প্রয়াত জ্যেষ্ঠ অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদারের ৮৪তম জন্মদিনের অনুষ্ঠান
প্রয়াত জ্যেষ্ঠ অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদারের ৮৪তম জন্মদিনের অনুষ্ঠান

অ্যাডভোকেট বাসেত মজুমদার আইনজীবীদেরও আইনজীবী: অ্যাটর্নি জেনারেল

প্রয়াত জ্যেষ্ঠ অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার আইনজীবীদেরও আইনজীবী বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির উত্তর হলে আয়োজিত আবদুল বাসেত মজুমদারের ৮৪তম জন্মদিনের অনুষ্ঠানে শনিবার (১ জানুয়ারি) তিনি এ মন্তব্য করেন।

অনুষ্ঠানে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, কেউ কেউ বলেন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার গরীবের আইনজীবী ছিলেন। তবে, আমি বলবো তিনি আইনজীবীদেরও আইনজীবী। এমন কোনো আইনজীবী নেই যিনি তার কাছ থেকে সাহায্য পাননি।

তিনি আরও বলেন, এখানে তার (বাসেত মজুমদারের) সন্তান রাজা আছেন, তিনি তার ছেলে হিসেবে যতটা না সহযোগিতা পেয়েছেন, আমার মনে হয় আমরা তারচেয়ে বেশি পেয়েছি।

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, কোনো মামলা যখন আদালতে আসতো, আমরা যদি বলতাম স্যার আপনাকে আমার এই মামলায় দাঁড়াতে হবে, তখনই বলতেন- ‘চলো দেখি কী হয়’। কখনো বলতো না আমরা পারবো না।

এ এম আমিন উদ্দিন আরও বলেন, আবদুল বাসেত মজুমদার কখনো কোনো আদালতের সঙ্গে বা আইনজীবীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেননি, রাগও করেননি। স্যারের (বাসেত মজুমদার) নিশ্চয় রাগ হতো, কিন্তু সব সহ্য করে যেতেন। খুব রাগ হলেও চুপ থাকতেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের এমন কোনো বার নেই যারা সহায়তা পায়নি। কোভিডের সময়ে আমাকে মাঝেমধ্যে ফোন দিতেন, বলতেন- ‘এখান থেকে ফোন করেছে, দেখোতো কী করা যায়’। দেশের প্রতিটি বারের আইনজীবীদের এভাবে তিনি সহায়তা করতেন। জীবনের উপার্জনের একটি অংশ অন্যের কল্যাণে ব্যয় করতেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ড. বশির আহমেদ। প্রধান অতিথি ছিলেন বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ (সিনিয়র) আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন।

অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা তারার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সবেক সম্পাদক ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. বদরুদ্দোজা বাদল, বারের সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট শেখ (এসকে) মো. মোর্শেদ, অ্যাডভোকেট রবিউল আলম বুদু, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুন নূর দুলাল, ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মো. মোখলেসুর রহমান বাদল, আবু সাঈদ সাগর, শাহ মঞ্জুরুল হক, মো. মোতাহার হোসেন (সাজু), ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ-আল মামুন, অ্যাডভোকেট জেসমিন সুলতানা, ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী শাহীন আরা, অ্যাডভোকেট মোল্লা আবু কাউসার প্রমুখ।

এ ছাড়াও আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদারের ছেলে ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সাইদ আহমেদ রাজা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বাসেত মজুমদার ছাড়াও সাবেক আইনমন্ত্রী ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু ও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহুবুবে আলমসহ অন্যান্যদের জন্যে দোয়া করা হয়।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার ইন্তেকাল করেন। রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

আব্দুল বাসেত মজুমদারের জন্ম ১৯৩৮ সালের ১ জানুয়ারি কুমিল্লার লাকসামে। ১৯৬৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। এরপর ১৯৬৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তিনি হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আব্দুল বাসেত মজুমদার বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এবং সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

আব্দুল বাসেত মজুমদার দুস্থ আইনজীবীদের জন্য নিজের নামে ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছিলেন। দেশের বিভিন্ন আইনজীবী সমিতিতে এ ফান্ড থেকে অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়।