মামলা পরিচালনা সঠিকভাবে করার পাশাপাশি অযথা সময় নেওয়া বা মামলার দীর্ঘসূত্রিতা না করার তাগিদ দিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। একইসঙ্গে আইনজীবীদের পেশাগত নৈতিকতা মেনে চলার পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি বলেন, আইনজীবী হিসেবে মক্কেল, আদালত ও সাধারণ জনগণের প্রতি আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। এসব দায়িত্ব সমন্বয় করার চেষ্টা করতে হবে। মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য অন্যায় পরামর্শ দেওয়া যাবে না। আপনার বুদ্ধি-পরামর্শে কারো যেন ক্ষতি না হয়।
একটা জিনিস মনে রাখবেন, আপনি যেই ধর্মেই বিশ্বাস করেন না কেন একদিন কিন্তু সকলকেই স্রষ্টার সামনে দাঁড়াতে হবে। সেদিন কিন্তু জবাব দিতে হবে, আপনি কি করেছেন।
আজ শনিবার (১১ ডিসেম্বর) স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির আইন অনুষদের আয়োজনে নবীন আইনজীবীদের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারক ওবায়দুল হাসান। এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বার কাউন্সিলের লিগ্যাল এডুকেশন কমিটির চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাজী নজিবুল্লাহ হিরু।
নবীন আইনজীবীদের সামনে অপার সম্ভাবনা উল্লেখ করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা বলেন, এই সুযোগটা নিতে হবে। এক্ষেত্রে প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে। পড়ালেখা করে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারলে একদিন সুপ্রিম কোর্টের বিচারক কিংবা প্রধান বিচারপতিও হতে পারবেন। যদি কেউ মনে করে থাকেন, লেখাপড়া না করে শুধু কথা বলব, তাহলে কিছুই হবে না।
আইনজীবী হিসেবে শুরুর দিকের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, আমার সিনিয়র ছিলেন প্রয়াত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম স্যার। আমি উনার বাসায় কাজ করতে যেতাম। মাঝেমধ্যে কাজ করতে করতে রাত একটা-দেড়টা বেজে যেত। তখন উনার বাসায় থেকে যেতে হত।
আমিন উদ্দিন বলেন, আমি প্রচুর কাজ করতাম সে সময়। কেননা কাজ না করলে শেখা যায়না। আর আইন পেশা গুরুমুখী বিদ্যা। সিনিয়দের কথা শুনে ঠিকমত কাজটা করলে অনেক কিছু শেখা সম্ভব।
তিনি বলেন, আদালতে গিয়ে না ঘুমিয়ে মনযোগী হলে দেখেও অনেক কিছু শেখা যায়। অবসর সময়ে আদালতে থাকার চেষ্টা করবেন।
তিনি আরও বলেন, যারা ফৌজদারি মামলা পরিচালনা করতে চান তাঁরা একজন ভালো ক্রিমিনাল ল’ইয়ার এর কোর্ট ট্রায়াল ফলো করবেন। একটা মামলা কীভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে, কীভাবে তিনি আসামিকে জেরা করছেন এসব শিখবেন। এছাড়া দেওয়ানী মামলায় খেয়াল করবেন কীভাবে কাগজপত্র উপস্থাপন করা হয়। এসব শিখে নিতে হবে।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আরেকটা বিষয় হচ্ছে, আচরণের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। এমন কোন কিছু করা যাবে না, যা দেখে আদালত, সহকর্মী বা বিচারপ্রার্থীদের কাছে অসদাচরণ মনে হয়। আমি সজ্ঞানে কোনদিন খারাপ ব্যবহার করি নাই। আপনাদেরকে অনুরোধ করব আদালতের প্রতি ভাল ব্যবহার করতে। আদালতের প্রতি সম্মান দেখালে সম্মান বাড়বে।
পোশাকের প্রতি গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, পোশাক-পরিচ্ছেদ ভালো হতে হবে। তা না হলে মক্কেল ভাববে আপনি ভাতে মরা উকিল। ফলে মামলা, ফিস কোনটাই দিবে না। আপনার পোশাক যেমনই হোক সেটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি করে পরিধান করতে হবে।
সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল হাসানের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, উনি কিন্তু লম্বাচওড়া কেউ ছিলেন না। তবে উনি দেশের আইন জগতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উকিল হতে সক্ষম হয়েছিলেন। আইন অঙ্গনে অন্যতম নমস্য ব্যক্তি ছিলেন। সংবিধান নিয়ে অসাধারণ বই লিখেছেন। ‘কনস্টিটিউশনাল ল’ অব বাংলাদেশ’ খুবই ভাল মানের বই। আপনারা পড়ে দেখবেন। উনাকে প্রতিটা আইনজীবী-বিচারকসহ সকলেই সম্মান করতেন। কারণ উনার অনবদ্য পাণ্ডিত্য। আপনারও পাণ্ডিত্য অর্জনের চেষ্টা করুন। ছোটখাট একজন মানুষ নিজেকে আইন অঙ্গনে নিজেকে অন্য লেভেলে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন। আইনজীবীদের মূল শক্তি তাঁর পড়াশোনা। যে যত বেশি জানবে, পড়বে যে তত বড় আইনজীবী হবে।
বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বলেন, বলা হয়ে থাকে মানুষ তাঁর আশার সমান বড়। তাই আপনারা আশাও অনেক বড় বড় করবেন। তবেই সে পর্যন্ত পৌঁছাবেন। লক্ষ্য যদি হয় সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হবেন, তাহলে ঠিকই একদিন বিচারক হতে পারবেন। এজন্য লক্ষ্য হতে হবে অনেক উপরে। সাথে সাথে এই লক্ষ্য অর্জনে পর্যাপ্ত পরিশ্রম করতে হবে। লক্ষ্য ছোট হলে উঁচুতে পৌঁছাতে পারবেন না। প্রত্যেকেই অনেক বড় হবার লক্ষ্য রাখবেন। তাহলে একদিন সব ধাপ অতিক্রম করে একদিন সেখানে পৌঁছে যাবেন।