মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম

ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন খসড়া অনুমোদন: থাকছে আদালতের বাইরে দেউলিয়া ঘোষণার বিধান

আদালতের বাইরে নন-ব্যাংকিং এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে দেউলিয়া ঘোষণা করার উপায় বের করে খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে মন্ত্রিসভা। একইসঙ্গে নন-ব্যাংকিং ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির জন্য ফৌজদারি আইনে বিচার, সর্বোচ্চ সাত বছরের জেল ও সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা জরিমানার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে খসড়ায়।

সোমবার (৩১ মে) ভার্চ্যুয়ালি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন, ২০২১’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ১৯৯৩ সালের ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউক্যাল অ্যাক্ট ছিল। সেটাকে পরিবর্তন করে এই আইন করা হচ্ছে। বাংলাদেশে নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ওই আইনে পরিচালিত হচ্ছিল। খসড়া আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্স কোম্পানি লাইসেন্স ছাড়া বাংলাদেশে কোনো অর্থায়ন ও ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে না।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নন-ব্যাংকিং ফাইন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষকে আকর্ষণ করতে ১৫/১৬ শতাংশ সুদ দেওয়ার ঘোষণা দেয়। যুবকের কথা নিশ্চয় মনে আছে। সেখানে অনেকে সর্বস্ব হারান। ক্যাপ করে দেওয়া যায় কিনা, সর্বোচ্চ কত টাকা জমা রাখতে পারবে। সুদের হারও নির্ধারণ করে দেওয়া যায় কিনা। যেন মানুষ বুঝেশুনে টাকা বিনিয়োগ করতে পারেন।

তিনি বলেন, কারা ঋণখেলাপি হতে পারবেন তা বলে দেওয়া হয়েছে। ইচ্ছাকৃতভাবে বা অবহেলাজনিত কারণে বা কারো সঙ্গে যোগসূত্র করে যেভাবেই হোক, সেসব বলে দেওয়া হয়েছে খসড়া আইনে। আগের আইন অনুযায়ী যে প্রতিষ্ঠানগুলো আগে ইনস্টিটিউট হিসেবে বিবেচিত হতো এখন তারা কোম্পানি হিসেবে বিবেচিত হবে, এজন্য নতুন করে সেগুলোকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে না। মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়েও কোনো পরিবর্তন আনতে হবে না।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যারাই ব্যবসা করবে সবক্ষেত্রে এটা বাংলাদেশে ব্যাংক থেকে অনুমোদন নিতে হবে। যদি কেউ দেউলিয়া হয়ে যায় বাংলাদেশ ব্যাংক কীভাবে গ্রাহকদের পাওনা বুঝিয়ে দেবে সেজন্য বাংলাদেশে ব্যাংকে ডিপোজিটের ব্যবস্থা থাকবে। দেউলিয়া করার বিষয়টি বর্তমান আইন অনুযায়ী হাইকোর্টে যেতে হয়। মন্ত্রিসভা পর্যবেক্ষণ দিয়েছে কোর্টের বাইরে এটি ফয়সালা করা যায় কিনা। তাহলে অনেক সময় ও ঝামেলা কমে যাবে। যারা ড্রাফট করবেন তারা বিষয়টি দেখবেন।

তিনি বলেন, কোর্টে গেলে দীর্ঘদিন মামলা চলবে, এরপর হাইকোর্টে যেতে হয়, আপিল বিভাগে গেলে আবার রিভিউ করতে হবে। এটা হলে একটা যুগান্তকারী দিক হবে। যদি দেউলিয়ার বিষয়টি কোর্টের বাইরে বাংলাদেশ বা অন্য কারো মাধ্যমে যদি এটি সমাধান করা যায়, যারা খসড়া দেখবেন তারা বিষয়টি দেখবেন। খসড়া আইন অনুযায়ী, নন-ব্যাংকিং ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর নানা অনিয়ম-দুর্নীতির জন্য সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা হবে। পাশাপাশি ফৌজদারি আইনেও বিচার চলবে। সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত জেল হবে বলে জানান তিনি।