বিচারক (প্রতীকী ছবি)
বিচারক (প্রতীকী ছবি)

বিচারকের অনন্য উদ্যোগ, ঠিকানাহীন ১২ শিশু পেল অভিভাবক

দেশে এই প্রথম নিঃসন্তান দম্পতিদের সন্তান লাভের সুযোগ করে দিতে অনন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন রাজশাহী সদর আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ মো. আবু সাঈদ। গত তিন বছরে আবু সাঈদের আদালতের মাধ্যমে পিতৃ-মাতৃহীন ১২টি শিশুকে নিঃসন্তান দম্পতিরা পেয়েছেন।

সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত রাজশাহীর ছোটমণি নিবাসে এতিম, অসহায়, পরিত্যক্ত, হারিয়ে যাওয়া বিপন্ন শিশুদের প্রতিপালন ও পুনর্বাসন করা হয়। সেখান থেকেই বাচ্চাদের নিঃসন্তান দম্পতিদের দেওয়া হচ্ছে। যদিও আদালতের ভাষায় এই মা-বাবা হচ্ছেন ‘আইনি অভিভাবক’।

শুধু সন্তানকে আইনি অভিভাবকের কাছে তুলে দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেননি বিচারক আবু সাঈদ। তিনি প্রতি তিন মাস পরপর এই শিশুদের আদালতে আনার নিয়ম করে দিয়েছেন। বিচারক এজলাসে পর্যবেক্ষণ ও জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এমনকি তাঁর খাসকামরাতেও এই শিশুদের আলাদাভাবে খোঁজখবর নেন, তাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না।

এ বিষয়ে বিচারক আবু সাঈদের ভাষ্য, তাঁর সন্তান লাভে বিলম্ব হয়েছিল। সন্তানের জন্য নিঃসন্তান দম্পতির আকুতিটা তিনি সহজেই উপলব্ধি করেন। যদিও পরে তাঁর স্বাভাবিকভাবে সন্তান হয়। তাঁর মেয়ের বয়স এখন ছয় বছর। তার নাম মানহা। সন্তানের প্রতি মমত্ববোধের জায়গা থেকে তিনি নিজের মেয়ের নামের আদ্যক্ষর দিয়ে ১২ জন ছেলেমেয়ের একটি করে ডাকনাম রেখে দিয়েছেন। নামগুলো- মানছুরা, মানজুরা, মাশরুরা, মিরালনা, মুনতাহা, মাহিন, মাশরাফি, মুবিন, মারভিন, মাহদি, মাহির ও মারজিনা।

বিচারক বলেন, সন্তান নেওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা আছে, এমন দম্পতি ছোটমণি নিবাস থেকে একটি বাচ্চা নেওয়ার জন্য এই আদালতে আবেদন করেন। আদালত দম্পতির সন্তানের আকাঙ্ক্ষার সত্যতা, সন্তান প্রতিপালনের আর্থিক যোগ্যতা ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করেন। আইনজীবী আসুরা খাতুন ও রত্নালেখা নাসরিনের মাধ্যমে এই আবেদনগুলো করেছেন।

রাজশাহী ছোটমণি নিবাসের উপতত্ত্বাবধায়ক মনিরুজ্জামান বলেন, আত্রাই উপজেলার আহসানগঞ্জহাট সেতুর ওপরে একটি শপিং ব্যাগে ভেজা কাপড়ের পোঁটলায় একটি এবং নীলফামারীর পাটগ্রামে ভুট্টাখেতে লুঙ্গি ও ওড়নায় জড়ানো অবস্থায় অপর একটি নবজাতক পাওয়া গিয়েছিল। এমন ধরনের শিশুরাই ছোটমণি নিবাস থেকে এই সব নিঃসন্তান দম্পতির কাছে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সমাজে অনেক উচ্চ শিক্ষিত এবং সচ্ছল নিঃসন্তান দম্পতি রয়েছে, যাঁদের পারিবারিক জীবনে একটি সন্তানের বড় অভাব। আর একটি অসহায় শিশুর রয়েছে মা–বাবার অভাব। এই পরিপূরক অনুভূতিকে অনুধাবন ও সমন্বয় সাধন করেছেন রাজশাহী সদর আদালতের বিচারক সাঈদ আহমেদ স্যার। পরস্পরকে দিয়েছেন পূর্ণতা, প্রশান্তি এবং শিশুর সুন্দর ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি। এই উদ্যোগ অনুকরণীয়।’