আইনের পেশা মানে শুধুই অর্থ উপার্জন নয়, সমাজসেবাও বটে। নয়াদিল্লি এক অনুষ্ঠানে এভাবেই আইনজীবীদের নীতিশিক্ষার পাঠ দিলেন ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এনভি রামানা।
দেশটির কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রী কিরেন রিজেজুর উপস্থিতিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আইনের পড়ুয়া এবং স্নাতকরা সমাজের প্রান্তিক এবং নির্যাতিত অংশের কণ্ঠ হওয়ার যোগ্য’।
এদিন তিনি ভারতের আইন ব্যবস্থায় বদল আনতে আইন মন্ত্রীর ব্যক্তিগত উদ্যোগকে কুর্নিশ জানান।
এদিকে, সম্প্রতি ভারতের আইনি ব্যবস্থার সংস্কারের পক্ষে সওয়াল করেন প্রধান বিচারপতি। দেশের আইনি প্রক্রিয়া ‘ঔপনিবেশিক’, এর ‘ভারতীয়করণ’ হওয়া জরুরি, এটাই সময়ের ডাক। এমনটাই মনে করেন বিচারপতি এন ভি রামানা। ভারতের বিপুল জনসংখ্যার সঙ্গে আইনি ব্যবস্থা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলেও দাবি করেছেন তিনি।
কর্নাটকের বার অ্যাসোসিয়েশনের এক সভায় আদালতের বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিয়ে সওয়াল করেন প্রধান বিচারপতি রামানা। তাঁর কথায়, ‘সাধারণ মানুষের বিচারক এবং আদালতকে ভয় পাওয়া উচিত। একই সঙ্গে আদালতেরও সান্ত্বনাদায়ক হওয়া উচিত। যে কোনও আইনি ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছেন মামলার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা। এ জন্য আদালতের স্বচ্ছ এবং দায়বদ্ধ হওয়া উচিত।’
ভারতের আইন প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। সমস্যা সমাধানে এ দিন তাই বিকল্প আইনি ব্যবস্থার পক্ষেও সরব হন দেশের প্রধান বিচারপতি। দেশের গ্রাম ও শহরের মধ্যে বিচার ব্যবস্থার সুফল পেতে বৈষম্যের কথাও তুলে ধরেন বিচারপতি রামানা। তাঁর মতে, ‘গ্রামের অনেক মানুষ ইংরেজি ভাল করে বোঝেন না। ফলে বিচার প্রক্রিয়া থেকে দূরে চলে যান। হয়রানিক শিকার হন। দিনের শেষে বেশি অর্থও খরচ হয় তাঁদের। এই ব্যবস্থার বদল প্রয়োজন।’
অপরদিকে, আদালতে জামিন মঞ্জুর সত্বেও বন্দির কারাগার মুক্ত হওয়া সম্ভব হল না। এই ধরণের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। জামিন মঞ্জরের নির্দেশনামা কারা কর্তৃপক্ষের হাতে পৌঁছতে বিলম্বের জেরেই এই হয়রানি। যাকে ‘গুরুতর ঘাটতি’ বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। এর ফলে বন্দির মানবিক স্বাধীনতা খর্ব হয় বলেও জানিয়েছেন তিনি। বিচারপতির মতে, এই বিলম্ব যুদ্ধকালীন তৎপরায় সমাধান করার প্রয়োজন রয়েছে।
এলাহাবাদ হাইকোর্টের ভার্চুয়াল কোর্ট ও ই-সেবা পরিষেবার উদ্বোধনে গিয়ে কোর্ট থেকে জামিন আদেশের যোগাযোগে বিলম্বের কথা তুলে ধরেন শীর্ষ আদালতের বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়।
এ প্রসঙ্গে বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেছেন, ‘ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় আদালতের মঞ্জুরকৃত জামিনের নির্দেশ কারাগারে পৌঁছানোয় বিলম্বের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর ঘাটতি। যুদ্ধকালীন তৎপরতার সঙ্গে এর সমাধান প্রয়োজন। কারণ এটা বিচারাধীন ও দোষী- যার সাজা ঘোষণা স্থগিত রয়েছে- এমন বন্দিদের মানবিক স্বাধীনতার সঙ্গে সংযুক্ত।’
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস