বিচারপতির বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা মামলা’ বিচার বিভাগের জন্য হুমকিস্বরূপ: হাইকোর্ট
বাংলাদেশের উচ্চ আদালত

ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ১৮ মামলা: এসপির বিরুদ্ধে বিচারিক তদন্তের নির্দেশ

দিনাজপুরে এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ১৮ মামলা দায়েরের ঘটনায় পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে তদন্ত করে রংপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে আগামী ৩ মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন আদালত।

হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ রোববার (৫ ডিসেম্বর) এ নির্দেশ দেন।

এ সংক্রান্ত রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত রুলসহ আদেশ দেন। রুলে ওই পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশ মহাপরির্দশকসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদেরকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।

পরে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া সাংবাদিকদের আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ‘মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে ব্যবসায়ী খলিলুল্লাহ্ আজাদের বিরুদ্ধে ১৮ মামলা দায়ের করা হয়। ওই ঘটনায় পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ মহাপরিদর্শকের কাছে একটি আবেদন জানানো হয়। তবে সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।

গত ১৫ নভেম্বর দিনাজপুর জেলা যুবলীগের সাবেক সহসম্পাদক ও ঠিকাদার মো. খলিলুল্লাহ আজাদ মিল্টন এই রিট দায়ের করেন। রিটে এ বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দিনাজপুরে মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা হয়েছে। ১৩টি জিআর ও ৫টি ননজিআর মিলে মোট ১৮টি মিথ্যা মামলার বেশিরভাগেরই বাদী পুলিশের ‘সোর্স’।

এর আগে গত ২০ নভেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন করেন দিনাজপুরের ব্যবসায়ী মো. খলিলুল্লাহ আজাদ মিল্টন। এতে তিনি তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া সব মামলার বিভাগীয় তদন্তের পাশাপাশি পুলিশের হয়রানি থেকে বাঁচার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করেন।

রিটকারীর অভিযোগ

সংবাদ সম্মেলনে খলিলুল্লাহ আজাদ মিল্টন জানান, দেশে করোনার শুরুতে তিনি দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ সহায়তা তহবিলে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। এর কয়েকদিন পর খানসামা থানার ওসি দিনাজপুরের পুলিশ সুপারের কথা বলে তাদের ত্রাণ তহবিলে পাঁচ লাখ টাকা অনুদান দিতে বলেন। এত টাকা তার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয় জানালে ওসি বিষয়টি ভেবে দেখতে বলে চলে যান। এর কয়েকদিন পর ওসি আবারও এ বিষয়ে কথা বললে তিনি বিরক্ত হন এবং কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন। তার পর থেকেই তার গ্রাম ও শহরের বাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় জেলা পুলিশের বিভিন্ন সংস্থা তার বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু করে।

মিল্টন বলেন, গত বছর ঢাকায় এলে ১৯ নভেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় খানসামা থানাপুলিশ। আমাকে পেছনে হ্যান্ডকাফ ও কোমরে রশি পেঁচিয়ে বেঁধে নিয়ে যায় পুলিশ। আমার ব্যবহৃত একটি পরিত্যক্ত গাড়িকে (ঢাকা মেট্রো-গ-০৩-২৭৯৬) চোরাই গাড়ি হিসেবে উদ্ধার দেখায়। অথচ সেই গাড়িটি জয়পুরহাট মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ খায়রুল ইসলামের কাছ থেকে পুলিশের এসআই কাইয়ুম কেনেন। তার কাছ থেকে কেনেন ইসমত আরা নামের এক নারী। ইসমত আরার কাছ থেকে কেনেন ফয়সাল আজিজ চঞ্চল নামে আরেক ব্যক্তি। চঞ্চলের কাছ থেকেই আমি গাড়িটি কিনি।

এই মামলার আগে আমার বিরুদ্ধে দেশের কোথাও একটি জিডি কিংবা মামলা ছিল না। জেলে থাকা অবস্থায় প্রায় দুই মাসের ব্যবধানে আমার নামে ১৩টি জিআর ও ৫টি নন-জিআর মামলা দেওয়া হয়। সব মামলায় খুব স্বল্পসময়ে চার্জশিট দেওয়া হয়। তিনি বলেন, গত ২৫ মার্চ দিনাজপুর জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পাই। পরে একটি ব্যাংকের অস্তিত্বহীন শাখার একটি অ্যাকাউন্টে টাকা দেখিয়ে আমাকে ও আমার মায়ের নামে মানিলন্ডারিং ও প্রতিরোধ আইনে মামলা দেওয়া হয়। মামলায় সেই পরিত্যক্ত চোরাই গাড়িটি অবৈধ টাকায় কেনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্য সব মামলার অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন, সে বিষয়ে আমার কাছে তথ্য-প্রমাণ রয়েছে।