বুড়িগঙ্গা নদী ও তুরাগ নদের জায়গার মালিকানা দাবি করে মায়িশা গ্রুপের তিন কোম্পানির পক্ষে ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য আসলামুল হকের করা রিট খারিজ করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে আজ বুধবার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
এ রায়ের ফলে তিন প্রতিষ্ঠানের দখলে থাকা দুই নদ–নদীর ২০ একরসহ ৫০ একর জায়গা উদ্ধার ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসারে কেরানীগঞ্জের ওয়াশপুর ও ঘাটারচর মৌজা এবং সাভারের শ্যামলাপুর মৌজার এই স্থাপনাকে অবৈধ চিহ্নিত করে গত মার্চে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গেলে বাধা দেন সাংসদ আসলাম। এর বৈধতা নিয়ে তিন কোম্পানির পক্ষে হাইকোর্টে রিট করেন আসলামুল হক।
কোম্পানি তিনটি হচ্ছে সিএলসি পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড, ঢাকা ওয়েস্ট পাওয়ার লিমিডেট ও ঢাকা নর্থ পাওয়ার ইউটিলিটি কোম্পানি লিমিটেড।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২২ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল দেন। একই সঙ্গে জায়গা নিয়ে বিআইডব্লিউটিএর কাছে রিট আবেদনকারীর আবেদন ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলা হয়।
এ দিকে আসলামুল হক তাঁর দখলে থাকা জমি বুড়িগঙ্গা বা তুরাগের সীমানার মধ্যে পড়েছে কি না, তা নির্ধারণ করতে যৌথ জরিপ পরিচালনার জন্য জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনেও আবেদন করেন।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন সাংসদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি, জরিপ ও পরিদর্শন শেষে গত ৯ নভেম্বর প্রতিবেদন তৈরি করে। সরকারের আটটি সংস্থার সমন্বয়ে কমিশন ওই জরিপ করে।
কমিশনের প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ইতিপূর্বে দেওয়া রুল খারিজের জন্য আবেদন করেন। রুলের শুনানি শেষে তা খারিজ করে আজ রায় দেওয়া হয়।
রায়ে বলা হয়, রিট আবেদনকারীর দাবির বিষয়টি ঘটনাগত বিতর্কের বিষয়, তাই রিট গ্রহণযোগ্য নয়।
আদালতে নদী কমিশনের পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী রিপন বাড়ৈ। বিআইডব্লিউটিএর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী কামরুন্নাহার দীপা। রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মো. ওয়াজি উল্লাহ।
রায়ের পর আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, মায়িশা গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠানের দখলে বুড়িগঙ্গা নদী ও তুরাগ নদের জায়গা রয়েছে। নদ–নদীর ১২ দশমিক ৭৮ একর এবং নদ–নদীর তীরে ৭ দশমিক ৯২ একর জায়গা ৩টি প্রতিষ্ঠানের দখলে রয়েছে। রাজউকের ড্যাপ অনুসারে ৩০ একরের মতো জায়গা মাটি ভরাট করে জলাশয় ও নদীর প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে প্রতিষ্ঠানগুলো। রিট খারিজ হওয়ায় তীরসহ দুই নদ–নদীর এই জায়গা উদ্ধারে ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আইনগত কোনো বাধা নেই।
প্রসঙ্গত, ঢাকার আশপাশে থাকা বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা—এই চার নদ–নদীর দূষণ, অবৈধ দখল ও নদ–নদীগুলোর ভেতরে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের বৈধতা নিয়ে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে ২০০৯ সালে উচ্চ আদালতে রিট করা হয়।
একই বছরের ২৪ ও ২৫ জুন হাইকোর্ট রায় দেন। নির্দেশনায় সময়সীমা বেঁধে দিয়ে সিএস ও আরএস ম্যাপ অনুসারে নদীগুলোর সীমানা জরিপ করা, প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন ঘোষণা, নদীগুলো রক্ষায় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রণয়ন, সীমানাখুঁটি স্থাপন, নদী সীমানায় ওয়াকওয়ে নির্মাণ বা গাছ লাগাতে বলা হয়।
এ ছাড়া নদীর অভ্যন্তরে অবৈধ স্থাপনা নিয়ে ছিল অন্যতম নির্দেশনা। নির্দেশনা অনুসারে নদীর জায়গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে বিআইডব্লিউটিএ অভিযান চালায়।