ই-জুডিসিয়ারি প্রজেক্টের মাধ্যমে সারাদেশের সব আদালতে ই-ফাইলিং ব্যবস্থা চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। এ সময় তিনি বলেন, ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে মামলা দায়ের করা হলে বিচারপ্রার্থী জনগণ ও আইনজীবীদের সঙ্গে আদালতের প্রত্যক্ষ সংযোগ স্থাপিত হবে। তাছাড়া বিচার প্রক্রিয়ার শুরুতেই বিচারপ্রার্থী জনগণের অংশগ্রহণ বাড়বে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আজ বুধবার (১ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্টে ডিজিটাল আর্কাইভিং এবং ই-ফাইলিং ব্যবস্থাপনার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল আর্কাইভিং এবং ই-ফাইলিং ব্যবস্থাপনা বিচার বিভাগের ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়াকে বেগবান করবে। বিচার বিভাগে বিচারপ্রার্থীর একসেস টু জাস্টিস নিশ্চিতকরণ ত্বরান্বিত করবে; মামলার দীর্ঘসূত্রিতা কমে সহনীয় পর্যায়ে আনতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
আনিসুল হক বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি বৈষম্যহীন সমাজ ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অন্যতম লক্ষ্য নিয়ে এদেশের স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। স্বল্প সময়ের জন্য দেশ গঠনের দায়িত্ব নিয়ে তিনি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন আইন প্রণয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। একটি স্বাধীন বিচার বিভাগের ভিত বঙ্গবন্ধুই রচনা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত স্বপ্নের বাস্তবায়ন করে চলেছেন তারই সুযোগ্যকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী সরকারের সব সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় বিচার বিভাগেও নানামুখী ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আধুনিকায়নের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়াকে আরও জনবান্ধব ও সহজীকরণ করতে তার আন্তরিক ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় করোনা মহামারিকালে মানুষের ন্যায়বিচার নিরবচ্ছিন্ন রাখতে এবং কারাগারে বন্দির সংখ্যাধিক্ষ্য বিবেচনা করে ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০’ জারি করা হয় যা পরবর্তীতে জাতীয় সংসদে পাস হয়। এই আইন প্রণয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও অধস্তন আদালতে ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করা হয়- যা বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা ডিজিটালাইজেশনে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অধিকারকে অব্যাহত রাখতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিচার বিভাগের আধুনিকায়ন অপরিহার্য।
‘প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ দিকনির্দেশনায় বিচার বিভাগের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ পরিকল্পনা ই-জুডিসিয়ারি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি এখন একনেকে পাসের পর্যায়ে রয়েছে। আজকের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে তা উচ্চ আদালতের ডিজিটালাইজেশনে আরেকটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।’
আনিসুল হক বলেন, ই-জুডিসিয়ারি প্রজেক্টের মাধ্যমে সারাদেশের সব আদালতে ই-ফাইলিং ব্যবস্থা চালু করা হবে। ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে মামলা দায়ের করা হলে বিচারপ্রার্থী জনগণ ও আইনজীবীদের সঙ্গে আদালতের প্রত্যক্ষ সংযোগ স্থাপিত হবে এবং বিচার প্রক্রিয়ার শুরুতেই বিচারপ্রার্থী জনগণের অংশগ্রহণ বাড়বে। সুপ্রিম কোর্টে ডিজিটাল ফাইলিং বাস্তবায়নের মাধ্যমে সব মামলা সংশ্লিষ্ট ফাইল দ্রুততার সঙ্গে অনলাইনে দায়ের, গ্রহণ ও অনুমোদন করা যাবে। ফলে সাশ্রয় হবে আদালতের কর্মঘণ্টার। তাছাড়া বিচারপ্রার্থীর বিচারপ্রাপ্তির অধিকার অধিকতর স্বচ্ছ, দ্রুত এবং সহজলভ্য হবে।
মন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল আর্কাইভিং সিস্টেমের মাধ্যমে ২০০০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সব মামলার রায়ের কপি সংরক্ষণের যে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হাতে নেওয়া হয়েছে তা পর্যায়ক্রমে নথির ডিজিটাল আর্কাইভিং ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। এর মাধ্যমে আদালতের নথি ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সাধিত হবে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে নথিপত্র সংরক্ষিত থাকবে বিধায় এর পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, অ্যানালগ পদ্ধতিতে মামলার নথি বা সংশ্লিষ্ট আদেশ খুঁজে বের করার ঝামেলা ও সময় হ্রাস পাবে এবং সংরক্ষণ প্রক্রিয়া ডিজিটাল হওয়ায় আদালতের ভৌত অবকাঠামোর প্রয়োজনীয়তাও বহুলাংশে কমে যাবে। পুরো প্রক্রিয়ায় অধিকতর স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর বক্তব্য দেন।