একাত্তরে গণহত্যা চালানোর ঘটনায় অনেক পাকিস্তানি বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি সমর্থন করে বলে জানিয়েছেন দেশটির সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসেইন হাক্কানী। তিনি বলেন, এই দাবি তাদের সবার, যারা বিশ্বাস করে সমষ্টিগত ক্ষমাপ্রার্থনা কষ্টমোচন করে। ক্ষমা চাইলে অতীতকে পেছনে ফেলে দুই দেশের মধ্যে নতুন সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে।
রাজধানীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রোববার (৫ ডিসেম্বর) তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বিশ্ব শান্তি সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসেইন হাক্কানী। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে শনিবার (৪ ডিসেম্বর) দুই দিনব্যাপী শান্তি সম্মেলন শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, তিনি ১৪ বছর বয়সে করাচিতে প্রথম ও শেষবার বঙ্গবন্ধুকে দেখেছিলেন এবং তখন থেকেই তার ভক্ত হয়ে যান। তিনি বলেন, ‘১৯৭০ সালে জাতীয় নির্বাচনে প্রচারণা চালাতে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। করাচি ন্যাশনাল পার্কের জনসভায় পশ্চিম পাকিস্তান ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের জন্য ন্যায় প্রতিষ্ঠা, অধিকার, গণতন্ত্র ও ন্যায্যতার দাবিতে বঙ্গবন্ধু সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।
হোসেন হাক্কানি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের নয়, তিনি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেতা। যদি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতেন, আমি নিশ্চিত, তিনি পাকিস্তানকে বাংলাদেশের ওপর ১৯৭১ সালে অত্যাচার চালানোর জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলতেন। আমার মতো আরও অনেক পাকিস্তানিও এটা সমর্থন করে। এই দাবি সবার। যারা বিশ্বাস করে, সমষ্টিগত ক্ষমাপ্রার্থনা কষ্ট মোচন করে এবং দুই দেশের মধ্যে ভুলে ভরা অতীতকে পেছনে ফেলে নতুন সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে।’
বিশ্ব শান্তি সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের শিক্ষার হার, মাথাপিছু আয় ও কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেশি বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালের আগে বাংলাদেশ ভারতের অংশ ছিল এবং ১৯৭১ পর্যন্ত পাকিস্তানের অংশ। এ থেকে বোঝা যায় স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশ কতটা এগিয়েছে। এটি সম্ভব হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্য।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মহান পিতার যোগ্য কন্যা অভিহিত করে হাক্কানী বলেন, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যাদের পরিবারকে কেড়ে নেওয়া হয়, তাদের মধ্যে সবাই সেই কষ্টকে শক্তিতে পরিণত করে মা-বাবার স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারে না।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর পথ অনুসরণের জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাই। বঙ্গবন্ধুর চিন্তা এবং শেখ হাসিনার কর্মের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যার ভেতরে ও সীমান্তে কোনো সহিংসতা নেই।
এর আগেও একাত্তরের হত্যাকাণ্ডের জন্য পাকিস্তানকে ক্ষমা চাওয়ার জোর দাবি জানিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের সাবেক এই রাষ্ট্রদূত। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গত ৩১ মার্চ ব্রাসেলসে বাংলাদেশ দূতাবাস এক ওয়েবিনারের আয়োজন করে।
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে গিয়ে পাকিস্তানের সাবেক কূটনীতিক বলেন, পাকিস্তানের জনগণের উচিত তাদের সরকারকে আহ্বান করা, যাতে তারা বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে সংঘটিত সব ধরণের নির্যাতনের জন্য ক্ষমা চায়।