প্রতিবন্ধী সুরক্ষা আইন বাস্তবায়নে সমাবেশ, ৮ দফা দাবি

প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ এর সুষ্ঠু বাস্তবায়নের দাবিতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিগণ পিকআপ ট্রাকযোগে ঢাকা মহনগরীর বিভিন্ন রাস্তায় প্রদক্ষিণ করে আইনটি বাস্তবায়নের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাবরে লিখিত একটি খোলা চিঠি বিতরণ করেন।

‘প্রতিবন্ধী নাগরিক ঐক্য’ নামের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভিত্তিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের একটি সংগঠন গতকাল শুক্রবার (৯ অক্টোবর) “ঢাকা প্রদক্ষিণ ও বিপ্লবী সমাবেশ” শীর্ষক কর্মসূচী পালন করেছে। জাতীয় সংসদের পার্শ্ববর্তী মানিক মিয়া এভিনিউতে একটি সমাবেশ করে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিগণ পিকআপ ট্রাকযোগে ঢাকা মহনগরীর বিভিন্ন রাস্তায় প্রদক্ষিণ করে।

সমাবেশে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর, টাঙ্গাইল, রাজশাহী, ফরিদপুর ও নরসিংদী সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শতাধীক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিগণ সমাবেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ এর বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।

প্রতিবন্ধী নারীদের জাতীয় পরিষদের সভাপতি নাসিমা আক্তার, এনজিডিও’র সভাপতি সুশান্ত কুমার দাস, এসডিএসএল এর বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিগণ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শুভাঙ্খী জাহিদ কবির, গাজীপুর প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংঘের সভাপতি বশির আল হোসাইন, তরী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আশফাকুজ্জামান, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নজরানা ইয়াসমিন হিরা সহ তরুণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি নুরুন্নবী জান্নাত, সাব্বির, সুদীপ্ত, সাজুসহ অনেকেই বক্তব্য প্রদান করেন।

সমাবেশের সভাপতি ও প্রতিবন্ধী নাগরিক ঐক্য এর আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম সিদ্দিকী বলেন, “আজকের সমাবেশে দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে প্রতিবন্ধী দিনমজুর থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্তিত প্রতিবন্ধী নারী ও পুরুষগণ উপস্থিত হয়েছেন। সর্বস্তরের মানুষে একই দাবিতে উপস্থিতি প্রমান করে আমরা একই বৈষম্যের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে আজ সমবেত হয়েছে। এই বঞ্চনা ও বৈষম্য থেকে আমাদের মুক্তি দিতে পারে কেবল প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন।”

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ৯ অক্টোবর তারিখে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইনের বিলে মহামান্য রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বিলটি আইনে পরিণত হয়। সেই হিসেবে শুক্রবার, ৯ অক্টোবর, ২০২০ আইনটি অষ্টম বছরে পদার্পণ করল।

সমাবেশে বক্তাগণ বলেন, আইন অনুযায়ী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রবেশগম্যতা, শিক্ষা, কর্মস্থানে কোটা, রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন, ন্যায়বিচার লাভের অধিকারসহ সম্মানজনক জীবনমান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মোট ৮২টি কার্যক্রম বাস্তবায়নের কথা থাকলেও তা বাস্তবায়নের কোন উদ্যোগ অদ্যাবধী গ্রহণ করা হয়নি। আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অদ্যাবধী কোনো মন্ত্রণালয় বা সরকারি দপ্তর নিজ নিজ বাৎসরিক বাজেটে এক টাকাও বরাদ্দ রাখেনি। এতে স্পষ্টত:ই বুঝা যায় আইন বাস্তবায়নে তারা অজ্ঞাত কারণে অনাগ্রহী। এ সকল ঘটনার মাধ্যমে আমরা বলতে চাই আইনটি বাস্তবায়িত না হওয়ার জন্য দায়ী সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলা।

এমতাবস্থায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ এর সুষ্ঠু বাস্তবায়নের করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নিকট আটটি সুষ্পষ্ট পদক্ষেপ গ্রহনের দাবি উপস্থাপন করা হয়-

১. তরুণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ নিয়োগের মাধ্যমে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর সরকারী কর্মের মোট পদের বিপরীতে ৫% প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়োগ নিশ্চিত করুন। ক্যাডার সার্ভিস, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারী কর্মে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেরজন্য ১% কোটা পুনঃপ্রবর্তন করুন;

২. প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ বাস্তবায়নের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের দায়িত্বে অবহেলার মতো ন্যাক্কারজনক কাজকে ‍দূর্নীতি ও পেশাগত অসদাচরণ হিসেবে ঘোষণা করুন;

৩. গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ সংশোধন করে প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের সকল স্তরের কমিটিতে ৫% পদ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সংরক্ষণ বাধ্যতামূলককরুন;

৪. অবিলম্বে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি উন্নয়ন অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা ও সক্রিয় করুন;

৫. প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ এর তফশিলে বর্ণিত কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয় ভিত্তিক বাজেট ও অর্থ বরাদ্দ করার ব্যবস্থা করুন;

৬. প্রচলিত নির্মাণ আইনসমূহ সংস্কারের মাধ্যমে গণস্থাপনাসমূহ সকল ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির উপযোগী করার উদ্যোগ গ্রহণ করুন। উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ গ্রহণকরুন;

৭. বাংলা ইশারা ভাষা ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিন এবং ১ বছরের মধ্যে কার্যকর করুন; এবং

৮. প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য একীভূত ও জীবনব্যাপী শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।