সংবিধান কর্তৃক সংরক্ষিত নাগরিকদের আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার নিশ্চিতে করোনাকালীন সময়ে দেশের বিচার ব্যবস্থায় নতুন সংযোজন ভার্চুয়াল কোর্ট।
বিশেষ পরিস্থিতিতে ‘আদালত কর্তৃক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার আইন-২০২০’ অনুযায়ী সীমিত পরিসরে চালু হওয়া ভার্চুয়াল কোর্ট দেশের বিচার ব্যবস্থায় ই-জুডিসিয়ারির দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
তবে কিছুদিনের মধ্যেই ভার্চুয়াল কোর্টের আইনগত বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। উচ্চ আদালতে ভার্চুয়াল কোর্টের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা হয় রিট। কিন্তু আদালত বলছেন ভার্চুয়াল কোর্ট চালু রাখতে আইনগত বাধা নেই।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ কে এম আসিফুল হকের দায়ের করা রিটটি সম্প্রতি খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। গত ২৫ নভেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ রিটটি সরাসরি খারিজ করে আদেশ দেন।
আদালতে ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ। রিটের পক্ষে আবেদনকারী এ কে এম আসিফুল হক নিজেই শুনানি করেন।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে শনিবার (১২ ডিসেম্বর) ভার্চুয়াল কোর্টের বৈধতা নিয়ে রিট খারিজ করে দেয়া আদেশের ৩২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছে।
ভার্চুয়াল কোর্টের সুবিধা উল্লেখ করে রায়ে বলা হয়েছে, এ আইন করার কারণে বিচারপ্রার্থী, তার আইনজীবী এমনকি যেকোনো আগ্রহী ব্যক্তি ইচ্ছা পোষণ করলে বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মামলার কার্যক্রম দেখার সুযোগ রয়েছে।
রায়ে আদালত বলেন, মহামারী পরিস্থিতিতে আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের আইনটি নিয়মিত আদালতের নতুন সংযোজন। এতে বিচারপ্রার্থী জনগণের সময় ও অর্থ বাঁচবে।
করোনাকালীন সময়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিতে ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করা সঠিক পদক্ষেপ উল্লেখ করে আদালত বলেন, তবে ভার্চুয়াল কোর্টের কিছু সমস্যা রয়েছে যা সমাধান করা জরুরি।
বিশেষ করে ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধি, ভার্চুয়াল শুনানির জন্য ডিজিটাল জ্ঞান, যথাযথ প্রক্রিয়া, সাইবার সুরক্ষা এবং গোপনীয়তার বিষয়ে উন্নতির জায়গা রয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
উল্লেখ্য, করোনাকালে গত ৭ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘আদালতে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। দু’দিন পর ৯ মে ভার্চুয়াল কোর্ট সম্পর্কিত অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
অধ্যাদেশে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বা ক্ষেত্রমত হাইকোর্ট বিভাগ, সময়, প্র্যাকটিস নির্দেশনা (বিশেষ বা সাধারণ) জারি করতে পারবে।
এরপরই ভিডিও কনফারেন্সে সব বিচারপতিদের সঙ্গে বৈঠকের (ফুলকোর্ট সভা) পর ভার্চুয়াল কোর্ট চালুর সিদ্ধান্ত হয়। পরে ৮ জুলাই বিলটি সংসদে পাস হয় এবং ৯ জুলাই গেজেট প্রকাশিত হয়।