিডারেশন ছিলো না। কনসিডারেশন ছিলো না এটা প্রমাণ করার পুরো দায় অভিযুক্তের। যদি সে তা প্রমাণ করতে না পারে তবে ধরেই নেয়া হবে কনসিডারেশন ছিলো।

এ তথ্য পরিষ্কার- কনসিডারেশন এর জন্য লিখিত চুক্তিনামা থাকতেই হবে বাধ্যতামূলকভাবে, তা আইনেও বলা হয় নাই, এই রায়েও বলা হয় নাই। মৌখিক চুক্তির মাধ্যমেও কিংবা কাজের মাধ্যমে প্রকাশিত ইচ্ছের মাধ্যমেও কনসিডারেশন এর অস্তিত্ব দেখা যেতে পারে। কনসিডারেশন এর অস্তিত্ব নাই- এই কথা অভিযুক্তকেই প্রমাণ করতে হবে। অভিযুক্ত যদি তা না পারে, তবে ধরেই নেয়া হবে কনসিডারেশন যথাযথভাবেই ছিলো।

এখন কনসিডারেশন ছিলোনা সেটা অভিযুক্ত কিভাবে প্রমাণ করবে কিংবা অভিযুক্ত তা প্রমাণ করতে পারলে ফরিয়াদী পাল্টা কিভাবে প্রমাণ করবে যে, অভিযুক্তর প্রমাণগুলো কনসিডারেশনকে অস্তিত্বহীন করে না সেসব প্রক্রিয়ার সাধারণ উপায় বাতলানো আছে এভিডেন্স একট এর ৭ম অধ্যায়ের লেখায়। সে অধ্যায়ের আলোকেই চেকের মামলায় কনসিডারেশন প্রমাণ সংক্রান্তে আলোচ্য রায়ে বলা হয়েছে –

When a presumption is rebuttable, it only points out that the party on whom lies the duty of going forward with evidence on the fact presumed and when that party has produced evidence fairly and reasonably tending to show that the real fact is not as presumed, the purpose of the presumption is over. To rebut the statutory presumptions an accused is not expected to prove that the cheque in question was not supported by consideration. However, the court need not insist in every case that the accused should disprove the non-existence of consideration and debt by leading direct evidence because the existence of negative evidence is neither possible nor contemplated. At the same time, it is clear that bare denial of the passing of consideration apparently would not serve the purpose of the accused. Something which is probable has to be brought on record for getting the burden of proof shifted to the complainant. The burden of proof of the accused to disprove the presumption under sections 118 and 138 of the Act is not so heavy. The preponderance of probability though direct or substantial evidence is sufficient enough to shift the onus to the complainant. Inference of preponderance of probabilities can be drawn from the materials on record and also by reference to the circumstances upon which the party relies. (সুপ্রীম কোর্টের অফিসিয়াল ওয়েব সাইটে প্রাপ্ত আলোচ্য রায়ের পিডিএফ কপির ১৬ পাতা ও ১৭ পাতা হতে উদ্ধৃত}

বঙ্গানুবাদের সারমর্ম হচ্ছে কনসিডারেশন ছিলোনা তার অকাট্য প্রমাণ দিয়ে দেখাতে হবে। সেটা করতে হবে অভিযুক্তকেই। তাকেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হাজির করে বা অন্য যেকোনো বৈধভাবে দেখাতে হবে যে কনসিডারেশন ছিলোনা। শুধু মুখে মুখে বললেই হবে না, যে কনসিডারেশন ছিলোনা বরং তা হাতে কলেমে দেখিয়েও দিতে হবে। আবার এও সত্য অকাট্য প্রমাণ মানেই এই নয় যে ফরিয়াদী সরাসরি স্বীকার করবে যে কনসিডারেশন ছিলোনা। যৌক্তিকভাবে কনসিডারেশন ছিলোনা এটা প্রমাণ করাই যথেষ্ট।

তার মানে চুক্তিনামা নিয়ে যে ধোঁয়াশা, তার আলোকে বলা যায়, চেক এর মামলা করতে নয় বরং চেকের মামলা হতে খালাস পেতে অভিযুক্তর জন্য চুক্তিনামা জরুরী এই রায়ের বাধ্যবাধকতায়। অভিযুক্ত যদি প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয় যে ফরিয়াদি কনসিডারেশন দেয় নাই, তবে ধরেই নেয়া হবে যে কনসিডারেশন ছিলো এবং ফরিয়াদী সে কনসিডারেশন দিয়েছে। চুক্তিনামা থাকলে এবং তাকে স্বীকৃতি দিলে তখনই কেবল ফরিয়াদীর উপর দায় জন্মায় এই প্রমাণ করতে যে ফরিয়াদী যথাযথভাবে কনসিডারেশন দিয়েছ। এই দায় পালনে ব্যর্থতার কারণেই আলোচ্য মামলায় সে মামলায় ফরিয়াদী নিজের পক্ষে চূড়ান্ত রায় পায়নি। লঘু চালে এই কথা বলাই যায়, লিখিত চুক্তিনামা থাকলে প্রাথমিক অবস্থায় ফরিয়াদীর চেয়ে অভিযুক্তই বেশী নিরাপদস্থানে থাকবে।

এই রায়ের পরে চেক এর মামলার যে স্ট্রাকচার দাঁড়ালো
সাধারণের সহজে বোঝার জন্য নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট এক্ট এ চেকের মামলায় বিবদমান পক্ষগণের সংশ্লিষ্টতাকে ৩টা স্তরে বর্ণনা করা যায়, যথা: আমলী স্তর, অভিযোগ গঠন স্তর, বিচারিক ও যুক্তিতর্ক স্তর।

প্রথম দুটি স্তর সম্বন্ধে ৭০ ডিএলআর (হাইকোর্ট ডিভিশন) এর ৩০৩ পৃষ্ঠা হতে লিপিকৃত রায়ে সুস্পষ্ট কাঠামো প্রদান করা হয়েছে। সে রায়ের ২৬ অনুচ্ছেদ মোতাবেক মেট্রোপলিট্যান হাকিম/বিচারিক হাকিম মহোদয়গণকে নীচে কয়টি উপাদান থাকলে চেক সংক্রান্ত নালিশ আমলে নিতে গাইডলাইন দেয়া হয়েছে। সেগুলো হলোঃ-

(১) ফরিয়াদীর নালিশে-

  • চেক প্রদানের তারিখ থাকতে হবে
  • সর্বশেষ চেক ডিজঅনারের তারিখ থাকতে হবে
  • চেক ডিজঅনার এর তথ্য ব্যাংক কর্তৃক অবগত করার তারিখ থাকতে হবে
  • অভিযুক্তর নিকট টাকার পরিশোধ চেয়ে লিখিত ডিমান্ড নোটিশের তারিখ থাকতে হবে
  • অভিযুক্ত কতৃক সে ডিমান্ড নোটিশ গ্রহনের তারিখ থাকতে হবে

(২) অভিযুক্ত কর্তৃক ডিমান্ড নোটিশ গ্রহনের এক মাসের মধ্যে ফরিয়াদীকে আদালতে নালিশ করতে এসেছে।

এরপর একই রায়ের ২৭ অনুচ্ছেদে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের ক্ষেত্রে যে গাইড লাইন মেনে চলতে বিচারিক সেশন আদালতকে বলা হয়েছে তার সারমর্ম হলো, অভিযুক্তর বিরুদ্ধে তখনই অভিযোগ গঠিত হবে যদি:-

(১) ফরিয়াদীর নালিশে উপরে উল্লেখিত তদসংক্রান্ত বিজ্ঞ বিচারিক হাকিমদের প্রদত্ত গাইডলাইন মান্য করা হয়েছে।

(২) ফরিয়াদীর প্রাইমা ফেসি কেস আছে।

উল্লেখ্য, ডিমান্ড নোটিশ সংক্রান্তে উচ্চ আদালতের বিভিন্ন রায়ে জেনারেল ক্লজেজ এক্ট এর ২৭ধারার প্রযোজ্য মর্মে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে। এমনকী ৬৮ ডিএলআর (হাইকোর্ট ডিভিশন) এর ৩৩৪ পৃষ্ঠা হতে লিপিকৃত রায়ে এমনও বলা হয়েছে ঠিকঠাক মতো চিঠি রেজিষ্ট্রি করে পোষ্ট করলে তা যদি বিনা জারীতে ফেরত আসে তবুও ধরে নেয়া হবে ডিমান্ড নোটিশ আইনের বিধান মোতাবেকই অভিযুক্ত কর্তৃক গৃহীত হয়েছে মর্মে ধরে নেয়ার মতো করেই জারী হয়েছে।

এরপরই আসে বিচারিক ও যুক্তিতর্ক স্তর। এই স্তরে আলোচ্য অত্র রায়ের প্রদত্ত কাঠামো প্রযুক্ত হবে। তথা অভিযুক্তকে কেবল মাত্র যৌক্তিক সম্ভাব্যভাবে দেখাতে হবে, চুক্তি ছিলো এবং চুক্তির কনসিডারেশন ফরিয়াদী প্রদান করে নাই। অন্যদিকে ফরিয়াদীকে দেখাতে হবে যে, কনসিডারেশন প্রদান করা হয়েছে। এমনকী উভয় পক্ষই যদি একই সাথে ব্যর্থ হয় তবে সিদ্ধান্ত ফরিয়াদীর পক্ষেই যাবে তথা কনসিডারেশন ছিলো না এটা য়ৌক্তিকভাবে প্রমানে অভিযুক্ত ব্যর্থ হয়।

উপসংহারে সূচনার কথাই আবার টেনে আনাতে হয় যে, চেকের মামলায় চুক্তিপত্র বাধ্যতামূলক করা হয়নি।

সাব্বির এ মুকীম: আইনজীবী; কুমিল্লা জজ কোর্ট। ই-মেইল: samukim1@gmail.com