বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যসহ দেশের সব ভাস্কর্য রক্ষায় হাইকোর্টে রিট

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যসহ দেশের সকল ভাস্কর্য রক্ষায় হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে। রিটে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের নৈরাজ্য ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

সেই সাথে ভাস্কর্য নিয়ে জনমনে সৃষ্ট বিভ্রান্তি দূর করতে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া রিটে রুল জারি আর্জিও জানানো হয়েছে।

আজ রোববার (৬ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট করেন আইনজীবী উত্তম লাহেরি। তার পক্ষে আইনজীবী হিসেবে রয়েছেন নাহিদ সুলতানা যুথী।

অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, বঙ্গবন্ধুসহ রাষ্ট্রের যত ভাস্কর্য আছে এটা রক্ষা করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র যেন সেটা রক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা নেয় তার নির্দেশনা চেয়েছি।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার প্রতীক। আমাদের স্ট্যাচু অব লিবার্টি। বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্য আছে। বাংলাদেশের ঐতিহ্যের যে মনুমেন্টগুলো আছে এগুলো কোনো রিলিজিয়াস প্রতীকের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না। এটার বিষয়ে নির্দেশনা চেয়েছি।

রিটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে। বিচারপতি জেবিএম হাসানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে রিট আবেদনটির শুনানি হতে পারে বলেও জানা গেছে।

রিট আবেদনে বলা হয়েছে, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। তিনি স্বাধীনতার প্রতীক। তার ভাস্কর্য অরক্ষিত থাকবে এটা হতে পারে না। তাই রিটে বঙ্গবন্ধুর সব ভাস্কর্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।’

উল্লেখ্য, গত ১৩ নভেম্বর ঢাকার গেণ্ডারিয়ার ধূপখোলার মাঠে ‘তৌহিদী জনতা ঐক্যপরিষদের’ ব্যানারে এক সমাবেশ থেকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করা হয়।

একই দিনে রাজধানীর বিএমএ অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে শানে রিসালাত কনফারেন্সে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা মামুনুল হকও প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করেন।

পরে হাটহাজারীতে এক মাহফিলে অংশ নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল মামুনুলের। কিন্তু স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ তাকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিলে তাকে ছাড়াই মাহফিল হয়। ওই মাহফিলের প্রধান অতিথি হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনাইদ বাবুনগরী হুমকি দেন, ‘‘যেকোনো দল ভাস্কর্য বসালে তা ‘টেনে হিঁচড়ে ফেলে দেয়া’ হবে।’’

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে এ ধরনের বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো। চট্টগ্রামে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন মামুনুল হককে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন।

তিনি বলেন, ‘দেখতে পেলাম একজন মামুনুল হক মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করে চ্যালেঞ্জ করছেন। শেখ হাসিনাকে চ্যালেঞ্জ করছেন। মাথায় কি বুদ্ধি কম? শেখ হাসিনা তো অনেক ওপরের বিষয়। সারা দেশে যুবলীগের সঙ্গে লড়ে দেখেন। আসেন, দেখেন, খেলা হবে।’

এর পরের দিন ভাস্কর্য নিয়ে বিরোধিতাকারীদের কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। এই গোষ্ঠীর পেছনে বিদেশি মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এছাড়াও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতা করায় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সমালোচনা করেন।

এদিকে, কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে রাতের আঁধারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হয়েছে। এই কাজে দুইজন অংশ নেন।

ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, শুক্রবার দিবাগত রাত ২টা ১৬ মিনিট। দু’জনই দাড়িওয়ালা। টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবি পরিহিত দুজনের মধ্যে একজনের পিঠে ব্যাগ ঝোলানো রয়েছে।

শহরের যে সড়কটি মজমপুর গেট হয়ে পাঁচ রাস্তার মোড়ে এসে মিশেছে পায়ে হেঁটে এসে টুপিসহ দাড়িওয়ালা, পাজামা-পাঞ্জাবি পরিহিত যুবক বয়সী ওই দুজন বাঁশ বেয়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে উঠে এলোপাথাড়ি হাতে থাকা লাঠি অথবা লোহার দিয়ে ভাস্কর্যটি ভাঙচুর করে। মাত্র এক মিনিটের মধ্যে ভাস্কর্যটি ভেঙে তারা নির্বিঘ্নে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

এই ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা তীব্র ক্ষোভ জানিয়ছেন। সারা দেশে প্রতিবাদ কর্মসূচির মাধ্যমে এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন তারা।