রাজধানীর বনানীতে দ্য রেইনট্রি হোটেলে জন্মদিনের পার্টিতে দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহারের আদালত আলোচিত এ মামলার রায় দেন।
রায় ঘোষণার পর থেকেই ‘৭২ ঘণ্টা পরে পুলিশ যেন কোনো ধর্ষণ মামলার এজাহার না নেয়’ বিচারকের এমন পর্যবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীরা।
বিচারকের এমন পর্যবেক্ষণ বেআইনি ও অসাংবিধানিক উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও সেই বিচারকের বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টকে চিঠি দেবেন বলে মন্তব্য করেন।
এদিকে অনেক আইনজীবী বলছেন এটা বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের শামিল। যুক্তি হিসেবে তারা উল্লেখ করছেন অধস্তন আদালতের রায়ই শেষ কথা নয়। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি উচ্চতর আদালতে এ বিষয়ে আপিলের সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া এসব বিষয়ে গণমাধ্যমকে গঠনমূলক ভূমিকা রাখার পরামর্শও দিয়েছেন তারা।
এমনই একজন হলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানজিম আল ইসলাম। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে নিজস্ব অ্যাকাউন্টে দেয়া তাঁর এসংক্রান্ত স্ট্যাটাসটি ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম -এর পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হল-
বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বিষয়টি প্রাধান্য দিতে হবে সবার আগে। বিচারক ভুল করলে, রায়ে ক্ষুব্দ হলে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হবার সুযোগ আছে। তা ই করা উচিত। নিম্ন আদালতের রায় মানেই চূড়ান্ত কিছু নয়, কে না জানে। প্রয়োজনে কোন বিচারক যদি দুর্নীতিও করেন তা দেখারও সর্বোচ্চ অথরিটি আছে। রায়ে সংক্ষুব্ধ হলেও নির্বাহী দায়িত্বপ্রাপ্ত, গণমাধ্যমের ভূমিকা হতে হবে গঠনমূলক। মনে রাখা দরকার একটা রায়ে সংক্ষুব্ধ হয়ে এমন কিছু করা উচিত নয় যাতে পাবলিক সেন্টিমেন্ট বিচার বিভাগ সম্পর্কে ভুল মেসেজ পায়। আর রায় নিয়ে সমালোচনা করার আগে অবশ্যই রায়ের সার্টিফাইড কপি হাতে নিয়ে পড়ে তারপর মন্তব্য করা উচিত। তবে সর্বাগ্রে বিচার বিভাগের কর্মকর্তাগণ নিজেদেরই এগিয়ে আসতে হবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার জন্য। বিচারককে হতে হবে জেন্ডার সেনসিটিভ এবং বিচক্ষণ। আর এর চেয়ে দরকার সৎ সততা এবং তদবির এড়িয়ে চলা। বিচারক মানে একটি সরকারি চাকুরী নয়। এটা একটা পবিত্র দায়িত্ব। এ বিষয়টি অনুধাবন করলেই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সবচেয়ে পাকাপোক্ত হবে।