রাজশাহীতে সায়মা (৩০) নামের এক সাজাপ্রাপ্ত নারী কারাগারের পরিবর্তে নিজ বাড়িতে থেকে সন্তান প্রসব করেছেন। এতে খুশি মামলার বাদী ও আসামিপক্ষ এবং স্থানীয় গ্রামবাসী। শুক্রবার সায়মা সন্তান প্রসব করেন।
গত ১২ নভেম্বর মারামারির একটি মামলায় তাকে ও তার স্বামী জাকির হোসেনকে ব্যতিক্রমধর্মী সাজা দিয়েছিলেন রাজশাহীর একটি আদালত। আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুল ইসলাম এই দম্পতিকে কারাগারে না পাঠিয়ে কিছু সামাজিক দায়িত্ব পালনের শর্ত দিয়ে নিজ বাড়িতে এক বছরের জন্য প্রবেশনে থেকে সংশোধনের সুযোগ করে দিয়েছিলেন। এই শর্ত ভঙ্গ করলে তাদের স্থগিত হওয়া সাজা ভোগ করার জন্য জেলে যেতে হবে। দম্পতির বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ছোট নারায়নপুর গ্রামে।
মামলার প্রবেশনাধীন আসামি জাকির গণমাধ্যমকে বলেন, আদালত থেকে সংশোধনের সুযোগ পেয়ে আদালতের দেওয়া শর্তগুলো মেনে চলেছেন। দুইজন প্রবেশন অফিসার সব সময় আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন। এরইমধ্যে তারা উভয়পক্ষ আগের রাগ-ক্ষোভ ভুলে এক হয়েছেন।
মামলার এজাহারকারী ও ভিকটিম শিল্পী বেগমের ভাষ্য, ওরা ওদের ভুল বুঝতে পেরে তার কাছে ক্ষমা চেয়েছে। তিনিও ক্ষমা করে দিয়েছেন। নবজাতক শিশুটি তো নিষ্পাপ। তাই ওই শিশুটা কারাগারে চারদেয়ালের ভিতর না ভূমিষ্ট হয়ে বাড়িতে হওয়ায় তারা ও এলাকাবাসী খুবই খুশি।
আইনে নারী আসামি জন্য নারী প্রবেশন অফিসার নিযুক্তির বিধান থাকায় সায়মাকে সংশোধনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন রাজশাহী সেফ হোমের উপ-পরিচালক (ডিডি) লাইজু সিদ্দিক। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, আসামিরা প্রবেশনে যাওয়ার পর নিজেদের সংশোধনের চেষ্টা করছে। প্রবেশনের এক বছরের মধ্যে পাঁচ মাসে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, তারা প্রবেশনের সুযোগ পেয়ে আপোষ-মীমাংসাও করে ফেলেছে; অবসান হয়েছে দীর্ঘদিনের শত্রুতার। আর এই সময় এই নবজাতকটির জন্ম হওয়ায় আপোষটি আরও সহজ হয়েছে।
আসামি জাকিরের প্রবেশন অফিসার মতিনুর রহমান জানান, যেহেতু আসামিরা প্রবেশনে থেকে সব শর্তাদি পূরণ করেছে এবং তারা উভয়ে আপোষে সহাবস্থান করছে, সেহেতু তাদের পরবর্তী ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে ভাল সুপারিশ করে বিজ্ঞ আদালতের কাছে রিপোর্ট করবেন। তাদের সংশোধন করার চেষ্টার পাশাপাশি পূনর্বাসন করার উদ্যোগ নিয়েছেন। মুজিব বর্ষ উপলক্ষ্যে তাদের একটি গরুও কিনে দেওয়া হয়েছে।