হাইকোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও আদালতে হাজির না হয়ে তিন বছরের শিশু সন্তানকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় চলে গেছেন বাংলাদেশি বাবা শাহিনুর টি আই এম নবী।
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান রোববার (২১ নভেম্বর) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
আদালতে শিশুর মায়ের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম। তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার কাজী মারুফুল আলম ও ব্যারিস্টার ফাইজা মেহরিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
এর আগে শিশুসহ তার বাবাকে আজকের নির্ধারিত তারিখে বিকাল ৩টার মধ্যে হাজির করতে ডিএমপি কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
মামলাটি আজ (২১ নভেম্বর) শুনানিতে ওঠে। শুনানিকালে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান আদালতকে জানান, গত ১৬ নভেম্বর ওই শিশুকে নিয়ে তার বাবা অস্ট্রেলিয়া চলে গেছেন।
এসময় আদালত রাষ্ট্রপক্ষে থাকা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমারের কাছে জানতে চান, শিশুসহ বাবার দেশত্যাগের ঘটনা আদালত অবমাননার পর্যায়ে পরে কিনা?
জবাবে তিনি বলেন, এটি অবশ্যই আদালত অবমাননার শামিল। পরে আদালত এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) দিন নির্ধারণ করেন।
গত ১৬ নভেম্বর শিশু সন্তানকে নিয়ে তার বাবা বাংলাদেশি নাগরিক শাহিনুর টি আই এম নবীকে দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। একই বিষয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশকে এ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
শিশুর মা ভারতীয় নাগরিক সাদিকা সাঈদের রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট এ আদেশ দেন।
তবে এ রিটে শিশুর বাবার আইনজীবী থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
গত ২৫ আগস্ট হাইকোর্ট দুই মাসের জন্য ওই শিশুকে ভারতীয় নাগরিক মা সাদিকা সাঈদের হেফাজতে রাখতে আদেশ দেন।
আদেশে বলা হয়, মানবাধিকার সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ল অ্যান্ড ডেভলাপমেন্টের (ফ্লাড) ব্যবস্থাপনায় থাকবে ওই মা ও শিশু। তবে বাংলাদেশি বাবা সপ্তাহে তিনদিন সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত শিশুর সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন। এই দুই মাস সাদিকা সাঈদের পাসপোর্ট গুলশান থানায় জমা রাখতে বলা হয়।
তবে হাইকোর্টের আদেশের পর শিশুর বাবা তার সন্তানকে উন্নত পরিবেশে গুলশান রাখার ইচ্ছার কথা জানান। শিশুর মঙ্গলের কথা চিন্তা করে শিশুর মা রাজি হন। এরপর থেকে গুলশান ক্লাবেই শিশুর মাসহ তারা অবস্থান করছিলেন।
এক পর্যায়ে বেড়ানোর কথা বলে গুলশান ক্লাব থেকে শিশুকে নিয়ে যান তার বাবা। তবে এরপর আর শিশুকে গুলশান ক্লাবে মায়ের কাছে দিয়ে যাননি বাবা। এর মধ্যে শিশুর মায়ের বিরুদ্ধে জিডিও ও মামলাও করা হয়।
পরে গত ১৫ নভেম্বর শিশুটিকে হাজির করতে আইনজীবীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। কিন্তু শিশুর বাবা আইনজীবীর সঙ্গে কোন যোগাযোগ করেননি। এ কারণে আইনজীবী থেকে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন।
প্রসঙ্গত, ভারতের বিয়ে সংক্রান্ত ওয়েবসাইট থেকে অন্ধ্রপ্রদেশের হায়দারাবাদের সাদিকা সাঈদ শেখ নামে এক নারীকে পছন্দ করেন ঢাকার বারিধারার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান শাহিনুর টি আই এম নবী।
মেয়েটিও হায়দারাবাদের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের। ২০১৭ সালে হায়দারাবাদে তাদের ঘটা করে বিয়ে হয়। বিয়ের পর মালেশিয়ার কুয়ালালামপুরে বসবাস শুরু করেন তারা। কয়েক মাস পর ঢাকায় চলে আসেন।
এর মধ্যে ২০১৮ সালে এই দম্পতির পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহের সৃষ্টি হয়। সাদিকা শেখকে মারধরও করেন তার স্বামী। ভারতের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে স্ত্রীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
বিষয়টি ভারতে মেয়েটির আত্মীয়-স্বজনরা জানতে পারেন। তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে প্রথমে ভারতীয় হাইকমিশনে যোগাযোগ করা হয়। তারপরও সমাধান হয়নি।
পরে মেয়েটির বোন মানবাধিকার সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ল অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের(ফ্লাড) কাছে আইনি সহায়তা চান।
এরপর গত ৮ আগস্ট সাদিকা শেখ ও তার শিশু সন্তানসহ আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে রিট করে ফাউন্ডেশন ফর ল অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের (ফ্লাড) পরিচালক ব্যারিস্টার কাজী মারুফুল আলম ও ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের শিক্ষক লুলান চৌধুরী (মেয়েদের পরিচিত)।
এদিকে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করার পরপরই বাংলাদেশি নাগরিক শাহিনুর টি আই এম নবী তার স্ত্রীকে ডিভোর্স দেন।