মায়ের দুধ পানে নিরাপদ পরিবেশ চেয়ে ৯ মাসের শিশুর রিট, যে রায় দিলেন হাইকোর্ট
হাইকোর্ট

বিয়ে-বিচ্ছেদ রেজিস্ট্রেশন ডিজিটাল: রুলের লিখিত আদেশ প্রকাশ

বিয়ে ও ডিভোর্সের ক্ষেত্রে পারিবারিক জীবনের বৃহত্তর সুরক্ষায় ডিজিটালাইজ রেজিস্ট্রেশনের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, এ মর্মে হাইকোর্টের জারি করা রুলের বিষয়ে দেওয়া লিখিত আদেশ প্রকাশ পেয়েছে।

রুলের লিখিত আদেশ প্রকাশ পাওয়ার বিষয়টি সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান।

তিনি জানান, প্রতারণার হাত থেকে বাঁচতে পারিবারিক জীবনের বৃহত্তর সুরক্ষায় বিয়ে এবং তালাক রেজিস্ট্রেশন কেন ডিজিটালাইজ করা হবে না, তা জানতে চেয়ে গত ২৩ মার্চ হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রুল জারি করেছিলেন। চার সপ্তাহের মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব, ধর্ম সচিব এবং বিটিআরসির চেয়ারম্যানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল। ওই আদেশের লিখিত কপি প্রকাশ হওয়ার পর সেটি তারা হাতে পেয়েছেন।

২৩ মার্চ রুল জারির দিন হাইকোর্টে রিটের পক্ষে শুনানি করেছিলেন আইনজীবী ইশরাত হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার নওরোজ মো. রাসেল, সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আশিক রুবায়েত।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওইদিন জানিয়েছিলেন, বিয়ে ও ডিভোর্সের ক্ষেত্রে পারিবারিক জীবনের বৃহত্তর সুরক্ষায় ডিজিটালাইজ রেজিস্ট্রেশনের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে একটি ওয়েবসাইট প্রতিষ্ঠা করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়।

এর আগে গত ৪ মার্চ বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার নাসির হোসেনের স্ত্রী তামিমা সুলতানা তাম্মির সাবেক স্বামী রাকিব হাসান এবং তিন ব্যক্তি ও এক সংগঠন এ-সংক্রান্ত রিট দায়ের করেন। রিটকারী অপর তিন ব্যক্তি হলেন, মাগুরার শালিখা উপজেলার বদরুদ্দিন মন্ডলের ছেলে মো. সোহাগ হোসেন, উত্তরা মডেল টাউনের ৫ নম্বর সেক্টরের মো. নজরুল বিশ্বাসের ছেলে মো. রাকিব হাসান এবং নোয়াখালী সদরের আমির হোসেনের ছেলে মো. কামরুল হাসান। এছাড়া একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে এইড ফর ম্যান ফাউন্ডেশনের পক্ষে ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির সেক্রেটারি সাইফুল ইসলাম নাদিম। এই চার ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট দায়ের করেন আইনজীবী ইশরাত হাসান।

রিটকারী আইনজীবীর দাবি, বিবাহ ও ডিভোর্স রেজিস্ট্রেশন ডিজিটালি না হওয়ায় ভুক্তভোগীরা অসংখ্য মামলায় জড়াচ্ছেন। তাই ছবিসহ ওয়েবসাইটে বিবাহ ও ডিভোর্সের রেজিস্ট্রেশন করা থাকলে, যেকোনো পক্ষ বিয়ের আগে তা দেখে নিতে পারেন। তাতে একদিকে মামলার সংখ্যা কমবে, অন্যদিকে ছেলে-মেয়েরা সম্মানহানি থেকেও বাঁচবেন।

এর আগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি প্রতারণার হাত থেকে বাঁচতে বিয়ে ও ডিভোর্স রেজিস্ট্রেশন ডিজিটালাইজেশন করার নির্দেশনা চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। রাকিব হাসানসহ তিন ব্যক্তি ও এক সংগঠনের পক্ষ থেকে এ নোটিশ পাঠানো হয়।

নোটিশে উল্লেখ করা হয়, বিয়ে ও ডিভোর্স রেজিস্ট্রেশনের আইনগত বিধান থাকলেও তা ডিজিটাল না করার ফলে অসংখ্য প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া, বিয়ে গোপন রেখে ডিভোর্স না দিয়ে বিয়ে করার ঘটনা অনেক ঘটতে দেখা যাচ্ছে। এর ফলে, সন্তানের পিতৃপরিচয় নিয়েও জটিলতা দেখা যাচ্ছে। বিয়ে সংক্রান্ত অপরাধ বেড়ে অসংখ্য মামলার জন্ম নিচ্ছে। তাই, বিয়ে ও ডিভোর্স রেজিস্ট্রেশন ডিজিটাল হওয়া একান্ত আবশ্যক। বিয়ে ও ডিভোর্স ডিজিটালাইজেশন করলে তার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিয়ে সার্চ করলেই সব তথ্য বেরিয়ে আসবে। এতে প্রতারণার হাত থেকে অসংখ্য মানুষ রক্ষা পাবেন।

আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, বিয়ে ও ডিভোর্সের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন আনুষ্ঠানিকভাবে ডিজিটাল হওয়া জরুরি। বর-কনের ছবিসহ বিয়ে ও তালাকের রেজিস্ট্রেশন ডিজিটালাইজ হলে তথ্যের সত্যতা যাচাই করা যাবে।

নোটিশ পাওয়ার তিনদিনের মধ্যে বিয়ে ও ডিভোর্স রেজিস্ট্রেশন ডিজিটাল করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ করা হয়। নোটিশ দেয়ার পরও বিয়ে ও ডিভোর্স রেজিস্ট্রেশন ডিজিটাল করতে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় হাইকোর্টে এ রিট করা হয়।

তামিমা সুলতানা তাম্মি প্রথম স্বামীকে ডিভোর্স না দিয়েই নাসিরের সঙ্গে দ্বিতীয় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন- উত্তরা পশ্চিম থানায় এমন অভিযোগ তুলে সাধারণ ডায়েরি করেন তামিমার প্রথম স্বামী রাকিব হাসান। অভিযোগে তামিমার সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্কের কথা জানান রাকিব। তামিমার সঙ্গে রাকিবের ১১ বছরের সংসার ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে জিডিতে। দুজনের ৮ বছর বয়সী একটি মেয়েও রয়েছে। কিন্তু সব ফেলে নাসিরকে বিয়ে করায় থানায় অভিযোগ করেন রাকিব। এরপর আইনজীবীর মাধ্যমে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান তিনি।

চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে রাজধানীর উত্তরার একটি রেস্তোরাঁয় নাসির ও তামিমার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। নাসিরের স্ত্রী তামিমা একটি এয়ারলাইন্সের কেবিন ক্রু। তাদের বিয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর এ নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়।

সূত্র- জাগো নিউজ