গ্রেপ্তার আইনজীবী জাহিদ চৌধুরী
গ্রেপ্তার আইনজীবী জাহিদ চৌধুরী

স্কুলছাত্রীকে ১৭ দিন আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ, আইনজীবী গ্রেপ্তার

কুমিল্লায় ইউটিউব সেলিব্রেটি বানানোর প্রলোভনে দশম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে ১৭ দিন আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগে এক আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

র‌্যাব-১১, সিপিসি-২ কুমিল্লা ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

এর আগে সোমবার রাতে নগরীর মধ্যম আশ্রাফপুর এলাকার একটি আবাসিক ভবনের ৭ম তলার ফ্ল্যাট থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ভিকটিম ছাত্রীসহ তিনজনকে উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তার আইনজীবী জাহিদ চৌধুরী দেবিদ্বার উপজেলার পূর্ব ফতেহাবাদের বাসিন্দা। তিনি কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট শরীফুল ইসলাম।

র‌্যাব জানায়, দীর্ঘ দিন ধরে জাহিদ নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে অল্প বয়সি সুন্দরীদের এনে ইউটিউবে সেলিব্রেটি বানানোর নামে নাটক ও টিকটক করতো। পরে তাদের ধর্ষণসহ ভিডিও করে রাখতো। এরই মধ্যে ওই স্কুলছাত্রীর (১৫) পরিবারের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সে সূত্র ধরে ওই আইনজীবী স্কুলছাত্রী ও তার ভাইয়ের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেন। পরে তাদের ইউটিউব সেলিব্রেটি বানিয়ে অর্থ আয়ের লোভ দেখান। কয়েকটি গান ও নাটক রেকর্ড করে ইউটিউবে ছাড়েন।

র‌্যাব আরও জানায়, গত বছরের ২৫ নভেম্বর আইনজীবী ওই ছাত্রীকে নিয়ে নগরীর ধর্মসাগরপাড় এলাকায় ঘুরতে যান। সেখান থেকে একপর্যায়ে ওই আইনজীবী ভিকটিমকে ফ্লাটে নিয়ে যায়। সেখানে ইউটিউব সেলিব্রেটি বানানোসহ নানা প্রলোভনে ভিকটিমকে একাধিকবার ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ করে রাখে। এরপর ভয় দেখায় যেন কাউকে না বলে এ ঘটনা। পরে ভিকটিমের পরিবার গ্রামে চলে গেলেও ওই আইনজীবী ভিকটিমের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। গত ১৭ ডিসেম্বর ওই ছাত্রী তার ভাইকে নিয়ে আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করতে আসলে তাদের আটকে রাখা হয়।

মেজর মোহাম্মদ সাকিব জানান, ওই স্কুল ছাত্রীর মায়ের অভিযোগ পাওয়ার পর সোমবার দিবাগত রাতে আইনজীবী জাহিদ চৌধুরীকে নগরীর আশ্রাফপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং স্কুলছাত্রী, তার ভাই ও এক যুবতীকে উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই আইনজীবী স্কুলছাত্রীকে ইউটিউব সেলিব্রেটি করা ও অধিক টাকা উপার্জনসহ ভালো চাকরি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করা এবং তার নামে একটি ফ্ল্যাট কিনে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে ধর্ষণ করে বলে স্বীকার করেছে। এ ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইউটিউবের মাধ্যমে টাকা উপার্জনের বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দিয়েও তিনি বিভিন্ন অনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন বলেও স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় জাহিদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেলার সদর দক্ষিণ মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ভিকটিমের মা বাদী হয়ে মামলা করেছেন।

কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট শরিফুল ইসলাম জানান, আইনজীবী জাহিদ চৌধুরীকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি জেনেছি। আইন সবার জন্য সমান। সমিতির পরবর্তী সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে। অপরাধের প্রমাণ মিললে তার বারের সদস্য পদ বাতিল করা হবে।

সদর দক্ষিণ মডেল থানার ভারপ্রাপ্তর কর্মকর্তা (ওসি) দেবাশীষ চৌধুরী জানান, সন্ধ্যায় র‌্যাব ওই আইনজীবীকে থানায় হস্তান্তর করেছে। বুধবার (আজ, ৫ জানুয়ারি) তাকে আদালতে তোলা হবে।

সূত্র- সমকাল