শাহ্ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান: অবিভক্ত বাংলার আইন ও সংস্কৃতিচর্চার ইতিহাসে এক অন্যান্য সাধারণ প্রতিভার অধিকারী ছিলেন আবুল হুসেন (১৮৯৬-১৯৩৮)। অনগ্রসর সমাজে জন্মগ্রহণ করে তিনি এ সমাজের অগ্রসরমানতার জন্য বদ্ধপরিকর ছিলেন। তিনি বিশ শতকের ত্রিশ দশকে ঢাকা ও কলকাতা শহরের অকাল প্রয়াত একজন বুদ্ধিজীবী, আইনজ্ঞ ছিলেন। সমকালে পূর্ব বাংলায় তাঁর মতো কৃতি বুদ্ধিজীবী বাঙালি সমাজে ছিল না। পূর্ববাংলার বাঙালি সমাজে আত্মসচেতনতা সৃষ্টি ও মুক্ত বুদ্ধিপ্রসারে তার ভূমিকা অবিস্মরণীয়।
আজকের তরুণ প্রজন্ম তাঁকে যদি না জেনে থাকে, সে ক্ষতি তাদেরই। তিনি শুধু আইনজ্ঞই ছিলেন না, ছিলেন একাধারে অধ্যাপক, আইনজীবী, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক কর্মী ও সংগঠক। বাংলাপিডিয়ার তথ্যানুযায়ী এই খ্যাতিমান মনীষী ১৮৯৬ সালের ৬ই জানুয়ারি যশোর জেলার পানিসারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৮ সালের ১৫ই অক্টোবর মাত্র ৪২ বছর বয়সে কলকাতায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। আবুল হুসেন অসাধারণ কৃতী ছাত্র ছিলেন। যশোর জিলা স্কুল থেকে বৃত্তিসহ ম্যাট্রিকুলেশন (১৯১৪), কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে আইএ (১৯১৬), বিএ (১৯১৮) উভয় পরীক্ষাতেই বৃত্তিসহ উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। তিনি ১৯২০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ পাশ করেন।
কর্মজীবনে তিনি প্রতিষ্ঠালগ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও বাণিজ্য বিভাগে অধ্যাপনার কর্মে নিয়োজিত ছিলেন। অধ্যাপনারত থাকাকালে প্রবল প্রত্যয় নিয়ে আইনের ব্যবসায় স্বাধীন পেশা গ্রহণের উদ্দেশ্যে তিনি বিএল (১৯২২) এমএল (১৯৩১) পরীক্ষা কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে তিনিই প্রথম এমএল ডিগ্রি লাভ করেন। একটি আদর্শিক কারণে অধ্যাপনা ত্যাগ করে প্রথমে ঢাকা জজ কোর্ট এবং পরে ১৯৩২ সালে যখন ব্রিটিশ ভারতের প্রাচীনতম হাইকোর্ট কলকাতা হাইকোর্ট বারে আইন ব্যবসায় যোগ দেন। তখন তিনি কঠোর পরিশ্রম করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ‘The History of Development of Muslim Law in British India’ বিষয়ে এক জ্ঞানগর্ভ লেকচার প্রণয়ন করেছিলেন। যা Tagore Law Lecture নামে পরিচিত।
উল্লেখ্য, বিশিষ্ট আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ প্রশান্তকুমার ঠাকুর (১৮০১-১৮৮৬)-এর নামে ১৮৬৮ সাল থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বার্ষিক ল’ সিরিজের এই বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হয়। এই লেকচারসমূহ আইনজীবী, বিচারক ও আইন শিক্ষার্থীদের আইনের ব্যাখ্যার সূত্র হিসেবে উদ্ধৃত হয়।
আবুল হুসেন আইন নিয়ে ব্যাপক অধ্যয়ন করেছিলেন। তিনি ডিএল ডিগ্রির থিসিস তৈরি করেছিলেন। আইনকে সাধারণ মানুষের কল্যাণের কাজে লাগানোর জন্য বিভিন্ন আইন কানুন সম্বন্ধে তিনি ব্যাপক গবেষণা করেছেন। পুরোনো ও অবৈজ্ঞানিক সেকেলে আইনগুলির সংস্কার করে ভারতবর্ষের বিশেষ করে বাংলার আইনশাস্ত্রকে আধুনিক বৈজ্ঞানিক রূপ দেবেন এই তাঁর একটি বড় স্বপ্ন ছিল। প্রচলিত আইনের সংস্কারের জন্য অনেক জনহিতকর গুরুত্বপূর্ণ আইনের খসড়া তৈরি করেছেন, তার মধ্যে বেঙ্গল ওয়াক্ফ আইন অন্যতম। এই আইনের খসড়া প্রণয়ন তাঁর অমরকীর্তি।
১৯৩২ সালে তিনি কলকাতা হাইকোর্ট বারে খ্যাতিমান আইনজীবী হিসেবে যোগ দেন। এই সময়ই তিনি ওয়াক্ফ আইনের মূল খসড়ার বিধিবিধান চূড়ান্ত করেন। তাঁর প্রণীত ওয়াক্ফ আইনের মূল খসড়া বাংলার বিধানসভায় (Bengal Legislative Assembly) গৃহীত হলে ১৯৩৪ সালের ১৯শে জুলাই আইনে পরিণত হয়। ১৯৩৪ সালের The Bengal Wakf Act, 1934 (Act No.13 of 1934) শীর্ষক আইনের মাধ্যমেই তৎকালীন বাংলার নিবন্ধিত ওয়াকফ্ প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পত্তি মুসলিম আইন মোতাবেক দেখাশোনা করা হতো এবং এ জন্য একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি করা হয়েছিল। এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্মকর্তা ছিলেন ওয়াক্ফ কমিশনার। ব্রিটিশ আমলে ওয়াকফ কমিনারের দপ্তর ছিল কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিং-এ। এ প্রতিষ্ঠানই দেশভাগের পর ঢাকায় সরিয়ে আনা হয় এবং বর্তমানে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীন ওয়াক্ফ অফিসের সদর দপ্তর ঢাকায় নিউ ইস্কাটন রোডে অবস্থিত।
এ প্রসঙ্গে ওয়াক্ফ আইন সম্বন্ধে জানতে হলে কয়েকটি কথা বলতে হয়। ওয়াক্ফ মুসলিম আইনে একটি ব্যাপক ও বিস্তৃত বিষয়। এ প্রত্যয়টি মুসলমানদের প্রপার্টির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পৃথিবীর বহুদেশে অনেক আগেই ওয়াক্ফ সম্পত্তি রক্ষণবেক্ষণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে মানব কল্যাণে বহুমুখী কাজ করে এসেছিল। আরব বিশ্বে ইসলামি রাষ্ট্র গঠনের শুরু থেকেই ওয়াক্ফ ব্যবস্থা স্বীকৃত। কিন্তু উপমহাদেশে ওয়াক্ফ আইন ব্যবস্থার চালুর ইতিহাস বেশি দিন আগের নয়। ১৯১৩ সালের ৭ই মার্চ The Mussalman wakf validating Act, 1913 (Act No. vi of 1913) জারিকৃত আইনের মাধ্যমে এ ব্যবস্থা চালু হয়। তাঁর আগে উপমহাদেশে ওয়াক্ফ ব্যবস্থা ছিল না।
এই নিয়ে সমকালে কয়েকটি মোকদ্দমা উদ্ভুত হয়েছিল- যা ইংল্যান্ডের প্রিভিকাউন্সিল পর্যন্ত গিয়েছিল। তন্মধ্যে একটি সুপরিচিত ওয়াক্ফ মহসিন ফান্ড (১৮০৬)। হাজি মুহম্মদ মহসিন (১৭৩২-১৮১২) ১৮০৬ সালে হুগলির ইমামবাড়ার ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের ব্যয় সংকুলনের উদ্দেশ্য তাঁর সমুদয় ভূসম্পত্তির আয় দান করেন। তাঁর পরিবারের এক সদস্য এ ওয়াক্ফের আইনগত বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করেন। ফলে ১৮১০ সালে সরকার ১৯নং আদেশবলে সদর দেওয়ানী আদালতে মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তা সরকারি অধিকারে থাকে। ১৮৩৪ সাল পর্যন্ত এই দানপত্র ব্যবহারের ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয় তৎকালীন ব্রিটিশ শাসকেরা। ১৮৩৫ সালে মামলাটি প্রিভিকাউন্সিলে গেলে প্রিভিকাউন্সিল পরলোকগত দানকারীর পক্ষে এক যুগান্তকারী রায় দেয়।
পক্ষান্তরে ১৮৯৪ সালে ‘আবুল ফাতা মোহাম্মদ বনাম রসময়’ শীর্ষক অপর একটি মামলায় প্রিভিকাউন্সিল ওয়াক্ফকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়। এই রায় নিয়ে সমকালে মুসলমানদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হলে ক্ষুব্ধ মুসলমানদের দাবির প্রেক্ষিতে ব্রিটিশ সরকার মুসলমান ওয়াক্ফ বৈধকরণ আইন, ১৯১৩ জারি করেন। এর ফলে প্রিভিকাউন্সিলের রায়টি অপসারিত হয়। সময়ে সময়ে একাধিকবার এই ওয়াকফ আইনের স্পষ্টীকরণ ও সংশোধনী এসেছে।
পরবর্তীকালে The Bengal Wakf Act, 1934 দ্বারা The Mussalman wakf validating Act, 1913 শীর্ষক আইনের মাধ্যমে ওয়াক্ফ বৈধকরণ ভূসম্পত্তিগুলোর ব্যবস্থাপনা কাঠামোর ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন ঘটানো হয়েছিল। বিশেষ করে ব্রিটিশ ভারতের অবিভক্ত বাংলার ওয়াক্ফ এস্টেটগুলো এই আইনের মাধ্যমে মুসলিম আইন অনুযায়ী পরিচালিত হয়। এ আইনে সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। The Bengal Wakf Act, 1934 দ্বারা সমকালে নিবন্ধিত ওয়াক্ফগুলো বহু বছর সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়েছে। সঙ্গত কারণেই এদেশে ওয়াকফ আইনের কথা এলে আবুল হুসেনের নামটি এসে যায়।
যুগের চাহিদার প্রেক্ষিতে ওয়াক্ফ আইনের বিবর্তন হয়েছে, কিন্তু এ আইনের সঙ্গে আবুল হুসেনের নাম ওতপ্রোতভাবে জাড়িয়ে আছে। বর্তমানে ওয়াক্ফ আইনের বিবর্তনের ধারাটি হলো ১৯১৩ সালে ওয়াক্ফ ভেলেডেটিং অ্যাক্ট; ১৯৩০ সালে ওয়াক্ফ ভেলেডেটিং অ্যাক্ট সংশোধন, ১৯৩৪ সালে বঙ্গীয় ওয়াক্ফ আইন, ১৯৬২ সালের ওয়াক্ফ অধ্যাদেশ; ২০১৩ সালের ওয়াক্ফ অধ্যাদেশ সংশোধন এবং ২০১৩ সালের ওয়াক্ফ (সম্পত্তি হস্তান্তর ও উন্নয়ন) বিশেষ বিধান আইন প্রণয়ন ও জারিকরণ। ওয়াকফ আইনের এই বিবর্তন সত্ত্বেও অবিভক্ত বাংলার ওয়াক্ফ আইনের মূল খসড়া প্রণয়ন নেপথ্যে আবুল হুসেন অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। বর্তমানে যুগের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এ আইন সংশোধন, পরিবর্ধনসহ নতুন আইন প্রণয়ন হলেও উক্ত আইনের নেপথ্যে তাঁর ভূমিকা অপরিসীম।
আবুল হুসেন স্বল্প আয়ুর জীবন পেয়েছিলেন। এই স্বল্প আয়ুর কর্মময় জীবনে তিনি আইন অঙ্গনে প্রতিভার ছাপ রেখেছিলেন। তিনি আরও কয়েকটি আইনের প্রাথমিক খসড়া তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। ভালো আইন তৈরি করাও ভালো একটা কাজ এই ব্রত নিয়ে তিনি আইনচর্চায় এসেছিলেন। কিন্তু তাঁর শুধু আইনাঙ্গনেই বিচরণ ছিল তা নয়, তিনি অর্থনীতিতেও অবদান রেখেছেন। এছাড়া তিনি সমকালে নানা সামাজিক দায়িত্ব পালন করেছেন। এসব কারণে তাঁর জীবন ও জীবিকা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছিল। ১৯২৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা কলেজের পরিমণ্ডলে প্রগতিশীলপন্থি কয়েকজন শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে মুসলিম সাহিত্য সমাজ নামে ঢাকা শহরে যে একটি সাহিত্য প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল তাঁর মুখ্য সমন্বয়ক তিনিই ছিলেন। আদতে এই প্রতিষ্ঠানের নামের সঙ্গে মুসলিম শব্দটি থাকলেও এই প্রতিষ্ঠানে বহু হিন্দু লেখক, অধ্যাপক যুক্ত ছিলেন।
সমকালে পূর্ববাংলার মুসলমান সমাজে এরকম একটি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন ছিল। মুসলিম সাহিত্য সমাজের মূল মন্ত্র ছিল ‘বুদ্ধির মুক্তি’ অর্থাৎ বিচার বুদ্ধিকে অন্ধ-সংস্কার ও শাস্ত্রানুগত্য থেকে মুক্তি দান। এই প্রতিষ্ঠানের প্রচেষ্টায় পূর্ব বাংলার পশ্চাৎপদ বাঙালির মুসলমান সমাজে জাগরণের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পেরেছিল। এ প্রতিষ্ঠানের মুখপত্র ছিল শিখা নামক বার্ষিক পত্রিকা। মুসলিম সাহিত্য সমাজ পরিচালনার কালে আবুল হুসেন ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও বাণিজ্য বিভাগের তরুণ অধ্যাপক এবং মুসলিম হলের (বর্তমানে স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হল) হাউস টিউটর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিমণ্ডলে সমকালে বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বাপেক্ষা বিজ্ঞান মনস্ক ও প্রগতিবাদী চিন্তাবিদ। মসুলিম সাহিত্য সমাজের আমন্ত্রণেই কাজী নজরুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসে অতিথি হিসেবে কয়েকবার এসেছিলেন। এই প্রতিষ্ঠানের সংবাদে তিনি উচ্ছ্বসিত ও প্রীত হয়েছিলেন। সমকালের ঢাকার রক্ষণশীল মুসলিম সমাজ মুসলিম সাহিত্য সমাজ নামক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনাকারীদের ভালো চোখে গ্রহণ করেননি। তাঁদের শ্লোগান ‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব’ এই আপ্ত বাক্যের সমালোচনা করেছেন তৎকালীন রক্ষণশীল ঢাকার মুসলিম সমাজ। এ কারণে আবুল হুসেনের উপর চাপ এসেছিল একাধিকবার এবং তিনি নিগ্রহের ও নির্যাতনের স্বীকার হয়েছিলেন।
এই প্রতিকূল পরিবেশ ও বিপরীত স্রোতকে মোকাবেলা করে মুসলিম সাহিত্য সমাজ প্রায় এক দশক টিকতে পেরেছিল। ১৯৩২ সালে আবুল হুসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে উপমহাদেশের প্রাচীনতম হাইকোর্ট কলকাতা হইকোর্টে বারে আইনজীবী হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। এরপর মুসলিম সাহিত্য সমাজ কয়েক বছর চলার পর বন্ধ হয়ে যায়। তাঁর মতো অভিমানী প্রতিবাদী সাহসী বুদ্ধিজীবী আজকের সমাজে দুর্লভ। তিনি পরের সন্তুষ্টির জন্য আত্মসম্মান বিসর্জন দেননি। একটি আদর্শিক কারণে তিনি যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন তার তুলনা আজকের সমাজে নজির খুবই কম। বর্তমানে সমাজে তার মতো মনীষা সম্পন্ন ব্যক্তি খুবই প্রয়োজন।
আবুল হুসেন সমকালীন পূর্ব বাংলার সমাজ বিনির্মাণের ক্ষেত্রে যে প্রগতিশীল ভূমিকা রেখেছিলেন সে চেতনা আজও বহমান। পূর্ব বাংলার সমাজকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আধুনিক শিক্ষা ও জ্ঞানের আলো প্রসারের লক্ষ্যে তিনি লেখনী ধারণ করেছিলেন। মননশীল প্রাবন্ধিক হিসেবে তিনি সারা বাংলায় খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তিনি কৃষক সমাজের দুঃখ-দুর্দশার মুক্তির পথ ও কৃষির উন্নতি নির্দেশ করেন তাঁর ‘বাংলার বলশী’ গ্রন্থের প্রবন্ধসমূহে। রুশবিপ্লবের প্রেরণা দেশবিদেশের অনেক লেখকের মতো তাঁকেও ব্যাপকভাবে অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। তিনি রুশবিপ্লবের প্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে ‘কৃষকের আর্তনাদ’, ‘কৃষকের দুর্দশা’, ও ‘কৃষি বিপ্লবের সূচনা’ প্রভৃতি প্রবন্ধ রচনা করেনা। তিনি পাঠ্য গ্রন্থের সংস্কার করতে চেয়েছিলেন। এজন্য তিনি কিছু পাঠ্য বই লিখেছিলেন। তাঁর সমগ্র লেখা বাংলা একাডেমি থেকে ‘আবুল হুসেনের রচনাবলী’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে।
আবুল হুসেনের জীবন ও কর্ম এবং তাঁর সাধনা; তাঁর স্বপ্ন এবং সুদূর প্রসারী দৃষ্টি আজকের বাংলাদেশ রাষ্ট্র এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রেরণা হিসেবে কাজ করছে। তিনি সমকালে যে রকম প্রাসঙ্গিক ছিলেন, আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। বাঙালি সমাজ প্রাগ্রসরমানতার ক্ষেত্রে আবুল হুসেনের অবদান সব সময় শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
লেখক: গবেষক