দিনাজপুরের পার্বতীপুরে পাঁচ বছর বয়সী এক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। চার বছর আগের ধর্ষণের ওই ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা মামলার বিচার শেষ হয়নি আজো।
আইনে নির্ধারিত সময়ে মামলার বিচার শেষ না হওয়ার বিষয়টি নজরে আনা হলে ওই মামলার বিচার শেষ করে আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে দিনাজপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার (৬ ডিসেম্বর) স্বতঃপ্রণোদিত এ আদেশ দেন।
নির্ধারিত সময়ে মামলা শেষ না হওয়ার বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আতাউল্লাহ নূরুল কবীর। এ বিষয়ে আইনজীবীকে সহায়তা দিচ্ছে আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন।
আইনজীবী আতাউল্লাহ নূরুল কবীর গণমাধ্যমকে বলেন, আইনে নির্ধারিত আছে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করতে হবে। অথচ চার বছরেও মামলাটি শেষ হয়নি। দীর্ঘসূত্রতার কারণে আসামিপক্ষ সাক্ষীদের ওপর প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পাচ্ছেন। দীর্ঘসূত্রতার কারণে সাতজনের মধ্যে দুজন ইতিমধ্যে বৈরী সাক্ষী দিয়েছেন। ট্রাইব্যুনালে ২ ডিসেম্বর ধার্য তারিখে ভুক্তভোগী শিশুটিসহ তিনজন সাক্ষী উপস্থিত ছিলেন। তবে সেদিন পিপি উপস্থিত না থাকায় ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। আসামির ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট এখনো ট্রাইব্যুনালে দাখিল হয়নি—এসব বিষয় আদালতে তুলে ধরা হয়।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন জানান, ওই মামলায় অভিযোগ গঠনের পর ২০১৭ সালে মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। এখন পর্যন্ত মাত্র সাতজন সাক্ষীর সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। বিষয়টি নজরে আনা হলে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আদেশ দেন। মামলার পিপিকে (পাবলিক প্রসিকিউটর) যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে ও তদন্ত কর্মকর্তাকে সাক্ষীর হাজিরা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এদিকে ধর্ষণের পাশাপাশি নির্যাতনের কারণে শিশুটি এখনো অসুস্থ বলে জানান আইনজীবী আতাউল্লাহ নূরুল কবীর। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, শিশুটি প্রস্রাব আটকে রাখতে পারে না। সরকারি খরচে শিশুটির চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা করতে স্থানীয় মহিলা ও শিশুবিষয়ক কর্তকর্তা এবং সমাজসেবা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
চার বছর আগে ২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর শিশুটি নিখোঁজ হয়। পরদিন শিশুটিকে তার বাড়ির কাছে হলুদখেতে অসুস্থ অবস্থায় পাওয়া যায়। শিশুটির প্রজনন অঙ্গ, মাথা, গলা, হাত ও পায়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। ঊরুতে সিগারেটের ছ্যাঁকার ক্ষত ছিল। শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) আনা হয়। শিশুটির চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে ২০১৬ সালের ২১ নভেম্বর ওর প্রজনন অঙ্গে অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর সে বাড়ি ফিরে যায়।
ওই ঘটনায় শিশুটির বাবা ২০১৬ সালের ২০ অক্টোবর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে পার্বতীপুর থানায় মামলা করেন। মামলায় সাইফুল ইসলাম ও আফজাল হোসেন কবিরাজকে আসামি করা হয়। তদন্ত শেষে দুই আসামির বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। একই বছরের ৮ নভেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হয়। সাইফুল কারাগারে ও আফজাল কবিরাজ জামিনে আছেন। মামলাটি দিনাজপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন।