বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়া শিশুদের জন্য শিশু প্রবেশন আইন দ্রুত সংশোধন ও কার্যক্ষম করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া শিশু অধিকার সুরক্ষায় সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সম্মিলিতভাবে কাজ করার উপর গুরুত্ব প্রদানের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে শনিবার (৪ ডিসেম্বর) “জুভেনাইল জাস্টিস সিস্টেম: চ্যালেঞ্জ অ্যান্ড ওয়ে ফরোয়ার্ড” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকরা এ মতামত দেন। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ (অবসরপ্রাপ্ত) মাহমুদ জাহাঙ্গির আলম মোল্লাহ।
গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকদের বক্তব্য
মাহমুদ জাহাঙ্গির আলম মোল্লাহ বলেন, আজকের যারা শিশু আগামী দিনে তারাই দেশের নেতৃত্ব দিবে। তারা ভুলবশত বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে শিশুদেরকে অন্যান্য আসামির সঙ্গে একসাথে রাখা অমানবিক। অপরাধের ক্ষেত্রে শিশুদেরকে শুধু শাস্তি দিলেই চলবে না বরং তারা যেন কোনও অপরাধে জড়িত হতে না পারে সেজন্য আইনের মাধ্যমে কাজ করতে হবে।
তিনি তার প্রবন্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ মানবাধিকার কর্মী ও উন্নয়ন সংস্থার লোকজনের শিশু আইন সম্পর্কে সম্যক ধারণার অভাবের কথাও উল্লেখ করেন।
ডিপার্টমেন্ট অব সোশাল সার্ভিসের উপপরিচালক রাকিব হাসান বলেন, সমাজের বড়দের প্ররোচনায় শিশুরা বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে। যার ফলে কিশোর গ্যাং তৈরি হচ্ছে। শিশু সংশোধন কেন্দ্রগুলোতে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত শিশু রয়েছে। তাই তিনি শিশু প্রবেশন আইন দ্রুত সংশোধন ও কার্যক্ষম করা, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সম্মিলিতভাবে কাজ করার উপর গুরুত্ব প্রদান করেন।
ইউনিসেফের শিশু সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ জামিলা আখতার বলেন, ‘সমাজভিত্তিক শিশু সুরক্ষা কৌশল’র সঠিক বাস্তবায়নই সমাজে শিশু অপরাধ দমন ও তাদের প্রতি সুবিচার নিশ্চিত করা সম্ভব। এক্ষেত্রে ইউনিসেফ পাঁচটি মন্ত্রনালয়ের সঙ্গে কাজ করছে।
মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ডে কেয়ার) বেনুয়ার খাতুন বলেন, শিশুরা কেন অপরাধে জড়িত হচ্ছে এ বিষয়ে প্রথমে কাজ করা ও পারিবারিক সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।
সভাপতির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, শিশু আইন ২০১৩ অনুযায়ী প্রতিটি থানায় একটি “শিশু বিষয়ক ডেস্ক” প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। শিশু আইন ১৯৭৪ এর অধীনে দুটি কিশোর আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান আইনে প্রতিটি জেলা সদর এবং মেট্রোপলিটন এলাকায় শিশুদের প্রতি সুবিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কমপক্ষে একটি করে ‘শিশু আদালত’ স্থাপন করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সহসভাপতি সীমা জহুর বলেন, আমরা শিশুকে শিশু হিসেবেই দেখবো, তাকে অপরাধী হিসেবে দেখবো না। এই শিক্ষাটি পরিবার থেকেই শুরু করতে হবে। সমাজে বড়রা বিভিন্ন সময়ে শিশুদেরকে বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত করছে। তাই এখনই সামাজিকভাবে সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি।
অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমকর্মী, সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর প্রতিনিধি ও আইনজীবীরা অংশগ্রহণ করেন।
বৈঠকের প্রেক্ষাপট
প্রতি বছরের মতো বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি এ বছর ২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ (সিক্সটিন ডে অ্যাক্টিভিজম) পালন করছে। এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি ওই গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করে।