মেহেদী হাসান মন্ডল: যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মোঃ সাইফুল ইসলাম রচিত ‘প্রবেশন ও প্যারোল আইন’ বইটি গত সপ্তাহে হাতে পেয়েছি। তিনি ইতোপূর্বে প্রবেশন নিয়ে চমৎকার ও অনুসরণীয় কিছু আদেশ দিয়ে সফল হওয়ায় অত্যন্ত আগ্রহের সাথে বইটি পড়লাম। পড়া শেষে মনে হয়েছে যে সময়টুকু নিয়ে বইটি পড়েছি তার সদ্ব্যবহার হয়েছে।
কারাদণ্ডের বিকল্প হিসেবে দণ্ডিতের প্রবেশন সুবিধা সারাবিশ্বে অপরাধী সংশোধনের একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি হলেও আমাদের দেশে এর প্রয়োগ উল্লেখযোগ্য ছিল না। অথচ বাংলাদেশে এর আইনি কাঠামো দেওয়া The Probation of Offenders Ordinance, 1960 আইনটিও ৬০ বছরের অধিক পুরনো। লঘু অপরাধের অপরাধীরা যাতে সংশোধিত হয়ে সমাজের নিজ পরিমণ্ডলে মুক্ত ধারার আলোয় আলোকিত হতে পারে সেই লক্ষ্যে ২০১৯ সালে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ থেকে সার্কুলার প্রকাশ করার মাধ্যমে এই আইনটি প্রয়োগের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
তা সত্ত্বেও এই আইনের প্রয়োগের ব্যাপকতা অতটা আশানুরূপ নয়। এর অন্যতম প্রধান কারণ এই আইনটি সম্পর্কে অনেকেরই স্পষ্ট ধারণা নেই। তাছাড়া সংসদ কর্তৃক পেশকৃত আইন পড়া আর সেই আইন প্রয়োগের পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া এক কথা নয়। বইটিতে এই আইনের প্রায়োগিক দিক সম্পর্কে অত্যন্ত সহজ ও সাবলীলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
আমাদের মাঝে শুধু Probation শব্দটি পরিচিতি লাভ করলেও The Probation of Offenders Ordinance, 1960 আসামীকে প্রবেশনের সুবিধা দেয়া ছাড়াও Discharge ও Conditional Discharge এর কথা বলেছে। লেখক এই বইয়ের মাধ্যমে সেগুলোকেও পরিচিত করানোর চেষ্টা করেছেন।
কেন এই তিনটি বিষয় আসামী ও রাষ্ট্র উভয়ের দিক থেকেই কল্যাণকর তা এই বইয়ে সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তাই এই বইটি পড়লে আসামীপক্ষ যেমন এর সুবিধা গ্রহণে আগ্রহী হবে তেমন বিচারকগণও দণ্ডিত আসামীকে এর সুবিধা দিতে উৎসাহ বোধ করবেন মর্মে আমার বিশ্বাস। আবার এই সুবিধাগুলো দিতে গিয়ে ফরিয়াদী/বাদীপক্ষের দিকটি যেন একেবারেই উপেক্ষা করা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে লেখক বিচারকদের করণীয় ব্যাপারে তার অভিজ্ঞতা ও অভিমত উপস্থাপন করেছেন।
The Probation of Offenders Ordinance, 1960 আইন সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা নিতে চাইলে যেমন এই বইটি অতুলনীয় তেমনি প্রবেশন নিয়ে কেউ গভীরভাবে পড়াশোনা করতে চাইলে তার জন্যও এই বইটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কারণ বইটিতে আমাদের দেশসহ বিভিন্ন দেশের উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত ও প্রবেশন সংক্রান্ত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক instrument নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে; বিধায় বইটি সকল শ্রেণির পাঠকেরই তৃষ্ণা মেটাবে বলে আমার মনে হয়েছে।
প্রবেশন সম্পর্কে আমাদের মধ্যে কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত আছে; পূর্বে দন্ডিত হলে তাকে প্রবেশন দেয়ার সুযোগ নেই এই ধারণাটি সেগুলোর মধ্যে একটি। এই বইটি উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের আলোকে সেই ভুল ধারণা সহ অন্যান্য ভুল ধারণা ভেঙে দিবে।
আবার প্যারোলের আইনী কাঠামো কী, এর অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ কে, এর শর্ত কী, এর মেয়াদ কতদিন তা নিয়ে এই বইয়ের পরিস্কার ধারণা দেয়া হয়েছে। প্যারোলের সুবিধা ও প্রয়োজনীয়তা নিয়েও বইটিতে চমৎকার আলোচনা আছে।
বইটিতে সাময়িক প্যারোল নিয়ে বিশদ আলোচনা করে এর আবেদন ও প্রয়োগ পদ্ধতি সন্নিবেশ করা হলেও স্থায়ী প্যারোল নিয়ে অনুরূপ আলোচনা ও প্রয়োগ পদ্ধতি এগুলে পাঠক উপকৃত হত। আশা করি পরবর্তী সংস্করণে লেখক বিষয়টিতে নজর দিবেন।
এতদসত্ত্বেও বইটি বাংলাদেশের বিচারাঙ্গনে The Probation of Offenders Act, 1960 এর প্রয়োগকে সহজ ও ত্বরান্বিত করবে বলে আমার বিশ্বাস। বইটির একমাত্র পরিবেশক আমিন বুক হাউজ, ঢাকা এবং অনলাইনে বিক্রয় করছে Mbb Online Marketing.
লেখক: অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, দিনাজপুর।